এই মুহূর্তে জেলা

‘তোলাবাজ ভাইপো’র পাশাপাশি এবার শুভেন্দুর নিশানায় ‘ম্যাডাম নারুলা’ দুর্নীতি প্রসঙ্গে তীব্র আক্রমণ তৃমমূলকে

দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ২ ফেব্রুয়ারি:- দল এবং সরকারের দুর্নীতি প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কে দায়ী করে ফের একবার চড়া ভাষায় আক্রমণ শানালেন শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের সভায় এসে অভিষেককে নাম না করে তীব্র আক্রমণ করেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া এই নেতা। নাম না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘রানি মৌমাছি’ বলে সম্বোধন করে সব ‘মধু’ তিনিই খেয়েছেন বলে কটাক্ষ শোনা গেছে শুভেন্দুর গলায়। শুভেন্দু এদিন বলেন, ‘‘‘ভাইপো রানি মৌমাছি, সব মধু ওই খেয়েছে, আমরা তো শ্রমিক মৌমাছি।’’মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে তিনি বলেন, “আপনার ছোট বাড়ির কী হল? সবাই দেখেছে।” আমফান দুর্নীতি নিয়ে আবারও কটাক্ষের সুর চড়ান শুভেন্দু অধিকারী। বলেন, “তৃণমূল আমফানের টাকা চোর, লকডাউনের চাল চোর, এখন তো টিকা ঝাড়াও শুরু করেছে।” গরু পাচার কাণ্ডে নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, ‘তৃণমূল মানে এনামুল।’শুভেন্দুর কথায় একাধিক প্রসঙ্গ উঠে এসেছে, যা নিয়ে আগেও সুর চড়িয়েছেন তিনি। সভাতেই তিনি বলেন, “একটু আগেই ফোন পেলাম, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিএ-কে ফোন করেছে ইডি। আমার নামে বড় বড় কথা বলে এসেছে। তোলাবাজ শুনলেই রেগে যাচ্ছে। ঘুষখোর শুভেন্দু তা প্রমাণ করতে পারবে?” তিনি বলেন, “কয়লার লালার টাকা কোথায় কোথায় যায়? থাইল্যান্ডে যায়। সে দিন তমলুকে বলেছিলাম তো প্রমাণ দেখাব, দেখুন…” একটি টাকা লেনদেনের নথির প্রতিলিপি দেখিয়ে তিনি বলেন, “দেখে নিয়ে কয়লা পাচারের টাকা থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কে যায়।”

এরপরই সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “প্রেসের জন্য নিয়ে এসেছি প্রতিলিপি। দিয়ে দেব। ভাল করে স্টাডি করুন। ম্যাডাম নারুলাটা কে? গত লোকসভা ভোটে কলকাতা এয়ারপোর্টে সোনা নিয়ে ধরা পড়েছিলেন যিনি, তিনিই ম্যাডাম নারুলা।” এরপরই তাঁর কৌতুক, ‘সমঝদারকে লিয়ে ইশারা হি কাফি হ্যয়।’ শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেই এদিন বারুইপুরের সভায় হাজির হয়েছিলেন সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও এদিন তাঁর পুরনো দলের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদগার করেছেন। রাজ্য় সরকারকে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে এদিন রাজীব বলেন,‘‘কেন্দ্রের টাকা নেওয়া হচ্ছে না। রাজ্যের কোষাগার খালি করে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। এখন এটাই চাইছেন বাংলার মানুষ।’’এদিন বারুইপুরে সভায় ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ক দীপক হালদার যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। তিনি ছাড়াও এদিন বারুইপুর পুরসভার তৃণমূলের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল হালদার-সহ বেশ কয়েকজন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।গত লোকসভা ভোটের নিরিখে গোটা বঙ্গের অর্ধেক দখল করতে পারলেও বিজেপির কাছে এখনও মাথাব্যথা বেশ কয়েকটি জেলা। তার মধ্যে অন্যতম হল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা। এই জেলায় বিজেপির সংগঠন খুব একটা ভাল নয় বলে মত রাজনৈতিক মহলের। গোটা জেলা তৃণমূলের গড় হিসেবে চিহ্নিত। বিজেপি এবার এই জেলার জন্য বিশেষ ভাবে নজর দিয়েছে।

অন্যতম তৃণমূল নেতা তথা একসময়ের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায়কে আগেই দলে নিয়েছে বিজেপি। তাঁর ওপর এই জেলার সংগঠন বিস্তার করার অনেকটাই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এবার সেই জেলার দিকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে চলেছেন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া প্রাক্তন দুই হেভিওয়েট মন্ত্রী। শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সভা করতে চলেছেন বারুইপুরে। তাঁদের সেই সভায় আজ বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন গতকাল দলত্যাগ করা ডায়মন্ড করে তৃণমূল বিধায়ক দীপক হালদার। ​উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বিজেপি এবার দক্ষিণের দিকে নজর দেবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতায় তৃণমূলকে ফাঁকা করে দেবেন তাঁরা। অর্থাৎ, তিনি বলতে চেয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বিজেপি এবার সংগঠন বিস্তার করবে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলের ঘরে ভাঙন ধরিয়ে সেই সংগঠন গড়বে বিজেপি। তার সেই বক্তব্য যে একেবারে কথার কথা ছিল না তা গতকাল জানা গিয়েছে। দলের জেলা সভাপতির কাছে চিঠি পাঠিয়ে দলত্যাগ করেছেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল বিধায়ক দীপক হালদার। আজ তিনি বারুইপুরের সভায় উপস্থিত হয়ে বিজেপিতে যোগদান করতে চলেছেন। একইসঙ্গে রাজনৈতিক মহলের নজর থাকবে এই জেলায় আর কে কে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখাতে চলেছেন সেদিকে।