কলকাতা , ৭ মে:- বিজেপিকে যুদ্ধে জেতাতে পারেন নি । এবার কি ঘরে ফেরার পালা মুকুল রায়ের? সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহের ওপর নজর রেখে রাজনীতির কারবারীরা বলছেন একদা তৃণমূলের প্রধান সেনাপতি মুকুলের ‘ঘর ওয়াপসি’ এখন সময়ের অপেক্ষা।বিধানসভা ভোটের প্রচারের সময়েই তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুকুলের ওপর তার তেমন বিরাগ নেই। ভোটে বিপুল জয়ের পরে তিনি দল বদলুদের ফিরে আসার পথ পরিস্কার করেছেন খোলাখুলি তাদের স্বাগত জানিয়ে। বিধানসভা ভোটের সময়েও মুকুল রায়ের ‘গা ছাড়া’ হাবভাব জল্পনা আরও উস্কে দিয়েছে। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শুক্রবার বিধানসভায় তাংর গতিবিধি। এদিন প্রকাশ্যেই বিধানসভা কক্ষে শাসক দলের রাজ্য সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে তাঁকে। সেই সঙ্গে দলের বিধায়কদের এড়িয়ে তিনি গেছেন বিধানসভায় শাসক দলের মুখ্যসচেতকের ঘরে। সংক্ষিপ্ত বৈঠকও সেরেছেন সেখানে। শপথ শেষে বিধানসভা ভবন থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে ছেঁকে ধরে সাংবাদিকেরা। সেখানেই উড়ে এল প্রশ্ন, ফের কী তিনি ফিরছেন ঘাসফুলেই? বেশ মেপে তার জবাব দিলেন তিনি, ‘আমি আজ কিছু কথা বলব না। যেদিন বলার সেদিন সবাইকে ডেকে আমি বলব।’ ব্যাস এইটুকু কথাতেই বাংলার রাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়লো তীব্র জল্পনা।
রাজ্য বিধানসভায় বৃহস্পিতিবার থেকে শুরু হয়েছে নবনির্বাচিত বিধায়কদের শপথ বাক্য পাঠ করানোর পালা। সেই কাজ করছেন প্রোটেম স্পিকার সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এদিন ছিল শপথের দ্বিতীয় দিন। এদিনই বিধানসভায় এসেছিলেন মুকুল রায়। নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে জয়ি মুকুল রায় এদিন শপথ নিয়েই কথা বলেন সুব্রত বক্সির সঙ্গে। সেই ঘটনা অনেককেই অবাক করেছে। বিশেষ করে বিজেপির বিধায়কদের অনেকেই হতবাক হন। যদিও সেই সময় মুকুল জানিয়েছিলেন সেই কথা নিছকই সৌজন্য। কিন্তু চমক তখনও বাকি ছিল। এদিন বিজেপির বিধায়কদের একটি বৈঠক ছিল বিধানসভায়। গেরুয়া শিবিরের সেই পরিষদীয় বৈঠকে বিজেপির সব বিধায়কেরই থাকার কথা ছিল। সেই বৈঠকে থাকার কথা ছিল রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের। কিন্তু মুকুলবাবু সেই বৈঠকে যোগ দেওয়া তো দূরের কথা বিজেপির পরিষদীয় দলের কক্ষেও যাননি। বরঞ্চ সোজা চলে যান বিধানসভায় তৃণমূলের মুখ্যসচেতক নির্মল ঘোষের ঘরে। সেখানে সংক্ষিপ্ত বৈঠকও করেন তিনি। এরপরেই বেড়িয়ে যান।
এদিন কার্যত রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র জল্পনা ছড়িয়েছে যে মুকুল তৃণমূলে ফিরছেন খুব শীঘ্রই। আর একা অবশ্যই ফিরছেন না। সঙ্গে আনছেন বেশ কয়েকজন বিধায়ককে। এই সংখ্যাটা ঠিক কত সেই হিসাব মেলাতেই এখন কার্যত রাতের ঘুম ছুটেছে বিজেপির। কেউ বলছেন সংখ্যাটা ১০-১২, কেউ বলছেন ২০-২২ আবার কেউ বলছেন ৩১। সত্যিটা কোনটা সেটা ঘটনা না ঘটলে বোঝা মুশকিল। তবে মুকুল এদিন যেভাবে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘যেদিন বলার সেদিন সবাইকে ডেকে আমি বলব’, তাতে করে তাঁর দলবদলের সম্ভাবনা বঙ্গ রাজনীতিতে বেশ ভালোরকমই ডানা মেলেছে। অনেকেই মনে করছেন মুকুলের পাল্টি খাওয়া এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ভুললে চলবে না, ভোট প্রচার চলার সময়ে খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো নিজেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘শুভেন্দুর থেকে মুকুল অনেক ভালো।’ আর সেই ‘ভালো’ নিয়ে এখন জর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন আগামী দিনে জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে আবারও ম মতার পাশেই দেখা যাবে মুকুল রায়কে।