পশ্চিম মেদিনীপুর৮ মার্চ:- “যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে” এই আপ্তবাক্যটির বাস্তব রূপে দেখা গেল পশ্চিম মেদিনীপুরে বেলদার এক গৃহবধু প্রতিভা জানার ক্ষেত্রে ।শুধু নামেই প্রতিভা রয়েছে তা নয় ।বাস্তবেও তার প্রতিভা বিচ্ছুরিত এলাকায় ।বহু সংগ্রাম করে বর্তমানে তিনি নিজে স্বনির্ভর । তবে শুধু নিজের স্বনির্ভর হলে চলবে না এলাকার মেয়েদের স্বনির্ভর করে তুলতে হবে ।এই চিন্তা ভাবনা নিয়ে নিজে স্বনির্ভর হয়ে বাঁচার সঙ্গে এলাকার মেয়েদেরকে স্বাবলম্বী করার জন্য স্বনির্ভর হয়ে বাঁচতে শিখিয়েছেন তিনি ।এই স্বনির্ভর হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমদিকে প্রচুর সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে ।কিছু একটা করতে হবে এই ভেবে এলাকার ৮ থেকে ১০ জন গৃহবধূ ও মেয়েদের নিয়ে একটি গ্রুপ গঠন করেন ।আমাদের অব্যবহার্য ফেলে দেওয়া জিনিস সেই সঙ্গে পাট ,লাইলন দড়ি ,প্লাস্টিকের বোতল যাবতীয় জিনিস দিয়ে দৈনন্দিন বহু ব্যবহার্য দ্রব্য তৈরি করেন তারা ।সেগুলো বাজারে বিক্রি করে মুনাফা লাভ করতে থাকেন ।
তারপর বিভিন্ন জায়গায় নিজ খরচে টেলারিং, বিউটিশিয়ান ,টেডি পুতুল তৈরি সহ বিভিন্ন কোর্স করেন তারা ।এরপরে শুরু হয় আসল রোজগারের রাস্তা । তাদের কাজে উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে আসে এলাকার অন্যান্য গৃহবধূ ও মেয়েরা।নিজেরা ওই কোর্সগুলি শেখার পর এলাকার মেয়েদেরকে শেখান । বাদাম, ছোলা ,গম ও চিনি ও অন্নান পুষ্টিকর খাবার দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করেন একটি লাড্ডু ।যার নাম পৌষ্টিক লাড্ডু ।এই লাড্ডু পুষ্টিগুণ ভালো ,এগুলি বাচ্চারা খেতে ভালবাসে এবং ওদের দেওয়া যাবে । তাই সরকারিভাবে যাতে এগুলি বিভিন্ন শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে দেওয়া যায় এর জন্য তারা যোগাযোগ করেন সরকারি দপ্তরে ।এখন বর্তমান বিভিন্ন শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে এই পৌষ্টিক লাড্ডু দেওয়া হয়ে থাকে ছোট ছোট বাচ্চাদের । এরপরে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেতে শুরু করেন তারা । ৮ থেকে ১০ জন মেয়েকে দিয়ে শুরু করা ১টি গ্রুপ থেকে ।বর্তমানে প্রায় ২০০ টি গ্রুপ তৈরি হয়েছে এলাকায় ।প্রত্যেকটি গ্রুপে ১০ থেকে ১২ জন করে রয়েছে ।বর্তমানে এই গ্রুপ গুলি থেকে কুড়িজন করে সরকারিভাবে বিনা খরজে মাশরুম চাষ ,বিউটিশিয়ান, টেলারিং,টেডি বিয়ার তৈরি ,পশুপালন ,আমাদের অব্যবহার্য দ্রব্যাদি থেকে সৃজনাত্মক ও উৎপাদনাত্মক দ্রব্যাদি তৈরি ইত্যাদি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ও অনেকে নিচ্ছে । এগুলির সঙ্গে এবার নতুন করে আবার সংযোজিত হতে যাচ্ছে ঘরোয়া পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ ।এর জন্য ইতিমধ্যে যারা এই চাষ করতে ও প্রশিক্ষণ নিতে চান তাদের দল গঠন করা চলছে ।নিজে ঘর সামলানোর পাশাপাশি নিজেকে স্বনির্ভর করে তুলেছেন। এবং এলাকার অন্যান্য গৃহবধূ ও মেয়েরা স্বনির্ভর হতে শিখেছে । আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রতিভা জানার বক্তব্য -“বর্তমান মেয়েরা আর কোনো অংশে পিছিয়ে নেই ।তবে মেয়েদেরকে যতটা স্বাধীন বলে আমরা বলি ততটা স্বাধীন নয় ।তাই তার স্বাধীনতা এবং সম্মান পেতে অর্থ রোজগারের প্রয়োজন ।কারণ অর্থ ছাড়া আজকের দিনে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারে না ।তাই প্রত্যেকটি মেয়ে যাতে স্বাবলম্বী হয় এবং নিজেদের অধিকার নিজেদের রোজগার নিজেরা বুঝে নিতে পারে সেটাই আমার লক্ষ্য ।”