বাঁকুড়া , ৮ নভেম্বর:- আর কয়েক দিন পরে কালী পূজো এবং আলো উৎসব দ্বীপাবলি। তার আগে আগে বেরিয়ে পড়েছিলাম বাঁকুড়ার বেশ কিছু ঐতিহ্য বাহী কালি পূজোর ইতিহাস জানতে। সেই পূজো গুলির অন্যতম হল সোনামুখীর ইতিহাস সমৃদ্ধ মাঁ-ই-ত কালী। কিন্তু এই কালীর কেন এমন নামকরন? আমরা জানার চেষ্টা করবো এই কালী প্রতিমার নাম করনের ইতিহাস। এলাকার প্রচলিত লোক কথা অনুযায়ী শোনা যায়, ইং ১৭৪২ খ্রী: বাংলা ১১৪৯ সালে মারাঠা সেনাপতি ভাস্কর পন্ডিত বর্গীদের একটি দলসহ বিষ্ণুপুর থেকে সোনামুখী আসে লুটপাট করার জন্য বাদ্যভাণ্ড সহ। তারা ‘হর হর বোম বোম’ শব্দ করতে করতে রাণীর বাজারে মাঁ কালীর মন্দিরের সামনে বর্গীদল সমবেত হয়। তখন এই মন্দিদের চারদিক গাছপালাতে পরিপূর্ণ ছিল। শোনা যায় দিনের বেলাতেই অনেকে মন্দিরের সামনে আসতে সাহস করতো না। যেদিন আক্রমণ হয় সেই দিন সময়টা ছিল দিবা অপরাহ্ণ। এলাকার মানুষজন সকলে বর্গীদের ভয়ে নিজ নিজ ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। অন্যদিকে বর্গীদল বাজনা বাজাতে বাজাতে নাচতে গ্রামের দিকে আসে। সেই সময় এক বৃদ্ধ সন্ধ্যায় দেবীমন্দিরে আলো দেবার জন্য একটি প্রদীপ নিয়ে মন্দিরে মাঁয়ের ঘটের সামনে রেখে বলিস্থানে হাড়িকাঠের সামনে প্রনামরত হলেন।
এমন সময় বর্গীদলের সর্দার একটি খাঁড়া উঠিয়ে প্রনামরত বৃদ্ধকে বলি দিতে উদ্যত হয়, কিন্তু মায়ের দৈবশক্তিতে ঐ উদ্যত খাঁড়া আর নামানো সম্ভব হয়নি। ঐ ঘাতক সেদিন অন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলেও শোনা যায়। তখন সেনাপতি তাঁর সাথীদের বললেন, কেন তোমরা আমার খাঁড়া পেছন থেকে টেনে রেখেছো ‘?? বর্গীদল উত্তর দিলো, কেউ আপনার খাঁড়া পেছন থেকে টানে নাই। সর্দার তখন জানতে চান মন্দিরে প্রদীপটি এখনও জ্বলছে কিনা, আর যে বৃদ্ধ প্রনাম করছিলো সে আছে কিনা? অন্যান্য বর্গীরা তখন উত্তর দেয় প্রদীপ ঠিকই জ্বলছে এবং বৃদ্ধ এখানেই আছে “। সর্দার জানান, “প্রদীপের আলো তিনি কেন দেখতে পাচ্ছেন না ? তিনি জিজ্ঞেস করেন তবে কি তিনি অন্ধ হয়েগেলেন? তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে কোন দৈবশক্তিতে তাঁর খাঁড়া আটকানো আছে। তিনি তাঁর সাথী দের আদেশ দেন ঐ বৃদ্ধকে হত্যা না করে আটকানোর জন্য এবং তাঁর পূর্ব্বাবস্থা প্রাপ্তির জন্য অনুরোধ করো। ইতিমধ্যে ঐ বৃদ্ধ প্রনাম শেষ করে উঠে সব ব্যাপার বুঝতে পারেন।
তখন সকলে ঐ বৃদ্ধকে অনুরোধ করায় তিনি মন্দিরে মাঁয়ের ঘট হতে জল নিয়ে ঐ ঘাতক সর্দার এর চোখে এবং সর্বাঙ্গে দেন। তখন সর্দার দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেলেন এবং তিনি খাঁড়া নামাতে পারেন। সর্দার বৃদ্ধকে বললেন , “এখানে কোন দেবতা আছেন “? বৃদ্ধ উওর দিলেন, ” মা কালী আছেন। বর্গীসর্দার বললেন, ” মায়ী-ত কালী হ্যায় “। আচ্ছা আমি তোমকে যে খাঁড়াতে কাটতে যাচ্ছিলাম সেটি এবং আরো একটি খাঁড়া নাও, তোমারা এই খাঁড়া দিয়ে বলিদান করবে। আমরা আর এখানে লুটপাট করবো না, কাটোয়া চললাম। বাজনা বাজাও ” মায়ী-ত কালী হ্যায় , মায়ী-ত কালী হ্যায়। তারপর বর্গীদল বাজনা বাজাতে এবং কালী মায়ের নাম করতে করতে সোনামুখী ছেড়ে চলে যায়। তখ থেকে এই মাঁয়ের নাম হলো ” মায়ী- ত কালী ” বা ” মাঁ-ই-ত কালী। প্রতি বছর বেশ ধুমধাম করে এখানে পূজো হয়। তবে এ বছর করোনা আবহে পুজোর অনুষ্ঠানে কাটছাঁট করতে হয়েছে,ফলে মন খারাপ সোনামুখী শহরবাসীর। মা – ই – ত – কালী পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ শ্রীকান্ত দে বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবছর আমরা পুজোর আয়োজন করেছি। পুজোতে আগত সমস্ত দর্শনার্থীদের জন্য মাক্স ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। সঞ্জীব ব্যানার্জি বাসুদেব দেবতি নামের শহরবাসীরা বলেন, অন্যান্য বছর যে আনন্দ নিয়ে কালীপুজো কাটাতাম এবছর তা আর হবেনা স্বাভাবিকভাবেই খুবই খারাপ লাগছে।