কলকাতা, ১১ জুন:- প্রায় চার বছর বিজেপিতে কাটিয়ে ফের নিজের পুরনো দল তৃণমূলে ফিরে গেলেন মুকুল রায়। বিধানসভা ভোটের পর থেকে শুরু হওয়া জল্পনাকে সত্যি করে শুক্রবার ছেলে শুভ্রাংশুর হাত ধরে পুরনো দলে ফিরে গেলেন মুকুল। বিজেপিতে জাতীয় সহ সভাপতির মত গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেও কোনও দিন তেমন সক্রিয় হতে দেখা যায়নি তাঁকে। বরং সময়ে সময়ে তাঁর বেশ কিছু আচার আচরণ এবং ক্রিয়াকলাপ পুরনো দল সম্পর্কে নরম মনভাবের ইঙ্গিত দিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত। ভোটের পর থেকে তা আরও গভীর হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে মুকুল রায়ের প্রত্যাবর্তন সংক্রান্ত ঘটনা প্রবাহ ঘিরে দিনভর আলাপ আলোচনা থাকলেও চমক ছিল না বললেই চলে। তাই মুকুল রায় ছেড়ে যাওয়ার পরে বিজেপিরও তেমন হেলদোল নেই। তাঁর তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন যে সময়ের অপেক্ষা এমনটা তাঁরা আগেই জানতেন বলে কেউ প্রকাশ্যে কেউ একান্তে জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য নেতারা। তাত্পর্যপূর্ণ বিষয় হল যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উথ্থানের প্রতক্ষ্য বিরোধীতা করে দল ছেড়েছিলেন এদিন তাঁর হাতেই উত্তরীয় পড়ে দলে ফিরলেন মুকুল রায়। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও মুকুল ও শুভ্রাংশুকে দলে ফেরানোর গোটা পর্বটির পরিচালনা করেছেন অভিষেক।
বিধানসভা ভোটের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছিলেন মুকুল।তলায় তলায় যোগাযোগ রাখছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে।শাসক দলের সঙ্গে তাঁর এই ঘনিষ্ঠতা গেরুয়া শিবিরের চোখ এড়ায়নি। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁকে দলে রাখার চেষ্টার কোনও কসুর করা হয়নি গেরুয়া শিবিরের তরফে। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর বৃহস্পতিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একান্ত গোপনে বৈঠকে করে তৃণমূলে ফেরার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। এরপর সকালে যখন মকুল শিবিরের তরফে কৌশলে খবরটা সংবাদমাধ্যমে ভাসিয়ে দেওয়া হয় তখন তাঁকে বিরত করতে চান বিজেপির অনেক শীর্ষ নেতা। কেন তিনি বিজেপি ছাড়তে চান কথা বলে তার হদিশ পেতে চেয়েছেন তাঁরা। তবে মুকুল রায়ের তরফ থেকে কোনরকম ইতিবাচক সাড়া না মেলায় স্পষ্ট হয়ে যায় তিনি দল ছাড়ছেনই। ফলে বিষয়টি নিয়ে আর কোনওরকম ভাবে এগোতে চায়নি বিজেপি।সেই মতোই শুক্রবার দুপুরে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দেন সপুত্র মুকুল। এদিন পুনরায় তৃণমূলে যোগদান করে মুকুল রায় জানিয়েছেন, ‘এই পুরানো জায়গায় আসতে পেরে ভালো লাগছে। সবাই চেনা লোক, চেনা পরিবেশ। তৃণমূলে সকলেই চেনা। আপনাদের সবকিছুই লিখিত আকারে জানাব। এ দিন তৃণমূল ভবনে প্রায় একই সময়ে পৌঁছন মুকুল রায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও৷
একে একে আসেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো শীর্ষ নেতারা৷ মুখ্যমন্ত্রীর পিছন পিছনেই যোগদান মঞ্চে ওঠেন মুকুল রায়, শুভ্রাংশু ও অভিষেক। এরপরে মকুল ও শুভ্রাংশুর গলায় দলীয় উত্তরীয় পরিয়ে দেন অভিষেক। তৃণমূল ভবনে মুকুলকে পাশে বসিয়ে মমতা বলেন, ‘মুকুল আমাদের ঘরের ছেলে, ঘরে ফিরল৷ আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছি৷ আমার মনে হয় ও এবার মানসিক শান্তি পাবে৷ কারণ বিজেপি পার্টিতা করা যায় না৷’ একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, মুকুল রায়ের সঙ্গে কোনওদিনও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও ব্যক্তিগত মতবিরোধ ছিল না৷ দলে মুকুল রায় আগের মতোই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলেও এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী৷ তৃণমূল ভবনে গিয়ে প্রথমে একতলায় নিজের পুরনো ঘরেই বসেন মুকুল৷ এর পর দোতলায় গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন তিনি৷
মমতা, অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকও করেন মুকুল৷ ওই বৈঠকে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন বলে খবর৷ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সোনালি গুহ, সব্যসাচী দত্তের মতো বিজেপি-তে যোগ দেওয়া বেশ কয়েকজন নেতানেত্রীর তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রে খবর৷ তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে এদিন সন্ধ্যা বেলাতেই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মুকুল। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ত্যাগ করতে চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে চিঠিও দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। বিজেপি অবশ্য মুকুল রায়ের দল ত্যাগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের শীর্ষনেতারা এ নিয়ে বিশেষ কোন মন্তব্য করতে চাননি। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, মুকুল রায় দলে থাকাতে খুব বেশি লাভ হয়নি। সুতরাং চলে গেলে কি ক্ষতি হবে বলতে পারব না। যেহেতু মুকুল রায় কেন্দ্রীয় নেতা সেই কারণে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। অন্যদিকে সাংবাদিক বৈঠকে বুজেপির আরেক রাজ্য নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘মুকুল রায়কে শুভেচ্ছা। পুরনো দলে তাঁর নতুন ইনিংস শুরু হচ্ছে। আপনারা যেভাবে জেনেছিলেন উনি দল ছাড়ছেন দলও ঠিক একইভাবে জেনেছে।’