এই মুহূর্তে জেলা

নবমীতে জৌলুশহীন নিয়মরক্ষার পুজো , তাই মন খারাপ সাবেক ফরাসডাঙার।

হুগলি , ২৩ নভেম্বর:- আকর্ষণীয় মন্ডপ থেকে ভুবন মোহিনী আধুনিক আলোর ঝলকানীর দেখা নেই। চোখে পড়েনি জিটি রোড ও দিল্লী রোডে যান বাহনের ভিড় ও কালো মাথার জনস্রোত। দেখা যায়নি মন্ডপে মন্ডপে ভিড় করে ঢাকের তালে উদোক্তাদের উন্মাদনার দৃশ্য। করোনা ভাইরাসের কারণে এক ঝটকায় বদলে গিয়েছে চিরাচরিত চন্দননগরের ঐতিহ্যবাহী জগদ্ধাত্রী পুজোর চেনা ছবি। করোনা পর্বে উৎসবের মরসুমে নবমীর দিনে এমন পানসে সকালের ছবি আগে কেউ দেখেছেন বলে মনে করতে পাড়েন নি। তাই মন খারাপ সাবেক ফরাসডাঙার। ভদ্রেশ্বর থেকে চন্দননগর সর্বত্র জৌলুশহীন নিয়মরক্ষার পুজো হয়েছে। ভদ্রেশ্বরের তেঁতুল তলার ছোটো মা এর পুজো ২২৮ বছরে পড়ল। লোকমুখে অনেক প্রবাদ জড়িয়ে আছে প্রাচীন এই পুজোকে ঘিরে। প্রতিবছর পঞ্চমীর দিন থেকেই মন্দিরে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। প্রথা মেনে ছাগ বলিও হয়। কিন্তু করোনা আবহে এবারের পুজো কে ঘিরে মানুষের সচেতনতা নজর কেড়েছে। মন্দিরের বাইরের লোহার গ্রীলের বাইরে থেকেই মা কে প্রণাম জানিয়ে ধূপ মোমবাতি দিয়েছেন। চন্দননগরে আদি অর্থাৎ বড় মা হিসেবে পুজিত হন চাউল পট্টির বারোয়ারি প্রতিমা। সেখানে গিয়ে দেখা গেল অন্যন্য বছরের তুলনায় ভিড় কম।

দর্শনার্থীরা অধিকাংশই মুখে মাস্ক পড়ে বাইরে থেকেই প্রতিমা দর্শন করেছেন। কেউ কেউ মোবাইলে ভিডিও কল করে পরিচিতদের প্রতিমা দেখিয়েছেন। তবে সেচ্ছাসেবকেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রচার চালিয়েছেন। প্রতি বছরের মতোই বড় প্রতিমার পুজো করছে চন্দননগর তেমাথা বারোয়ারী। পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট প্রতিমার উচ্চতা। অন্যন্যবার পঞ্চমী থেকেই মন্ডপের সামনে তিল ধারনের জায়গা থাকে না। কিন্তু এবারে মন্ডপে লোক ছিল হাতে গোনা। উদ্যোক্তা মানবেন্দ্র কর বলেন, ৭৩ বছরে এই প্রথম অনাড়ম্বর ভাবে আমাদের পুজো হচ্ছে। পুজোকে ঘিরে সারাবছর আমরা রক্তদান ও বৃক্ষরোপন ও নানাবিধ সামাজিক কর্মসূচি পালন করলেও করোনার কারণে সমস্ত কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। পুজো হচ্ছে স্রেফ নিয়মরক্ষার।করোনার কারণে বাতিল করা হয়েছে বিসর্জনের শোভাযাত্রা। ৫০ বছরের পুজো হলেও সামনের বছর জয়ন্তী পালন করবে মানকুন্ডুর সার্কাস মাঠের পুজো ।সেখানে গিয়ে দেখা গেল তিন দিক খোলা মন্ডপে নমো নমো করে পুজো হচ্ছে। প্রতি বছর পুজো উপলক্ষে মাঠে জমজমাট মেলা বসে। মেলাই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ। কিন্তু এবারে মেলা বন্ধ থাকায় মন খারাপ স্থানীয়দের।

পুজো কমিটির উদ্যোক্তা শুভব্রত মৌলিক বলেন, করোনা কারণে আমরা এবারে জয়ন্তী বর্ষ পালন করব না। আমরা সামনের বছর ধুমধাম করে করব। তবে পুজো মন্ডপ থেকে করোনার বিরুদ্ধে সচেতনতা মূলক প্রচার চালানো হবে .৩২ বছরে নিয়োগী বাগান নব বালক সংঘের এবারের থিম লড়াই।উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন করোনার ছোবলে আমাদের জীবন জীবীকা থমকে গিয়েছে। মৃৎশিল্পী,আলোক শিল্পী ও প্যান্ডেল শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা কার্যত কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। করোনা কালে সেই সমস্ত শিল্পের সঙ্গে শ্রমজীবী মানুষের জয়গাথা তুলে ধরা হয়েছে আমাদের মন্ডপে বলে জানিয়েছেন যুগ্ম সভাপতি প্রশান্ত রায়। চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভজিত সাউ বলেন, ১০টি বারোয়ারির জয়ন্তী বর্ষ ও ৭টি পুজো কমিটির প্রাক জয়ন্তী বর্ষ ছিল। আমরা কমিটি গুলির কাছে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ২০২১ সালে জয়ন্তী ও প্রাক জয়ন্তী পালনের পরামর্শ দিয়েছি। তাতে বারোয়ারি গুলি সন্মতি দিয়েছে।

এতা একতা ভালো দিক। করোনা আবহে জগদ্ধাত্রী পুজোতে মানুষের ভিড় না জমলেও পুলিশি তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ভদ্রেশ্বরের গঞ্জের বাজার থেকে চন্দননগর স্ট্যান্ড ঘাট, বাগবাজার, উর্দিবাজার,তেমাথা ও ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলাতে পুলিশি টহল জারি ছিল। সক্রিয় ছিল ভদ্রেশ্বর ও চন্দনগরের ২৮ টি পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র। পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, পুলিশ ২৪ ঘন্টা রাস্তায় থাকলে মানুষ নিয়ম মানবে। সেই সঙ্গে মানুষের মনে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। সেই কারণেই পুলিশ টহল দিচ্ছে। সারাদিন রাত পুলিশ কন্ট্রোল রুম চালু থাকবে।