এই মুহূর্তে কলকাতা

গুরুং শিবিরের সঙ্গে সমঝোতায় রাজী নন বিনয় তামাং , শাঁখের করাতের মুখে মমতা ।

কলকাতা , ২ নভেম্বর:- পাহাড়ে রাজনীতির রাশ নিজের হাতে ফিরে পেতে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।পাহাড় রাজনীতিতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিতর্কিত নেতা বিমল গুরুঙ্গের প্রত্যাবর্তন ও তাঁর প্রতি আস্থা জ্ঞাপনের কারণেই মুখ্যমন্ত্রী পাহাড় ও লাগোয়া তরাই ডুয়ার্সে ফের ঘাস ফুলের মাথা তোলার স্বপ্ন দেখছেন বলে অভিমত রাজনৈতিক মহলের। কিন্তু মোর্চার বর্তমান অভ্যন্ত্রীন সমীকরণই এখন মুখ্যমন্ত্রীর উচ্চাশা পূরণে প্রধান বাধা বলে তাঁরা মনে করছেন। কারণ মোর্চার বর্তমান ক্ষমতাসীন বিনয় তামাং গোষ্ঠী বিমল গুরুং শিবিরের সঙ্গে হাত মেলাতে রাজী নন।এখন দুপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসে যেন তেন প্রকারেণ এই বরফ গলাতে চাইছেন মমতা। কিন্তু বরফ গলবে কি না তা নিয়ে সংশয়ের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।কারণ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বলার আগে বিনয় তামাং স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা গুরুঙ্গের সঙ্গে হাত মেলাতে রাজী নন।পাহাড়ের রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে সেটাই স্বাভাবিক। পাহাড়ের রাজনীতি বরাবর যে পথে চালিত হয়েছে সেই শূণ্যস্থান পূরণের পথেই সুবাস ঘিসিং থেকে শুরু করে বিমল গুরুঙ হয়ে আজকের বিনয় তামাংদের উত্থান। বিনয় গুরুঙ্গের অনুপস্থিতিতে মমতার হাত ধরে পাহাড়ে মোর্চা তথা গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন জিটিএ-র মসনদ দখল করেছে তামাং গোষ্ঠী। কাজেই ফের বিনয় গুরুংকে মসনদ ছেড়ে দিতে তাদের আপত্তি থাকারই কথা।

এমত অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুর ৩টে নাগাদ নবান্নে বিনয় তামাং ও অনিত থাপার সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মমতা। বিমল গুরুং ,রোশন গিরির পাহাড়ে ফেরা নিয়ে যে জটিলতা এখন দেখা দিয়েছে তার জেরে আবারও উত্তপ্ত হরে শুরু করে দিয়েছে পাহাড়ের রাজনীতি। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী তামাং-থাপা ও গুরুং-গিরি শিবিরের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে সফল কোনও নীতি নিতে পারেন কী না স্বাভাবিক ভাবেই তা নিয়ে সকলের কৌতুহল রয়েছে । তবে বৈঠকে গুরুং শিবিরের কেউ থাকছেন না বলেই জানা গিয়েছে।অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে চড়া সুরে বিনয় তামাং এদিন জানিয়ে দিয়েছেন রাজনৈতিক কিংবা প্রশাসনিকভাবে বিমল গুরুং এবং রোশন গিরির সঙ্গে কোনও সমঝোতা করতে তাঁরা প্রস্তুত নন। একদা যার হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছিলেন এদিন তাঁকেই ফেরার কুনের াসামী বলে আক্রমণ শানান।

পাহাড়ে কার্যত গত কয়েক বছর ধরেই বার বার ধাক্কা খেয়েছে অর্থনীতি। ২০১৭ সালের অশান্তির জেরে টানা সাড়ে তিন মাসের বনধ সব থেকে বড় ধাক্কা দিয়েছিল পাহাড়ের অর্থনীতিকে। পরে গুরুং পাহাড়ছাড়া হতেধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে পরিবেশ। কিন্তু চলতি বছরে কোভিডের জেরে টানা লকডাউন আবারও পাহাড়ের অর্থনীতিকে ধাক্কা দিয়েছে। এখন বিমল গুরুং ফের পাহাড়ে ফেরার কথা জানানোয় বিমলপন্থীরা একদিকে যেমন ক্ষমতা হারানোর ভয় পাচ্ছে তেমনি পাহাড়ের আমজনতা ভয় পাচ্ছে আবারও না পাহাড়ে অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠে, আবারও না বনধের রাজনীতি শুরু হইয়ে যায়। নবান্নের দাবি রাজ্য সরকারও চাইছে না এই ধরনের কিছু ঘটুক। বরঞ্চ মুখ্যমন্ত্রী এটাই চাইছেন যে পাহাড়ের শান্তি বজায় থাকুক, সেই সঙ্গে চলুক উন্নয়নের কাজও। সেই কারনেই ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের তরফে পরিস্কার করে দেওয়া হয়েছে বিনয় তামাংই পাহাড়ে প্রধান প্রশাসক হিসাবেই কাজ করবেন, অনিত থাপা জিটিএ চেয়ারম্যান হিসাবেই কাজ করবেন। তবে মোর্চার দুই গোষ্ঠীর মেলবন্ধন ঘটিয়ে গুরুং-গিরির হাতেই দলের দায়িত্ব তুলে দিতে চায় রাজ্য।