এই মুহূর্তে খেলাধুলা

হাফ ডজন ম্যাচে জয়ের দেখা নেই লাল হলুদে , কবে ফিরবে ইস্টবেঙ্গলের সুদিন ?


প্রসেনজিৎ মাহাতো , ২০ ডিসেম্বর:- যে ম্যাচ একাধিক গোলে জেতা যেত, সেই ম্যাচ ড্র করেই সন্তুষ্ট থাকতে হল রবি ফাউলারের দলকে। এই ড্রয়ের ফলে অবশ্য লিগ টেবলে এগারো থেকে এক ধাপ উঠে এল তারা। ছয় রাউন্ডের পরেও দু’পক্ষই জয়হীন রয়ে গেল এবং কেরালা ব্লাস্টার্স রয়ে গেল ন’নম্বরেই। ১৩ মিনিটে মাঘোমার থ্রু থেকে পাওয়া বল মাইনাস করেন রফিক। পিলকিংটনকে আটকাতে আসা বাকারি কোনের পায়ে লেগেই বল ঢুকে যায় গোলে। দ্বিতীয়র্ধে অবধারিত গোল বাঁচান ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদার। বক্সের মধ্যে জর্ডান মারের শট ছিল অবধারিত গোলের জন্য। কিন্তু গোললাইনের ঠিক সামনে দাঁড়ানো অবিশ্বাস্য সেভ করেন দেবজিৎ। ৮৭ মিনিটে বক্সের মধ্যে স্টাইনমানের স্কোয়ার পাস থেকে বল পেয়ে গিয়েছিলেন মাঘোমা। গোলে শটও নেন। কিন্তু দলকে বাঁচিয়ে দেন গোলকিপার আলবিনো। ৯৫ মিনিটে ফাকুন্দোর কর্নারের পর বক্সের মাথায় ডানদিক থেকে বিপক্ষের গোলের দিকে বল হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন সামাদ। সেই বলেই হেড করে গোল করে দলের হার বাঁচান জিকসন।

ডিফেন্ডার ড্যানিয়েল ফক্স এই ম্যাচে দলে ফিরে আসায় এসসি ইস্টবেঙ্গল দলকে এ দিন শুরু থেকেই চাঙ্গা লাগছিল। চোট সারিয়ে ফেরা অধিনায়ক ফক্সের সঙ্গে দলে আনা হয় তরুণ মিডফিল্ডার হাওবাম বা তোম্বা সিং। এ ছাড়া আর এক মিডফিল্ডার বিকাশ জায়রুকেও এ দিন প্রথম এগারোয় রাখেন কোচ রবি ফাউলার। প্রথম এগারোয় কোনও বিশেষজ্ঞ ফরোয়ার্ডকে না রেখেই এ দিন দল সাজান তিনি। আক্রমণের দায়িত্বে ছিলেন সেই অ্যান্থনি পিলকিংটন। ডান দিকের উইং দিয়ে মহম্মদ রফিক বল নিয়ে উঠছিলেন এবং বাঁ দিক থেকে গোল তৈরির চেষ্টা করছিলেন জাক মাঘোমা। কেরালা ব্লাস্টার্সের দুর্বল রক্ষণকে শুরু থেকেই ব্যতিব্যস্ত করে তুলছিলেন তাঁরা। শেহনাজ সিংকে এ দিন মাঝমাঠে খেলতে দেখা যায় এবং এই সিদ্ধান্তটা এ দিন কার্যকরী হয়ে ওঠে।

ন’মিনিটের মাথাতেই গোলের সামনে সুবর্ণ সুযোগ পায় লাল-হলুদ বাহিনী। তোম্বার দুরপাল্লার গোলমুখী শট কোনওরকমে বাঁচান কেরাল ব্লাস্টার্সের গোলরক্ষক আলবিনো গোমস। ফিরতি বলেও বক্সের মধ্যে ভাল সুযোগ পেয়েছিলেন পিলকিংটন। কিন্তু নিশু কুমারের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে যান তিনি। পেনাল্টির আবেদন করেও কোনও লাভ হয়নি। সেট পিস মুভমেন্ট থেকে ৬০ শতাংশ গোল পাওয়া কেরালা ব্লাস্টার্স এগারো মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় সেই সেট পিস থেকেই। ফাকুন্দোর কর্নারে হেড করে গোলের দিকে বল ঠেলেছিলেন জিম্বাবোয়ের ডিফেন্ডার কোস্তা। কিন্তু ক্রসবারের ওপর দিয়ে বল বেরিয়ে যায়।

