কলকাতা, ২৩ ফেব্রুয়ারি:- আনিস খান রহস্য মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্তে বদ্ধ পরিকর রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার পুনরায় জানিয়েছেন ওই ঘটনায় যুক্ত দোষীরা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না। দুই জন পুলিশ কর্মীকে ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে এখনো পর্যন্ত চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।আনিস খান রহস্য মৃত্যু কাণ্ডে মঙ্গলবার তিন জন পুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করেছিল স্বরাষ্ট্র দফতর। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী জানান আনিস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই পুলিশ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর বলেন, “আমতায় তদন্ত সবে শুরু হয়েছে। এখনও আমরা জানি না ঘটনাটা কী। স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিং টিম সেখানে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের জন্য গিয়েছিল, কিন্তু তাদের তা করতে দেওয়া হয়নি। পুলিশেরও দুজন গ্রেফতার হয়েছে, জানি না তারা দোষী প্রমাণিত হবেন কিনা”। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী জানান, যে হেতু আনিস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাই ওই দুই পুলিশ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তের নিরপেক্ষতার স্বার্থেই তা করা হয়েছে। যাতে ওই দুই পুলিশ কর্মী তদন্তে প্রভাব খাটাতে না পারেন।
ভবানী ভবনে ইতিমধ্যেই তিন পুলিশ কর্মী এবং এক জন সিভিক পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। সিট তদন্তে নেমেই আমতা থানার তিন পুলিশ কর্মী ও এক সিভিক ভলেন্টিয়ারকে সাসপেন্ড করে। যার মধ্যে ছিলেন এক জন এএসআই (নির্মল দাস), এক জন কনস্টেবল (জিতেন্দ্র হেমব্রম)। কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয় হোমগার্ড কাশীনাথ বেরাকে। তিন জনই শুক্রবার রাতে থানার খাতায় সই করে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সঙ্গে নিয়ে রাউন্ডে বেরিয়েছিলেন। সন্দেহবশত চারজনকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। যার মধ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে একজন হোমগার্ড ও সিভিক ভলেন্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া হোমগার্ডের নাম কাশীনাথ বেরা ও সিভিক ভলেন্টিয়ারের নাম প্রীতম ভট্টাচার্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করার পর তোলপাড় হয়ে যায় রাজ্য রাজনীতি। তখনই রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছেন, ‘প্রমাণের ভিত্তিতেই গ্রেফতার হয়েছে দু’জন।
এখনও বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ১৫ দিনের মধ্যে সমস্ত ঘটনার সত্যতা প্রকাশ্যে আনা হবে। শুধুমাত্র আমাদের উপর ভরসা করতে হবে। কিছু রাজনৈতিক দল সিটকে কাজে বাধা দিচ্ছে। আমাদের ময়নাতদন্ত করতে দেওয়া হয়নি। তাই অনুরোধ করব তদন্তে সহযোগীতা করা।’ আনিসের হত্যাকাণ্ড নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে তাঁর পরিবার। সেই সঙ্গে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন বামেরা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এদিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, সিবিআই তদন্তের দাবি রাজ্য সরকার মানবে না। উল্টে এ ব্যাপারে বরং বামেদের এক হাত নিয়েছেন মমতা। নন্দীগ্রাম থেকে শুরু করে বাম জমানায় একের পর এক ঘটনায় যে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি সেই প্রসঙ্গ তুলেছেন। সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ছবি খারাপ করার চেষ্টাও হচ্ছে। সেই সঙ্গে গোটা ঘটনাকে নিয়ে ধর্মীয় তথা সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের চেহারা দিতে যাচ্ছেন। যা রাজ্যের সার্বিক ভাবমূ্র্তির জন্য ভাল নয়। আন্দোলনের নামে রাস্তায় নেমে যেভাবে সাধারণ মানুষের অসুবিধা তৈরি করা হচ্ছে তারও নিন্দা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন ‘আমাকে আন্দোলন শেখাবেন না। আমি অনেক আন্দোলন করেই উঠে এসেছি।’