এই মুহূর্তে জেলা

৪৯০ বছরের নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর প্রতিষ্ঠিত মেজ বাটির দুর্গা পুজো খড়দহে

বারাকপুর , ২০ অক্টোবর:- করোনা অতিমারির ফলে এবার বাঙালির দুর্গোৎসব অনেকটাই ফিকে। তবুও ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে এবারও খরদহের মেজবাটির পুজো প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। যদিও পুজো ঘিরে আগের মতন সেই জৌলুস বা চাকচিক্য এখন আর নেই। কিন্তূ পুরানো ঐতিহ্য ও পরম্পরা বজায় রেখে দশভুজা মা কাত্যায়নি রুপে পূজিত হন খড়দহের মেজবাটিতে। ১৪৫২ শকাব্দের ১৫৩০ খ্রীস্টাব্দে নিত্যানন্দ মহাপ্রভু খড়দহে নিজের বাসভবনে এই দুর্গা পুজোর প্রচলন করেছিলেন। এবারে নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর প্রবর্তিত পুজো ৪৯০ বছরে পদার্পণ করল। বর্তমানে প্রভু নিত্যানন্দরের বাসভবনটি কুঞ্জবাটী নামে পরিচিত। কিন্তূ এখন মহাপ্রভুর সূচনা করা কুঞ্জবাটীর পুজো মেজবাটীর পুজো নামে জনসমাজে পরিচিতি লাভ করেছে।

যদিও কালের হাত ধরে নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর পরিবার প্রসারিত হয়। তবুও খড়দহের শ্যামসুন্দর মন্দির লাগোয়া মোহন গোষ্ঠীর বড়বাড়ি ও মেজবাড়ির পুজো আজও ধারাবাহিক ভাবে চলে আসছে। জানা গিয়েছে,নিত্যানন্দ মহাপ্রভু ১৫২২ সাল থেকে খড়দহে বসতি স্থাপন করেন। আনুমানিক ১৫৩০ সালে তিনি এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর ১৪ তম বংশধর তথা পুজোর অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা সরোজেন্দ্রমোহন গোস্বামী জানান, নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর প্রতিষ্ঠিত এই মেজোবাটীর দুর্গা পুজোর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। যা সাধারণ পুজো থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। মহাপ্রভু নিত্যানন্দ মা কাত্যায়নী রুপে এই পুজোর সূচনা করেন। কাত্যায়নী ( ভগবতী মা দুর্গার প্রতিরুপ )। তিনি আরও জানান,এই পুজোর অতি চিত্যাকর্ষক বিষয় হল,মা দুর্গার পাশে সরস্বতী ও লক্ষ্মীর অনুপস্থিতি।

তার পরিবর্তে মায়ের পাশে জয়া ও বিজয়া অবস্থান করেন। মা দুর্গার পদতলে দেখা মেলে ঘোড়ার মুখের আদল যুক্ত সিংহ। সরোজেন্দ্রমোহন গোস্বামী আরও জানান,মহা ষষ্ঠীর দিন বোধন পুজো আরম্ভ হওয়ার পরেই মা দুর্গাকে সিংহাসনে তোলা হয়। নীচের দিকে একপাশে কলা বৌ অর্থাৎ নব দুর্গার পরনে সাদা থান। কিন্তূ সেই সাদা থানের ওপর লম্বা ভাবে সিঁদুরের রেখা দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। এই পুজোয় সাধারণত কোন বলি দেওয়ার প্রথা নেই। কেবল মাত্র মন্ত্রের সাহায্যে এখানে মাশকলাই বলি দেওয়া হয়। মাকে ঘিরে থাকা ভূত,প্রেত ও অপদেবতাদের সন্তুষ্টি করনের জন্যে। কারন,তারা রাস্তা না ছাড়লে মায়ের কাছে পৌঁছানো যায় না।

বিজয়ার দিন বাড়ির মহিলাদের সিঁদুর খেলার মধ্যে দিয়ে এই পুজোর সমাপ্তি ঘোষণা হয়। খড়দহের অতি প্রাচীন পারিবারিক পুজো হিসাবে নিত্যানন্দ মহাপ্রভু প্রতিষ্ঠিত মেজোবাটীর পুজো সম্পূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশে প্রতিবছর মায়ের আরাধনা করা হয়। তবে পুজোর জৌলুস আজ অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছে। কিন্তূ প্রাচীন সাবেকিয়ানা এবং নিয়ম নিষ্ঠা ষোল আনা বজায় রয়েছে মহাপ্রভু প্রতিষ্ঠিত এই পুজোয়। যদিও খড়দহের বোনেদি এই মেজবাটির পুজো উদ্যোক্তারা জানালেন, এবার তাদের পুজোর সমস্ত আয়োজন করা হবে কোভিড প্রটোকল মেনেই। এমনকি পরিবারের সদস্যরা ছাড়া বাইরের কাউকেই তাদের দুর্গা দালানে ঢুকতে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।