সুদীপ দাস, ১২ সেপ্টেম্বর:- “ভাঁড়া-যাত্রা”! উন্নয়নশীল পৃথিবীতে হারিয়ে যেতে বসা আরও একটা লোক-সংস্কৃতি। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় কয়েকশো বছর আগেও ছিলো এই ভাঁড় যাত্রা। শুধু গ্রাম বাংলা নয়, আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রদেশ তো বটেই, ভাঁড়ার শিল্পীদের চাহিদা ছিল পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। রাজ-রাজাদের আমলে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে প্রজাদের বিভিন্ন বিষয়ে অবগত করার সমসাময়িক এই ভাঁড়ার শিল্প। এই শিল্পে মূলতঃ শিল্পীরা আঞ্চলিক সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে পথ নাটিকা প্রদর্শনের মাধ্যমে সাধারন জনগনকে নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে সচেতন করে। যা “ভাঁড়-যাত্রা” নামে পরিচিত। ১৮ কিংবা ১৯ শতকে প্লেগ কিংবা কলেরা যখন মহামারির রূপ নেয়, তখনও ভাঁড়ার শিল্পীরা দিকে দিকে তাঁদের লোক-সংস্কৃতিয়ানার মধ্য দিয়ে মানুষকে সচেতন করেছে। কিন্তু মাইকের মত শব্দ যন্ত্র সহজলভ্য হওয়ার পর ঢ্যাঁড়ার মতই ভাঁড়-যাত্রা নিজের অস্তিত্ব রক্ষার সংকটে পরে। বর্তমানে ভাঁড়ার শিল্পীদের দেখা পাওয়াই ভার।
তবে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর আর পাঁচটি লোক-সংস্কৃতির মত নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে কিছুটা অক্সিজেন পেয়েছে ভাঁড়ার শিল্পীরাও। হুগলী জেলার সদর শহর চুঁচুড়ার পেয়ারাবাগান এলাকার ভাঁড়ার শিল্পী অশোক দাস ও কৌশিক গোস্বামী আজও ভাঁড়-যাত্রাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। বর্তমানের করোনা মহামারীতে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় তাঁরা তাঁদের শিল্পের মাধ্যমে মানুষকে সচেতনও করেছেন। অশোকবাবুর মতে নিয়ম মেনে কয়েকশো বছরের পুরনো ভাঁড়-যাত্রার কিছুটা বিবর্তন ঘটলেও উদ্দেশ্যকে প্রাধান্য দিয়ে আজও এই শিল্প সমাজের আনাচে-কানাচে বেঁচে রয়েছে। বিলুপ্তির পথে মানতে নারাজ কৌশিক গোস্বামীও। তিনি বলেন শহুরে মানুষরা না জানলে কি হবে আজও এই শিল্পে কিন্তু নব প্রজন্মরা আসছে। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোক-সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টায় আবারও প্রান ফিরে পেয়েছে “ভাঁড়-যাত্রা”।