এই মুহূর্তে কলকাতা

প্রাক্তন সেনাপতিকে ভয় পাচ্ছেন মমতা ? নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় উঠে গেল প্রশ্ন।

কলকাতা , ১৮ জানুয়ারি:- নন্দীগ্রাম রাজ্যের জমি রক্ষার আন্দোলনের অন্যতম পীঠস্থান। পীঠস্থান রাজ্যে তৃণমূল সরকারের জয়যাত্রারও। কিন্তু যার হাত ধরে নন্দীগ্রাম থেকে একদা বাংলা দখল করেছিল তৃণমূল সেই সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারী এখন গেরুয়া শিবিরে। এমত অবস্থায় নন্দীগ্রামের গড় রক্ষা করতে নিজেই মাঠে নামলেন মমতা বন্দ্য়পাধ্যায়। চলতি বছর রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে তিনি নিজেই নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হচ্ছেন বলে সোমবার ঘোষণা করেছেন মমতা। সঙ্গত কারণেই তার এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আলোড়ন পরে গেছে রাজ্য রাজনীতিতে। ভোট ঘোষণা হওয়ার আগে খোদ মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর শুভেন্দু অধিকারী চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন তিনি অবিভক্ত মেদিনীপুরের ৩৫ টি আসনই বার করে আনবেন তৃণমূলের কব্জা থেকে। আর সেখানেই অনেকে মনে করছিলেন শুভেন্দুহীন অধিকারীদের গড় পূর্ব মেদিনীপুরে বড় ধাক্কা খেতে চলেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু এদিন নন্দীগ্রাম থেকেই সেই খেলা পুরো নিজে হাতেই ঘুরিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লক্ষ মানুষের ভিড়ে ঠাসা সভা থেকে নিজেই জানিয়ে দিলেন নন্দীগ্রামে প্রার্থী হচ্ছেন তিনি নিজে।

আর তার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কার্যত এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে পূর্ব মেদিনীপুর সহ গোটা মেদিনীপুরের মাটিই এবার বড়সড় গুরুত্ব পেতে চলেছে তৃণমূলের কাছে। সেই প্রসঙ্গেই মমতা এদিন জানিয়ে দিয়েছেন, আগে আমাকে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম দেখতে দিত না, এবার থেকে আমি দেখে নেব। আগে আমি টাকা দিয়ে কাজ সেরে নিতাম। কিন্তু আমায় দেখতে দিত না, সব নিজেরাই দেখত। কিন্তু এখন থেকে দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম আমি নিজেই দেখে নেব।’ বস্তুত এতদিন পর্যন্ত মনে হচ্ছিল আগামী রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম সহ মেদিনীপুরের ৩৫টি আসনে লড়াই হতে চলেছে শুভেন্দু বনাম তৃণমূলের। আর তাতে ভূমিপুত্র হওয়ার দৌলতে ও নন্দীগ্রাম গণআন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার সুবাদে কিছুটা হলেও বাড়তি সুবিধা পেতে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। কেননা সেই লড়াই হতো শুভেন্দুর সঙ্গে তৃণমূলের। কিন্তু এদিন থেকে সেই হিসাবটাই কার্যত গুলিয়ে গেল। অবিভক্ত মেদিনীপুরের মাটিতে যে ৩৫টি আসন ছড়িয়ে রয়েছে সেখানেও এবার কার্যত মুখোমুখি লড়াই হতে চলেছে মমতা বনাম শুভেন্দুর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাকে একযোগে আক্রমণ করল বাম ও বিজেপি। বিজেপির দাবি, দলের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে এসব বলছেন তৃণমূলনেত্রী। ওদিকে সিপিএমের কথায়, হার স্বীকার করে নিলেন মমতা। এদিন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘২০১৬ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ২৯৪টা কেন্দ্রে আমিই প্রার্থী।

আগে যদি জানতাম এদের প্রার্থী করতাম না। এক মাস আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ২৯৪ টা কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক আমিই’।তাঁর কটাক্ষ, এখন উনি ঘোষণা করলেন নন্দীগ্রামে প্রার্থী হবেন। উনি আর কত জায়গায় দাঁড়াবেন ? আসলে নীচের তলা থেকে তৃণমূল কর্মীরা সরে যাচ্ছেন। তাদের আটকাতে এসব বলছেন তিনি। এভাবে তৃণমূল কংগ্রেস ডোবা নৌকাকে তীরে ভেড়াতে পারবে না। আমরা ভবানীপুরেও চমক দেব’। মমতাকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ও। তিনি বলেন, ভবানীপুরে উনি জিততে পারবেন না বুঝে নিজের জন্য সব থেকে নিরাপদ আসনটা সবার আগে বেছে নিলেন। এভাবে নিজের পরাজয় নিজেই স্বীকার করে নিলেন উনি। সঙ্গে বিজেপিকে বার্তা দিলেন আমি তোমাদের পিছনে আছি। তৃণমূল ও বিজেপিতে পরাস্ত করতে হবে এটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জানে’। সঙ্গে তাঁর দাবি, হলদিয়া শেষ করেছেন। নন্দীগ্রামে যাবতীয় সম্ভাবনা শেষ করেছেন। এখন বলছেন অশোকনগরে তেল পাওয়া গেছে নন্দীগ্রামে শিল্প হবে। সিঙুরে শিল্প স্থাপনের চেষ্টা করছেন। ভোটের আগে এসব ভাঁওতা মানুষ বুঝে গিয়েছে’।