মাঘোমারা অবশ্য প্রতি আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছিলেন এবং এমনই এক আক্রমণ থেকে ১৩ মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যায় এসসি ইস্টবেঙ্গল। যদিও গোলটি তারা পায় কেরালার ডিফেন্ডার বাকারি কোনের পা থেকে, কিন্তু গোলটি তৈরির পুরো কৃতিত্ব দেওয়া যেতে পারে মাঘোমা ও মহম্মদ রফিককে। মাঘোমার থ্রু থেকে পাওয়া বলই ডানদিক দিয়ে উঠে গোল লাইনের সামনে মাইনাস করেন রফিক। উদ্দেশ্য ছিল বাঁ দিক দিয়ে ওঠা পিলকিংটন। কিন্তু পিলকিংটনকে আটকাতে আসা বাকারি কোনের পা লেগেই বল ঢুকে যায় গোলে।

তিন মিনিট পরেই ফের দুর্দান্ত একটা সুযোগ পেয়ে যান পিলকিংটন। এ বারও গোলের পাসটি তাঁকে দিয়েছিলেন মাঘোমা। কিন্তু সেই বলের নাগাল পেতে একটু দেরি হওয়ায় পিলকিংটন তাঁর উল্টোদিকের পোস্টের বাইরে দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন। তিন মিডফিল্ডারকে যে ভূমিকা পালনের নির্দেশ দিয়ে পাঠিয়েছিলেন ফাউলার, এই ম্যাচে সেই তিনজনই তাঁদের ভূমিকার নিখুঁত ভাবে পালন করেন। আর তাঁদের পিছন থেকে সমানে সাহায্য করে যাচ্ছিলেন প্রথম ম্যাচ খেলা তোম্বা ও সুরচন্দ্র সিং। বিপক্ষের এলাকায় এ ভাবে ত্রাস সৃষ্টি করতে এ দিনই প্রথম দেখা যায় এসসি ইস্টবেঙ্গলকে। প্রথমার্ধে গোলে চারটি শট নেয় কলকাতার দল। সেখানে মাত্র দু’টি শট গোলে রাখে কেরালা ব্লাস্টার্স।

বিরতির পরেই একসঙ্গে তিন-তিনটি পরিবর্তন করে দল নামান কেরালা ব্লাস্টার্সের কোচ কিবু ভিকুনা। দুই মিডফিল্ডার জিকসন সিং ও সাহাল আব্দুল সামাদ নামেন ডাগ আউট থেকে। নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ড গ্যারি হুপারকে তুলে নিয়ে নামানো হয় জর্ডান মারেকে। হুপারের কাছ থেকে যে পারফরম্যান্স প্রত্যাশা করা হয়েছিল, এই মরশুমে এখন পর্যন্ত তা দিতে পারেননি তিনি। এই তিনটি পরিবর্তনের পরে আক্রমণে ধার বাড়ায় ব্লাস্টার্স। ৫১ মিনিটের মাথায় ফাকুন্দোর কর্নার থেকে বাকারি কোন হেড করে বল গোলের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু পোস্টের কয়েক ইঞ্চি বাইরে দিয়ে বল বেরিয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ২০ মিনিটে ব্লাস্টার্সের দাপট ওঠে চরমে। ডান দিকের উইং দিয়ে বারবার বিপজ্জনক ভাবে বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়ছিলেন সামাদ। এই সময়ে বল পজেশনও বেশ বাড়িয়ে নেয় তারা। হাফ ডজন ম্যাচে জয়ের দেখা নেই লাল হলুদের।