মহেশ্বর চক্রবর্তী , ১০ আগস্ট:- হুগলি জেলার খানাকুল ও গোঘাটের বন্যাকবলিত এলাকায় সাপ ও জোঁকের বিচরণ বাড়ায় আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বন্যা দুর্গতরা। এমনিতেই বন্যা জলে বন্দি হয়ে বাড়ির ছাদে বসবাস করতে হচ্ছে। তার ওপর দোসর সাপ ও জোঁক।বন্যা জলে ভেসে আসা বিভিন্ন জায়গা থেকে বিষধর সাপ বাড়ির মধ্যে আশ্রয় নিচ্ছে। আর তাতেই অসহায় মানুষের আতঙ্ক বাড়ছে। তবে এলাকার ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা জানিয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী বন্যা দেখা দেওয়ায় মূলত এসব প্রাণীর উপদ্রব বেড়েছে। সাবধানে এলাকার মানুষকে চলাফেরা ও বাড়ির ছাদে থাকতে হবে। খানাকুলের বন্যা কবলিত স্থানীয় মানুষ সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, অতিবৃষ্টির কারণে বাঁকুড়ার পাহাড়ী এলাকা থেকে নেমে আসা পাহাড়ি জল ও জলাধারের ছাড়া জলে প্রায় পনেরো থেকে কুড়িদিন ধরে হুগলির আরামবাগ মহকুমার খানাকুল, গোঘাট, আরামবাগ ও পুড়শুড়ার বেশ কয়েক জায়গা পুরোপুরি বন্যার কবলে।স্বাভাবিক ভাবেই বাঁকুড়া জেলা ও অন্যান্য জায়গা থেকে সাপ ভেসে ভেসে এই সব বন্যা কবলিত জায়গায় চলে এসেছে। নদীবাঁধ এলাকার গ্রামগুলোতে সাপ ও জোঁকের উপদ্রুব স্বাভাবিক ভাবেই বেড়েছে।
বন্যার জেড়ে বেশিভাগ মাটির বসতবাড়ি গুলির পড়ে যাওয়ায় সাপ সেখানে আশ্রয় নিচ্ছে। পাশাপাশি পাকার একতলায় জল হওয়ায় বাড়ির ছাদেও বিষধর সাপ দেখা যাচ্ছে। আর এতেই সাধারণ মানুষের ভয় বাড়ছে। বন্যায় এলাকার ঝোপ ও বনজঙ্গল তলিয়ে যাওয়ায় সাপের নিরাপদ আবাস নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে নানা প্রজাতির বিষধর ও নির্বিষ সাপ খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য লোকালয়ে চলে আসছে। খানাকুলের চিংড়া এলাকার বাসিন্দা অনিকেত ঘোষাল জানান, লোকালয়ে এসে সাপ কোথাও ডিম ফোটাচ্ছে কি না, সে চিন্তায় আমরা অস্থির। জলের স্রোতে ভেসে ভেসে বিষধর সাপ আমাদের বাড়ির দোতলার ছাদে চলে আসে। প্রায় কুড়ি ফুটের ওপর জলের স্রোতের মধ্যে কালো রঙের সাপ কিভাবে এলো প্রথমে বুঝতে পারা যায়নি। ত্রিপলের নিচে বিছানা পাতা ছিলো।তার তলায় আশ্রয় নেয়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় বাবা বিছানার মাদুর তুলতেই সাপের ভয়ংকর গর্জন শোনা যায়। টর্চের আলোয় পাহাড়ি সাপের গর্জন বাড়ে। নিচে থেকে লাঠি নিয়ে আসার আগেই সে জলের স্রোতে ভেসে যায়।
এরপর সাপের দংশন এড়াতে বাড়ির ছাদের চারিদিকে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো আছে।জানা গিয়েছে, চিংড়া, নতিবপুর, ধান্যনগরী,সালেপুরের মানিকপাঠ, শাওড়া ,বালি, জগৎপুর, ঠাকুরানীচক, শাবলসিংহপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঢোঁড়া, গোখরা সাপ, চিতি, ঢ্যাঁপনা, পাহাড়ি চিতি, চন্দ্রবোড়া, প্রচুর পরিমাণে দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি বন্যাকবলিত জোলা এলাকায় যেখানে জল দীর্ঘদিন জমে আছে সেখানে জোঁকের বিচরণও বেড়েছে। প্রশাসন সুত্রে জানা গিয়েছে, সাপের উপদ্রব এড়াতে বন্যাকবলিত এলাকার লোকজনকে সাবধানে থাকার জন্য সচেতন করা হচ্ছে। এছাড়াও যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তাহলে সহায়তা দিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার হাসপাতাল এবং ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমও তৎপর রয়েছে। বিশেষ করে খানাকুল হাসপাতাল ও আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে নাকি সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবমিলিয়ে আরামবাগের জলবন্দি মানুষ বন্যার পাশাপাশি সাপ ও জোঁকের আতঙ্কেও অসহায় ভাবে দিন কাটাচ্ছেন।