এই মুহূর্তে জেলা

মানচিত্রে থাকলেও কয়েক কিমি অতল গ্রাসে , গঙ্গা ভাঙন নামক ত্রাসের কবলে বলাগর !


সুদীপ দাস, ২ সেপ্টেম্বর:- অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি! বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর দুই মেরুর বরফ গলে স্থলভাগ নিশ্চিহ্ন হওয়ার কথা নয়, কিংবা একই কারনে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অংশ জলে তলিয়ে যাওয়া নয়, প্রতি বছর বর্ষায় হুগলীর বলাগর ব্লকের চর খয়রামারী গঙ্গা ভাঙনের কবলে পরে। বিগত প্রায় চার দশক ধরে ভাঙন শুরু হলেও তা তীব্রতা এতটা ছিলো না। কিন্তু বিগত এক দশকে ভাঙনের ভয়াবহতা এতটাই যে গোটা খয়রামারি এলাকার চারভাগের তিনভাগই গঙ্গার তলায় চলে গেছে। যেখানে বসত ভিটের পাশাপাশি, বিঘার পর বিঘা চাষের জমি খেলার মাঠ, মন্দির দালান সবই রয়েছে। বর্তমানে চর খয়রামারী জি.এস.এফ.পি বিদ্যালয়কে গ্রাস করা শুরু করেছে মা গঙ্গা। ইতিমধ্যে সরকারী এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ও দূর্গা মন্দির অথৈ জলে প্রবেশ করেছে। আর এখন বিদ্যালের পূর্বমুখী বারান্দা ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। ভিটের তলার মাটি জলের গ্রাসে যেতে যেতেই একটা সময় বিজ্ঞানের নিয়ম মেনে সেই ঝুলন্ত অংশও অবগাহনের পথে যাত্রা করতে শুরু করবে।

ইতিমধ্যে সে যাত্রায় সমাপন হয়েছে ওই বিদ্যালয়েরই কিছু অংশ। শুধু বিদ্যালয় নয়, গোটা এলাকাটিতেই মানুষের বসবাস। গঙ্গার আগ্রাসন দেখে ভিটে ত্যাগ করা শুরু করেছে অনেকে। তবে মাটি তো আর নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই সেই মাটি মানচিত্র হারাচ্ছে। এলাকার বাসিন্দা গোপাল মন্ডলের বক্তব্য বিগত এক দশকে তাঁর ১৮ বিঘা চাষের জমি গঙ্গা গ্রাস করেছে। বাকি আছে আর বিঘা দুয়েকের মত। কিন্তু প্রতিদিন সেই জমির মাপও কমছে। আমি জানি অবিলম্বে সরকার হস্তক্ষেপ না করলে গোটা খয়রামারী জলের তলায় চলে যাবে। চর খয়রামারির এক কিশোর ছাত্র শুভদীপ মন্ডল বলে আমরা প্রতিদিন আতঙ্কে আছি। পড়াশুনার পাশাপাশি ভিটেমাটির কি হবে তাই ভাবছি। আতঙ্গে এখানকার পুরুষ-মহিলা সকলেই। এই বুঝি গঙ্গার জল তাঁরদের ভিটে ছুঁলো! এলাকারই এক সত্তোরোর্দ্ধ ব্যাক্তি লক্ষ্মীকান্ত ব্যাপারী বলেন বিগত বাম আমলে একবার ভাঙন প্রবন খয়রামারীর দুই কিলোমিটার বাঁশ দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়েছিলো।

কিন্তু বছর কয়েক পরেই সেই বাঁধ মা গঙ্গা গ্রাস করেছে। বর্তমান সরকারও একাধিকবার অস্থায়ীভাবে ভাঙন রোধের চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুই হয়নি। বস্তায় পাথর ফেলে স্কুলটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছিলো, কিন্তু সেই চেষ্টাও বিফলে গেছে। এখন আমি মনে করি এই কাজ একা রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয়, এখানে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার। কিন্তু আমাদের এখানকার সাংসদ বিজেপির হলেও লকেট চ্যাটার্জী আজ অবধি এই এলাকা পরিদর্শন করতে আসেন নি। বলাগরের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী বলেন চর খয়রামারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অন্যত্র স্থাপনের জন্য কথা চলছে। সেটা হয়ে যাবে। কিন্তু বলাগরের গঙ্গা ভাঙন জাতীয় বিপর্যয়, একা রাজ্যের পক্ষে এই ভয়াবহতা ঠেকানো সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের অবিলম্বে এগিয়ে আসা উচিত। কিন্তু আমরা বারংবার দরবার করলেও কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কোন সাড়া মেলেনি!