এই মুহূর্তে জেলা

বাঁকুড়ার খোশালপুর গ্রামের বর্ধিষ্ণু ঘোষ পরিবারের কালি পূজোকে কেন্দ্র করেও রয়েছে ইতিহাস।

বাঁকুড়া , ১১ নভেম্বর:- আর কয়েক দিন পরেই কালী পুজো। আর এই কালী পূজোকে কেন্দ্র করে বাঁকুড়া জেলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানান ইতিহাস। বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের খোশালপুর গ্রামের বর্ধিষ্ণু ঘোষ পরিবারের কালি পূজোকে কেন্দ্র করেও রয়েছে ইতিহাস। । প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীণ এই কালী পুজোকে ঘিরে উৎসবের চেহারা নেয় পুরো গ্রাম। ঘোষ পরিবারের এই পুজো নিয়েও প্রচলিত রয়েছে বিশেষ লোক কথা। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় লোককথা হলো, মোটামুটি ১৭০০ সালে হুগলির সেনাই গ্রামে এক লেঠেল পরিবার বাস করতেন। বর্গীদের হাতে যুদ্ধে বাবার মৃত্যুর পর দুই ভাই বানেশ্বর ঘোষ ও পরাণ ঘোষ প্রাণভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়িত হয়ে প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পাত্রসায়রের খোশালপুর গ্রামে পৌঁছান। সেখানে তৎকালীন জমিদারের আশ্রয়ে তাঁরা থাকতে শুরু। পরে জমাদারের কথা মতো এক নিঃশ্বাসে দুই ভাই গ্রামের বড়পুকুর যান এবং জমিদার ঐ জমি দুই ভাইকে নিস্কর দান করেন । এভাবেই চাষাবাদ করে দুই ভাইয়ের সংসার চলছিল।

খোশালপুর গ্রামের পাশেই ছিলো বেনেডাঙ্গা সেখানে বসবাস করতেন বেনিয়ারা বেলেডাঙ্গা জঙ্গলে ছিল একটি ছোট্ট কালী মূর্তি। আর সেই কালী মায়ের মূর্তিকে দিনের-পর-দিন অপবিত্র করতেন ওই বেনে সম্প্রদায়ের মানুষেরা, কিন্তু মায়ের উপর অত্যাচার হওয়ায় তিনি কূপিতা হন। ঠিক তখনই পরান ঘোষের স্ত্রী স্থানীয় কালীবাধ পুস্কুরণীতে শাঁখা পলা পরিহিতা মায়ের কৃষ্ণ বর্ণের হাত দেখতে পান এবং পরে রাতে পুজো শুরুর স্বপ্নাদেশ পান। মায়ের কথা মত বেনেডাঙ্গার জঙ্গলেই মায়ের পুজো শুরু হয় তখনো প্রতিদিন বেনেদের দ্বারা মা অপবিত্র হতেন। ফলে মায়ের ক্রোধ দ্বিগুণ হতে থাকে ফলে মায়ের রোশে পড়ে বেনেদের এক যুবক মায়ের খাড়া নিয়ে নিজেই নিজের শিরশ্ছেদ করেন। প্রাণ ভয়ে রাতারাতি বেনে সম্প্রদায়ের মানুষেরা ওই এলাকা থেকে পলায়িত হন অন্যত্র। এমনকি তারপর থেকে ঘোষ পরিবারের লোকেরাও ওই জঙ্গলে যেতে ভয় পেতেন।

পরে আবার ওই একই পুকুরে অর্থাৎ কালীবাধ পুস্কুরণীতে শাঁখা পলা পরিহিতা মায়ের কৃষ্ণ বর্ণের হাত দেখতে পান পরান ঘোষের স্ত্রী এবং মা তাকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন ” আমার মূর্তি তোদের বাড়িতে স্থাপিত কর আমি আর কারোর কোন ক্ষতি করব না আমার নরবলির সাধ মিটেছে এবং তোদের পরিবার আনন্দে উচ্ছাসে মেতে উঠবে ধনসম্পত্তিতে ভরে উঠবে ” উত্তরে পরান ঘোষের স্ত্রী বলেন আমাদের তো কিছুই নেই কিভাবে আপনার পুজো করবো ঠিক তখনই মা নিজের পুজোর দায়িত্ব নিজেই বহন করেন। এক কিশোরীর বেশে পুজোর আয়োজন করার জন্য মৃৎ শিল্পীর বাড়ি গিয়ে প্রতিমা তৈরীর কথা, পুরোহিতের বাড়িতে তাকে পুজো করার কথা বলেন এমনকি বাদ্যকর সহ অন্যান্যদের আসার কথা বলে কথিত আছে। পরে ঘোষ পরিবার পুজোর সঙ্গে যুক্তদের বেশ কিছু জমি দান করেন ঘোষ পরিবার এর পক্ষ থেকে। এভাবেই আজও সমান উৎসাহ নিয়ে গ্রামে পুজো হয়ে আসছে ।