কলকাতা , ১২ সেপ্টেম্বর:- বাতাসে ভাসমান ক্ষতিকারক গ্যাস ও বিভিন্ন পদার্থের জন্য ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) একটি শ্বাসকষ্ট জনিত অসুখ। যার ফলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা রকমের সংকট দেখা দেয়। চিকিৎসা শাস্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এই রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীর বিভিন্ন অসুখের ইতিহাস ও নানা লক্ষনের মূল্যায়ণ করেন। এরফলে এই অসুখ দ্রুত শনাক্ত করতে সমস্যা দেখা দেয়। ফল হিসেবে যারা এই অসুখে ভুগছেন তাদের প্রচুর অর্থ ব্যয় এবং ঘন ঘন হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
আইআইটি খড়গপুরের একদল গবেষক এই প্রেক্ষিতে কৃত্রিম মেধা এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে সিওপিডি শনাক্তকরণ যাতে কম খরচে করা যায় সে সংক্রান্ত একটি ব্যবস্থাপনার উদ্ভাবন করেছেন। সংস্থার পদার্থ বিভাগের অর্গানিক ইলেক্ট্রনিক্স ল্যাবরেটরির অধ্যাপক দীপক কুমার গোস্বামীর নেতৃত্বে একদল গবেষক সেনফ্লেক্স নামে একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন। এই ব্যবস্থায় একটি মাস্কের সঙ্গে ব্লুটুথের মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড প্রযুক্তিতে রোগীর নিশ্বাস-প্রশ্বাসের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর পাশাপাশি রোগীর হৃদস্পন্দন এবং রক্তে কতটা অক্সিজেন রয়েছে সেই তথ্যও সংগ্রহ করা হয়। এই অ্যাপটি ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত থাকে যার সাহায্যে কৃত্রিম মেধার মাধ্যমে সিওপিডি-র প্রাবল্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
হৃদরোগের পরেই সিওপিডি-র কারণে বেশি লোর মারা যায়। ২০১৭ সালে ভারতে প্রায় ১০ লক্ষ লোকের মৃত্যুর কারণ ছিল সিওপিডি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এইডস, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, ডায়াবেটিসে মোট যতজন মারা যান সিওপিডি-র ফলে মৃত্যুর পরিমান তার থেকেও বেশি। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে কোভিড-১৯এর কারণে যাদের সিওপিডি-র সমস্যা আছে এরকম সংক্রমিত ৬৩ শতাংশই মারা যাচ্ছেন।
অধ্যাপক গোস্বামী জানিয়েছেন সেনফ্লেক্স স্মার্ট মাস্ক অত্যন্ত সংবেদী, এখানে তাপমাত্রা মাপার একটি যন্ত্রের সাহায্যে ব্লু-টুথ ভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখা হয়। একজন রোগী প্রশ্বাসের সময় কতটা বাতাস নিচ্ছেন এবং নিশ্বাসে কতটা বার করতে পারছেন তা এই ব্যবস্থার মাধ্যমে দেখা হয়। এরসঙ্গে একটি পাল্স অক্সিমিটারকেও যুক্ত করা হয়। ফলে রোগীর রক্তে অক্সিজেনের পরিমান সম্পর্কে সহজেই ধারনা পাওয়া যায়। আইআইটি খড়গপুরের এই উদ্ভাবনটির বিষয়ে স্বত্ত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করার জন্য সবরকমের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ২ হাজার ৫০০ টাকায় এক একটি চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি করা যাবে।