এই মুহূর্তে কলকাতা

রাজ্যের জঙ্গলমহলের পাঁচ জেলায় ৩০টি আসনে ভোট আগামীকাল।

কলকাতা , ২৬ মার্চ:- দীর্ঘ প্রতিক্ষার প্রহর গোণার অবসান ঘটিয়ে বঙ্গের ভোট রঙ্গের মঞ্চ থেকে যবনিকা উঠছে আজ শনিবার। এদিন থেকেই শুরু হচ্ছে রাজ্যে প্রায় এক মাস ধরে হতে চলা ৮ দফা বিধানসভা নির্বাচন। প্রথম দফায় রাজ্যের জঙ্গলমহলের পাঁচ জেলায় ৩০টি আসনে ভোট নেওয়া হবে। এককালে বাম ও পরবর্তীকালে অতিবাম রাজনীতির শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত এই সব আসন রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এই সব আসনের ফলাফল আগামী দিনে রাজ্যের শাসকের ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে সে ব্যপারে নিশ্চিত রাজনৈতিক মহল। এদিন যেসব আসনে ভোট হবে সেই আসন গুলি হল পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, বলরামপুর, বাঘমুণ্ডি, জয়পুর, পুরুলিয়া, মানবাজার, কাশিপুর, পারা, রঘুনাথপুর। পশ্চিম মেদিনীপুরের সান্তনা, কেশিয়ারি, খড়গপুর, গড়বেতা, শালবনি, মেদিনীপুর। বাঁকুড়ার শালতোড়া, ছাতনা, রানীবাঁধ, রাইপুর। পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর, কাঁথি উত্তর, কাঁথি দক্ষিণ, ভগবানপুর, খেজুরি, রামনগর, এগরা। ঝাড়গ্রামের বিনপুর, নোয়াগ্রাম, গোপিবল্লভপুর ও ঝাড়গ্রাম। প্রথম দফার ও ৫টি জেলার ৩০টি আসনে ভোট নেওয়ার জন্য কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেছে কমিশন। ৭৯৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এই ভোটের কাজে নিয়োগ করা হয়েছে।

বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনো রাজ্য পুলিশের অফিসাররা থাকতে পারবেন না বলে কমিশন আগেই জানিয়ে দিয়েছে। শুধু রাজ্য পুলিশের কর্মীরা ভোটের লাইন ঠিক করবে। বুথের ভেতরে ও বুথের বাইরে ১০০ মিটার অঞ্চল জুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। যার প্রতিটি ফুটেজ কমিশনের আধিকারিকরা কড়া পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখবে। বুথের বাইরে কুইক রেস্পন্স টিম মোতায়েন থাকছে। যেখানে জিপিআরএস মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা কোথাও কোনো উত্তেজনা বা গন্ডগোলের খবর পাওয়া মাত্রই ছুটে যাবেন। নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত প্রতিটি ভোট কর্মীকে করোনা বিধির সতর্কতা হিসেবে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও গ্লভস দেওয়া হয়েছে। কোনো ভোটার মাস্ক ছাড়া বুথে প্রবেশ করতে পারবেন না। ভোটারের একটি হাতে গ্লভস পড়তে হবে। সেই হাত দিয়েই সেই ইভিএম মেশিনে বোতাম টিপবে। পরে সেই গ্ল্যাভস জঞ্জালের বালতিতে ফেলতে হবে। বুথে কোনো ভোটদাতার শারীরিক পরিস্থিতি যদি অনুরূপ না থাকে, তাহলে তাঁকে ভোট পর্বের শেষ ঘন্টায় এসে ভোট দিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা ভোট গ্রহণ কেন্দ্র গুলিতে রাখা হচ্ছে। শনিবারের ভোট তাই শুক্রবার সকাল থেকেই বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার থেকে ভোট কর্মীরা তাঁদের প্রয়োজনীয় ইভিএম, ভিভি প্যাট ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নিজ নিজ ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের দিকে রওনা হয়েছেন। তাই এখন এই ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার গুলিতে এখন চলছে শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি। নির্বাচন কমিশনের তরফে সব ভোটারকে তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে।

ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার অন্য কমিশনের তরফে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ভোট গ্রণ কেন্দ্রে ওয়েব কাস্টিং ও ভিডিওগ্রাফির ব্যবস্থাও থাকছে ভোটারদের বিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ পর্বের জন্য। প্রথম দফায় বাঁকুড়া জেলার ৪টি বিধানসভা আসনের নির্বাচন। শালতোড়া, ছাতনা, রানীবাঁধ এবং রাইপুর এই চারটি বিধানসভার নির্বাচন। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শালতোড়া এবং ছাতনা বিধানসভার ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার করা হয়েছে এবং খাতড়া কলেজ ক্যাম্পাসে রাইপুর এবং রানীবাঁধ বিধানসভার ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার করা হয়েছে। দুটি ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার থেকে ভোট কর্মীরা সন্ধ্যার মধ্যে পৌঁছে গেছেন নিজেদের কেন্দ্রে। পুরুলিয়ায় মোট ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য প্রার্থীর সংখ্যা ৬৩। মোট ভোটদাতার সংখ্যা ২২৭৪৭৩৭জন, যায় মধ্যে পুরুষ ১১৫৭৬১৬জন ও মাহিলা ১১১৭১০৩জন, তৃতীয় লিঙ্গের সংখ্যা ১৮ । ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৩১২৭ এর মধ্যে ১৪৪টি মহিলা পরিচালিত ভোট কেন্দ্র রয়েছে। মূল ভোট কেন্দ্রর সংখ্যা ২৪৯১ ও অতিরিক্ত ৬৩৬টি কেন্দ্র, সিঙ্গেল বুথের সংখ্যা ১২১০টি একই প্রেমিসেসে সর্বোচ্চ ১১টি বুথের সংখ্যা ১টি। উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে ২৮২টি জায়গাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঝাড়খন্ড সীমানায় ৩৯টি নাকা পয়েন্ট করা হয়েছে। ভোট কর্মীর সংখ্যা ১৫০০৮ এছাড়াও ৭ হাজারের কিছু বেশি কর্মীকে রিজার্ভে রাখা হয়েছে। ভোটযন্ত্র বিতরণ ও গ্রহণ কেন্দ্র ৫টি। ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট গ্রহণের জন্যে ১৮৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও ৭৬৫০ কিছু বেশি রাজ্য পুলিশের কর্মী ভোটের কাজে যুক্ত থাকবেন। ছোট মাঝারি ও বড় গাড়ি সহ প্রায় ১১হাজার গাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে এই নির্বাচনে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দুটি মহকুমা, কাঁথি ও এগরার মোট ৭ টি বিধানসভা, রামনগর, কাঁথি উত্তর ও দক্ষিণ, এগরা, পটাশপুর, ভগবানপু ও খেঁজুরিতে ভোট রয়েছে প্রথম দফায়।

তার আগে শুক্রবার সকাল থেকে এগরার ঝটুলাল হাই স্কুলের পাশাপাশি কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজ, কিশোর নগর হাই স্কুল ও বাজকুল কলেজ থেকে ভোটকর্মীদের হাতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তুলে দেওয়া হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে নির্বাচন কমিশন এবারের ভোট পর্বে কড়া নজর দিচ্ছে। মাস্ক, স্যানিটাইজার, গ্লাভস প্রভৃতি প্রদান করা হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট করার লক্ষ্যে রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি ১৮ হাজার ৮০০ আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বিকেলের মধ্যে সব ভোটকর্মী নিজেদের ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে। সব মিলিয়ে শেষ মুহূর্তের ভোট প্রস্তুতির কাজে তৎপর জেলা প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুরের প্রথম দফার নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৭৫৭৭৫৫ জন। যাদের মধ্যে মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৮৫১৯৫০জন এবং পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৯০৫৭৯৯ জন। সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রে মোট বুথের সংখ্যা ২৪৩৭টি। মোট ভোট কর্মী রয়েছেন ৩০৭০জন।১ম দফায় ঝাড়গ্রাম জেলার ৪টি আসনে প্রথম দফায় আগামীকাল শনিবার ভোট নেওয়া হবে।এই ৪টি আসনে ২২২ অতিরিক্ত বুথ নিয়ে মোট বুথের সংখ্যা ১৩০৭টি। মোট ভোটার ৯,১১,৬৫৪ জন। পুরুষ ভোটার ৪৫৭০৫৭ জন, মহিলা ভোটার ৪,৫৪,৫৮৫ জন, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১২ জন।