এই মুহূর্তে কলকাতা

প্রথম দফাতেই আকাশছোঁয়া ভোটের হার , শাসকের জন্য ‘অশনি সঙ্কেত’ ?

কলকাতা , ২৭ মার্চ:- শান্তিতেই মিটল রাজ্যের আট দফা ভোটের প্রথম পর্ব। এখানকার চিরায়ত নির্বাচনী হিংসার নজিরকে সামনে রেখে নিরাপত্তার ঘুঁটি সাজিয়েছিল কমিশন। আনুষ্ঠানিক ভাবে ভোট ঘোষণার আগে থেকেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে রাজ্যকে মুড়ে ফেলা হয়েছে। তাই প্রত্যাশা মতোই শনিবার পাঁচ জেলায় ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে কোন বড়সড় অভিযোগ সামনে আসেনি। বিক্ষিপ্ত ভাবে যে কয়েকটি ঘটনার খবর মিলেছে সব জায়গাতেই তৎপরতার সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে। এককথায় প্রথম দফায় ভোটের ব্যবস্থাপনা নিয়ে তৃনমূল- বিজেপি দুপক্ষই মোটের ওপর খুশি।তবে প্রথম দফায় ভোটে সব থেকে বেশি নজর কেড়েছে সাধারণ মানুষের অংশ গ্রহণ। চড়া রোদ ও গরম উপেক্ষা করে পাঁচ জেলার ৩০ বিধানসভার ভোটাররা যে সংখ্যায় নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন তাতে চমকিত রাজনৈতিক মহল। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে প্রথম দিনে সন্ধ্যা সাড়ে ছটা পর্যন্ত পাঁচ জেলায় গড়ে ভোট পড়েছে ৮২ শতাংশের বেশি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরেও অনেক বুথে ভোটারদের লম্বা লাইন ছিল। তাই চূড়ান্ত হিসাবে শতাংশের হারে ই ভি এম এ জমা হয় ভোটের সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে বলে কমিশনের কর্তাদের অভিমত। প্রথম দফার ভোটে বিপুল সংখ্যায় অংশ নেওয়ার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয়েই সন্তোষ প্রকাশ করেছে। সাধারণ ভোটদাতা দের সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা।

কিন্তু এই বিপুল হারে ভোট পড়ার মধ্যে শাসক দলের জন্য অশনি সঙ্কেত দেখছেন অনেকে। রাজনৈতিক মহলের মতে বেশি হারে ভোট সাধারণ ভাবে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ইঙ্গিত দেয়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে এই পাঁচ জেলার অধিকাংশ আসনেই বিজেপির থেকে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। দু বছরে সেই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া আরও জোরদার হয়ে ভোট শতাংশে প্রতিফলিত হচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। শনিবার সকাল থেকেই সব জেলায় ভোট কেন্দ্রের সামনে ছিল লম্বা লাইন। দিনভর সেই লাইন বজায় ছিল প্রায় সব যায়গাতেই। ভোটার দের বাধা দেওয়া বা গোলমালের অভিযোগ্ৰ ও প্রায় ছিলনা বললেই চলে। সন মিলিয়ে মানুষ উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়েছেন। কমিশনের হিসাবে এদিন বিকেল তিনটের সময়ই গড় ভোটের হার ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। অনেক জায়গাতেই ওই সময়ের মধ্যে ৯০-৯৫ শতাংশ ভোট পড়ার খবর মিলেছে। ভোট প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ তাদর পক্ষে ইতিবাচক হবে বলে বিজেপি – তৃণমূল, রাজ্যের মসনদ নিয়ে যুযুধান এই দুপক্ষের বরফেই দাবি করা হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে দলের নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, মোটের উপর রাজ্যে ভোট ভালো হয়েছে।যত বেশি ভোট পড়বে তা তাদের পক্ষে সুবিধাজনক হবে।

বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয় বর্গীয় জানান ৯০ শতাংশ কেন্দ্রে হিংসা মুক্ত নির্বাচন হয়েছে।এদিকে বাম কংগ্রেস জোটের তরফে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি উভয় দলের বিরুদ্ধে ভোটে সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ করা হয়েছে। সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব বলেন, কমিশন কোথাও তৃণমূল কোথাও বিজেপিকে সুবিধা করে দিচ্ছে। বলরামপুরে ও খেজুরিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী বিজেপিকে সহায়তা করেছে বলে তাঁর অভিযোগ। নির্বাচন কমিশনের কাছে এই মর্মে দলের তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে।কংগ্রেস নেতা ও রাজ্য সভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন যত গর্জে ছিল ততটা বর্ষায়নি। নির্বাচনে চূড়ান্ত নিয়ম লঙ্ঘন হচ্ছে। রাজ্যের পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী একযোগে আইন রক্ষার বদলে সন্ত্রাসে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।বিভিন্ন জায়গায় হাঙ্গামা হচ্ছে, সুশান্ত ঘোষের গাড়ি ভাঙা হচ্ছে, ইভিএম মেশিন খারাপ হচ্ছে, নানান রকমের অভিযোগ আসছে। আমি নির্বাচন মুখ্য কমিশনারের কাছে অনুরোধ করছি বাংলার। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে আবেদন করছি অবিলম্বে জেলার পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সক্রিয় হতে নির্দেশ দিন।”।