হুগলি, ২৫ ফেব্রুয়ারি:- দু’জনেই শাসক দলের প্রতীকে জিতে পুরপ্রধান হয়ে পুরসভার দায়িত্ব সামলেছেন। রাজনীতির প্যাঁচ পয়জারে এবারের পুরভোটে তৃণমূল দু’জনকেই টিকিট দেয়নি। শাসক দলে পাত্তা না পেয়ে একজন নির্দল ও অন্যজন কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন। তাতেই জমে উঠেছে উত্তরপাড়া কোতরং ও কোন্নগর পুরসভার ভোটের লড়াই। ভোট কাটাকাটির পুরনো অঙ্কে ভালো ফলের আশায় বুক বাঁধছে বিরোধীরা। এবারে তৃণমূল থেকে টিকিট দেওয়া হয়নি কোন্নগর পুরসভার বিদায়ী পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় কে।দু’বারের পুরপ্রধান ও পাঁচ বারের কাউন্সিলর রাতারাতি কংগ্রেসে যোগ দিতেই ৮ নম্বর ওয়ার্ডে হাত চিহ্নের প্রতীকে প্রার্থী হন বাপ্পা।অন্যদিকে উত্তরপাড়া কোতরং পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা উপ পুরপ্রশাসক পিনাকী ধামালীর ভাগ্যে শিকে না ছেড়ায় তিনি নিজের ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোটের ময়দানে নেমেছেন।
যদিও নির্দল বা বিরোধীদের পাত্তা দিতে নারাজ তৃণমূল। ২০টি ওয়ার্ড নিয়ে কোন্নগর পুরসভার মধ্যে গতবার তৃণমূল ১১,কংগ্রেস ৫ এবং সিপিএম ৪টি আসনে জিতে ছিল।যদিও লোকসভা ভোটের পরে একজন সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেয়।গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটেও কোন্নগর পুরসভায় তৃণমূলের লিড ছিল।বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাসের পরেই কোন্নগরের পুরপ্রশাসকের পদ থেকে বাপ্পাদিত্য কে সড়িয়ে দিতেই দলের অন্দরে গোল বাধে।কিন্তু সামনে পুরভোটের কথা ভেবে কোন্দল মাথাচারা দেয়নি।কিন্তু প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর বাপ্পা সহ বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের টিকিট না পাওয়ায় দলীয় কোন্দল সামনে আসে।মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ৮নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হন বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায়।এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী দাঁড়িয়ে যেতেই চাপ বেড়েছে শাসক দলের মধ্যে।বিদায়ী তৃণমূলের পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস প্রার্থী বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, বাম জমানা থেকে ভোটে জিতে আসছি।দু’বার পুরপ্রধান থাকার সুবাদে আমি স্বচ্ছ ভাবে বোর্ড চালিয়েছি।কিন্তু অঞ্জাত কারণে আমাকে টিকিট দেওয়া হল না।আমার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি।স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের দাবি কে মান্যতা দিয়েই আমি ভোটে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছি।কংগ্রেস নেতা তথা বিদায়ী কাউন্সিলর অধীর মুখোপাধ্যায় বলেন, আমাদের প্রার্থীরা চারদিকেই ভালো সাড়া পাচ্ছেন।
এবারে ভোটে কংগ্রসের ফল ভালো হবে।যদিও বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী শুভাশিষ চৌধুরী বলেন, দল তারুণ্যের উপর জোড় দিয়েছে।আমাদের মতো কর্মীদের ভোটে লড়াই করার সুযোগ পেয়েছে।আমরা নিশ্চিত দল একক ভাবে ক্ষমতায় এসে বোর্ড গঠন করবে।কোন্নগর শহর তৃণমূল কংগ্রসের প্রাক্তন সভাপতি তথা বিদায়ী কাউন্সিলর অসিত চক্রবর্তী বলেন, আমি দলের পুরনো কর্মী।আগেরবার আমি ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতলেও দল আমাকে এবারে ৫ নম্বর প্রার্থী করেছে।আমি বিশ্বাস করি আমি নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূত।তাই জেতা নিয়ে সংশয় নেই।তৃণমূল প্রার্থী স্বপন দাস বলেন, আমি বাম আমলে পুরসভার পুরপ্রধান ছিলাম।৯৫সাল থেকে টানা জিতছি।দল আমাকে পরে পুরপ্রধানের দায়িত্ব না দিলেও আমি দলেই থেকে গিয়েছি।যারা সুবিধাবাদি রাজনীতি করবে মানুষ তাদের জবাব দেবে। উত্তরপাড়া কোতরং পুরসভা তৃণমূলের দখলে থাকলেও ১২ জন নির্দল প্রার্থী তৃণমূলের জয়ের পথে অন্তরায় তৈরি করেছে।
এবারের বেশ কয়েকজন বিদায়ী কাউন্সিলর কে প্রার্থী করেনি তৃণমূল।তাতেই দলের প্রতি গোঁসা হয়ে প্রার্থী হয়েছেন বিদায়ী উপপুরপ্রশাসক পিনাকী ধামালী।নির্দল প্রার্থী নিয়ে পিনাকীর সাফাই কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা ছারাই প্রার্থী চাপিয়ে দেওয়া হয়।আমরা দেখতে পাই একই পরিবারের স্বামী স্ত্রী,আত্মীয়রা টিকিট পেয়েছেন।আমরা দল কে জানিয়ে ছিলাম।অপেক্ষাও করে ছিলাম।কিন্তু দলা আমাদের দাবি কে গ্রাহ্য করেনি।তাই বাধ্য হয়েই নির্দল হিসেবে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।প্রাক্তন কাউন্সিলর সত্যেন ঘোষ ও নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ছেন।সত্যেনের কথায় প্রথম তালিকায় নাম থাকা স্বত্বেও দ্বিতীয় তালিকায় নাম ছিল না।আমরা দলকে জানিয়ে ছিলাম।কাজ হয়নি বলেই নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছি।নির্দলের অভিযোগ উড়িয়ে বিদায়ী পুরপ্রশাসক তথা তৃণমূল দিলীপ যাদব বলেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রার্থী নির্বাচন করেছেন।যে কেউ নির্দলে দাঁড়াতেই পাড়েন তাদের নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।তবে উত্তরপাড়া কোতরং পুরসভায় তৃণমূলই ক্ষমতায় ফিরবে।