কলকাতা, ২৫ জুন:- জাল টিকা কাণ্ডে অভিযুক্ত ভুয়ো আইএএস আধিকারিক দেবাঞ্জন দেবকে নিয়ে ক্রমশ চাপ বাড়ছে শাসক দল তথা প্রশাসনের। তদন্তের জাল যত ছড়াচ্ছে তই অভিযুক্তের সঙ্গে শাসক দলের এমনকি প্রশাসনের ঘনিষ্ঠতার বিভিন্ন নজির সামনে চলে আসছে। ফলে অসস্তি বাড়ছে তৃণমূল শিবিরে। সরকার বা দলের সঙ্গে ওই ব্যক্তির কোনও সম্পর্ক নেই তা প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে শাসকদল। আর সরকারপক্ষ অস্বস্তিতে পড়েছে বলে চাপ বাড়াতে শুরু করেছে বিজেপি। ভুয়ো টিকাকরণ কাণ্ডের সিবিআই তদন্তের দাবিও হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কসবা থানায় তার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন ২ ব্যবসায়ী। তাঁদের মধ্যে একজন ৯০ লক্ষ টাকা ঠকেছেন, অন্যজনকে ফাঁদে ফেলে ২৬ লক্ষ টাকা হাতানো হয়েছে বলে কসবা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। জানা গিয়েছে, নির্মাণ ব্যবসায়ী ২ ব্যক্তির সঙ্গে দেবাঞ্জন দেব যোগাযোগ করেন।
নিজের পরিচয় দেন পুরসভার যুগ্ম কমিশনার হিসেবে। করোনা পর্বে যখন নির্মাণ কাজ বন্ধ তখন ওই নির্মাণ ব্যবসায়ীদের মাস্ক ও পিপিই কিটের ব্যবসায় নামার পরামর্শ দেন দেবাঞ্জন। এমন কী উৎপাদিত মাস্ক, পিপিই কিনে নেন তিনি। এভাবে ভরসা জেতার পর পুরসভার টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে ৯০ লক্ষ টাকা নেন ভুয়ো ওই আধিকারিক। অন্যজনের কাছ থেকেও ২৬ লক্ষ প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এদিকে ভ্যাকসিন কাণ্ডে অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবের বিরুদ্ধে নবান্নের প্যাড জাল করেও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য বিষয়ক দফতরের নামে বিজ্ঞপ্তি দেয় দেবাঞ্জন দেব। এভাবে নিজের নিরাপত্তায় অবসরপ্রাপ্ত বিএসএফ অফিসারকে নিয়োগ করে সে। প্রতারিত সেই অবসরপ্রাপ্ত বিএসএফ অফিসার একজন জাতীয় স্তরের প্রাক্তন সাঁতারু। জানা গিয়েছে মাসিক ৫২ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি বিলাসবহুল গাড়ি ভাড়া নিয়ে ঘুরে বেড়াত দেবাঞ্জন দেব।
৬ মাসের চুক্তিতে গাড়িটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রেও জাল কাগজপত্র দেয় দেবাঞ্জন। পুলিশে ধরা পড়ার পর থেকেই বেরিয়ে আসছে একের পর এক প্রতারণার ঘটনা। বাদ নেই রাজনীতিও। শুক্রবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আচমকা বিজেপি বিধায়ক-নেতাদের নিয়ে হাজির হন স্বাস্থ্য ভবনে। কেন এমন সারপ্রাইস ভিজিটের কারণ হিসেবে নন্দীগ্রামের বিধায়ক বলেন, আচমকা না এলে স্বাস্থ্য সচিবের দেখা পেতাম না। বিজেপি টিকা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে। এদিকে তালতলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুর্তির তলায় কলকাতা পুরসভার ফলকে সাংসদ, মেয়র, বিধায়কের পাশাপাশি ভুয়ো আইএএস দেবাঞ্জন দেবের নাম খোদাই করা আছে। প্রতারণার পর্দাফাঁস হতেই কালো কালিতে নাম মোছার চেষ্টা হয়েছে।
শুক্রবার পুরসভার অন্যতম প্রশাসক অতীন ঘোষ জানান, ওই অনুষ্ঠানে আদৌ তাঁরা যাননি। যে গ্রন্থাগারের উদ্যোগে মুর্তি প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল তারা স্থানীয় কাউন্সিলারকে আমন্ত্রণ করেননি। প্রতিবাদস্বরূপ মেয়র থেকে সাংসদ, বিধায়ক, কেউই যাননি। তবে বিতর্ক সামনে আসার পর ওই ফলক ভেঙ্গে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন অতীন ঘোষ। জানা গিয়েছে দেবাঞ্জন দেবের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন, বিধায়ক নয়না ব্যানার্জি, লাভলি মৈত্র। সেই মত বিকেলেই ওই ফলক ভেঙে ফেলা হয় পুরসভার তরফে।