এই মুহূর্তে খেলাধুলা

পায়ের তলায় সর্ষে , সোদপুরের মোহনা সৌদির জিমনাস্ট কোচ।

অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়,৫ এপ্রিল;-  হতে পারতেন আরও নামী এক জিমনাস্ট, আনতে পারতেন দেশের জন্য পদক। কিন্তু হলেন নামী এক জিমনাস্টিক্স কোচ। স্বপ্ন দেখেন তাঁর শিক্ষার্থিরা তাঁর মুখ উজ্জ্বল করবে, সেই স্বপ্নই তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে মোমের কোনও পুতুল। বোঝাও যাবে না কী পরিমান আগুন রয়েছে মোহনা দে-র মধ্যে। কত অল্প বয়সে তিনি পাঁচ দেশের জিমনাস্ট কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজের দেশ ভারতসহ অস্ট্রেলিয়া, ওমান, কাতার এবং বর্তমানে রয়েছেন সৌদি আরবের রিয়াধে। মোহনার বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরে। অন্যান্য বাঙালি মেয়েরা যখন ঘরকুনো, বাইরে যাওয়ার আশঙ্কায় ভোগেন, সেইসময় শেষ ১০ বছর পায়ের তলায় সর্ষে রয়েছে মোহনার। তবুও বঙ্গতনয়ার মধ্যে সেই আবেগই নেই। ‘‘আমি তো খুব কম বয়স থেকে দেশের বাইরে বাইরে ঘুরছি একাই, আমার অভ্যেস হয়ে গিয়েছে এতদিনে। আমি একটু ডানপিটে প্রকৃতির। আমার ওসব ভয়-টয় লাগে না।’’ জানালেন সুন্দরী জিমনাস্ট। সোদপুরের দে পরিবারে বাবা ও দাদা দুইজনই ভাল ফুটবল খেলতেন। দুইজনই আবার সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। বাবা চাইতেন মেয়ে কোনও একটি খেলাকে বেছে নিক। সেই মতোই স্বপ্ন দেখা শুরু। তবে গোলগাল দেখতে ছোটবেলা থেকেই। মোহনা রিয়াধ থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘আমি যখন ওমান ও কাতারে কোচ হিসেবে গিয়েছিলাম। সেইসময় অনেকই ভ্রু কুঁচকে দেখেছিলেন।

There is no slider selected or the slider was deleted.

                                                                                                                                                                                                                          কিন্তু শুরুতেই যখন সামারসল্ট ও বিম ব্যালেন্সিং করলাম, অনেকেরই তখন মুখে কথা নেই। সবাই সেইসময় হাঁ করে দেখছে আমাকে!’’ বলেই হাসছিলেন তন্বী। জিমনাস্ট হিসেবে মোহনার উত্থান খুব চমকপ্রদ ও দ্রুত। মাত্র ১১ বছর বয়সে মোহনা সিনিয়র স্তরে খেলেন, এটিও একটি নজির বলা চলে। ঝুলিতে ছিল রাজ্যস্তরের মেডেল। তার পরেরবছর তিনি নামেন জাতীয় জিমনাসিক্সে। ভাল ফল করেন সেই আসরেও। তবে দ্রুতই তিনি সিদ্ধান্ত নেন এবার কোচ হিসেবেই তিনি হয়ে উঠবেন ‘সেরা’। এর মধ্যে জয়পুরিয়া কলেজ থেকে স্নাতক হয়ে গিয়েছেন। করে নিয়েছেন জিমনাস্টিক্সের কোচিংয়ের পাঠও। তারপর চলে যান অস্ট্রেলিয়ায় আধুনিক জিমনাস্টিক্সের কোচিং নিতে। সেটাই জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায় মোহনার। এমনকি অস্ট্রেলিয়া স্পোর্টস কমিশনের স্বীকৃত কোচও এই সুদর্শনা মেয়েটি। বলছিলেন, ‘‘অ্স্ট্রেলিয়ায় গিয়ে আমি বুঝতে পারি ভারতে যা কোচিং শেখানো হয়, অনেকটাই পার্থক্য। আধুনিকতম কোচিং আমি ওই দেশে গিয়ে বুঝতে পেরেছি।’’ ক্যাঙারুদের দেশ থেকে ফিরে এসে বঙ্গললনা ভারতে আরও দুটি কোর্স করেন। এর মধ্যে সাই থেকে এনআইএস কোচিং করে নিয়েছেন। এমনকি ফুটবলে যেমন ফিফা, তেমনি জিমনাস্টিক্সে ‘ফিগ’ (FIG) Fedaration of Gymnastics) কোচিংও রপ্ত করে নেন। তামিলনাড়ুর কোচ হিসেবে দারুণ নামডাকও হয়েছিল তাঁর। কেননা তাঁর কোচিংয়ে তামিলনাড়ুর মেয়েরা ভাল ফল করছিলেন। চেন্নাইতে ছিলেন তিন বছর। মোহনার কোচিংয়ে তারা বিভিন্ন আসর থেকে পদকও নিয়ে আসে। তবুও বাংলার জিমনাস্টিক্স কর্তাদের হুঁশ হয়নি তাঁকে কোচ করার বিষয়ে। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে মোহনার কাছে কাতারের কোচ হওয়ার প্রস্তাব আসে। কলম্বিয়ান কোচ সহকারী ছিলেন।

There is no slider selected or the slider was deleted.

                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                      তিনি ওই প্রস্তাব পেয়ে রীতিমতো পুলকিত হয়ে যান। রিয়াধ থেকে তিনি জানালেনও, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশগুলিতে রোমানিয়া কিংবা ইউক্রেন থেকে কোচ নিয়ে আসা হয়। সেখানে তৃতীয় বিশ্বের একটা সাধারণ দেশ থেকে আমাকে কোচ করা হবে, আমি স্রেফ ভাবতে পারিনি। তারপরই আমার জীবনের আসল চ্যালেঞ্জ শুরু হল।’’ চ্যালেঞ্জ বলতে দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে থেকে একঘেয়ে জীবন কাটানো বিদেশের মাঠে। সৌদিতেও জাতীয় দলের কোচ তিনি। নাইজেরিয়ান কোচ সহকারী মোহনার। বহু খুদে শিক্ষার্থির কাছে আদরের ‘ম্যাম’ হয়ে উঠেছেন। একসময় ওমান বা কাতারের বনেদি পরিবারের ছেলেমেয়েদের কোচিং করিয়েছিলেন। এবার এক ভারতীয় নারী হিসেবে সৌদির মতো রক্ষণশীল সমাজে হয়ে উঠেছেন প্রকৃতঅর্থের এক শিক্ষিকা। সৌদিতে তিনি হেড কোচ কাম প্রোগ্রাম ডিরেক্টর। মহিলাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক জিমনাস্টিক্স সৌদিতে মোহনার হাত ধরেই এসেছে। এক বাঙালি মেয়ের হাত ধরে সৌদিতে মহিলা জিমনাসিস্টের চর্চা, ভাবাই যায় না।   বিশ্বের বাকি শহরের মতো সৌদিতেও চলছে লকডাউন। তাই বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থেকে প্রতিনিয়ত প্র্যাকটিসের মধ্যে রয়েছেন। মোহনাকে দেখতে আদুরে মনে হলেও তাঁর পেশি শক্তি এতটাই যে বিদেশীরাও অবাক হয়ে তাঁর কুশলতা দেখেন। মোহনা নিজের লক্ষ্য, বিদেশে কোচিং করিয়ে থিতু হওয়া। ভারতে গেয়োঁ যোগী ভিখ পায় না, তার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত এই বাঙালি মহিলা কোচ। যিনি স্বপ্ন দেখেন ভারতের তেরঙ্গাকে বিদেশের মঞ্চে তুলে ধরতে।

There is no slider selected or the slider was deleted.