এই মুহূর্তে জেলা

বাজেট পেশ হাওড়া পুরসভায়।


হাওড়া, ২০ মার্চ:- ২০২৩-২০২৪ আর্থিক বছরের বাজেট পেশ হলো হাওড়া পুরসভায়। এবার মোট ৩৩৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে। গত বছরের মতোই পরিকল্পনা অনুসরণ করে এবার বাজেট তৈরি করা হয়েছে বলে হাওড়ার পুর প্রশাসক ডা: সুজয় চক্রবর্তী এদিন জানান। তিনি বলেন, গত বাজেটে উন্নয়ন খাতে খরচ ধরা হয়েছিল ১৩৯ কোটি টাকা। এবছরের বাজেটে সেটা বেড়ে ১৬৮ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। উন্নয়ন খাতেই এটা খরচ হবে। এছাড়াও আয় বাড়াতে বিশেষ লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। গত বাজেটে ৭০ কোটি টাকার মতো আয় টার্গেট করা হয়েছিল। ওই টাকা পুরসভার আয় হয়েছিল। এবার সেটা বাড়িয়ে ১০০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। প্রপার্টি ট্যাক্স সহ বিভিন্ন খাতে এই আয় হবে বলে টার্গেট ধরা হয়েছে। এছাড়াও পুরসভার অন্তর্গত সাতটি বরোকে গত বছর যেখানে মোট ১৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল এবারে তা বাড়িয়ে ২০.৪২ লক্ষ টাকা ফান্ড দেওয়া হবে। বরোগুলোকে দেওয়া এই ফান্ডের মধ্যে ১৪ কোটি টাকা রাস্তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এক কোটি টাকা বিভিন্ন সিভিল ওয়ার্ক এর জন্য রাখা হয়েছে। এছাড়াও পাঁচ কোটি টাকা ইলেকট্রিক্যাল খাতে ব্যয় করা হবে। এছাড়াও প্রতিটি বরোকে ছয় লক্ষ টাকা করে ফান্ড দেওয়া হবে গ্রীন এরিয়া ডেভেলপমেন্ট এর জন্য।

যেখানে সেই বরোই ঠিক করবে কোন পার্ক তারা ডেভেলপমেন্টের কাজ করবে। সেই টাকায় পার্কের সৌন্দর্য্যায়ণ হবে। সুজয়বাবু জানান, ইউডিএমএ থেকে প্রচুর টাকা তারা পেয়েছেন। এছাড়াও তাদের ফান্ড ১৭ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে এবার তিরিশ কোটি টাকা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ থেকে ৫০ নম্বর ওয়ার্ড অর্থাৎ অ্যাডেড এরিয়ার জন্য জন্য ৮ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এবং বাকি ওয়ার্ডগুলোর জন্য ২২ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে। এবার কনজারভেন্সি বিভাগে বাজেট ধরা হয়েছে চল্লিশ কোটি টাকা। এর মধ্যে হাউস হোল্ড সেগ্রিগেশন এর কাজ ছাড়াও ট্রিপার ট্রাক কেনা হবে। ১৫টি ছোট এবং ১০টির মতো বড়ো ট্রিপার ট্রাক কেনা হবে পুরসভার তরফ থেকে। এছাড়াও কনজারভেন্সি ডিপার্টমেন্টের ফান্ড থেকে এবার এক বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শহরের রাস্তায় পুলিশের যেমন কিয়স্ক দেখা যায় অনেকটা তেমনই হাওড়ায় পুরসভার উদ্যোগে প্রায় পঞ্চাশটির মতো নতুন কিয়স্ক তৈরি করা হবে। যেখানে পুরসভার কর্মীরাই কয়েক ঘন্টা ডিউটি দেবেন সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দিতে।

অনেক সময় সাধারণ মানুষ তাদের বিভিন্ন অভাব অভিযোগের কথা জানাতে চিঠি নিয়ে পুরসভায় আসেন। অনেক ক্ষেত্রে তাদের পুরসভায় আসতে বা বরো অফিসে আসতে দূরত্বের কারণে সমস্যা হয়। সেই সমস্যায় যাতে আর কেউ না পড়েন তার জন্যই আগামী দিন এই কিয়স্কগুলি কাজ করবে। যেখানে মানুষ গিয়ে বিভিন্ন অভাব অভিযোগের কথা জানিয়ে চিঠি দিতে পারবেন এবং তারা বিভিন্ন ইনফরমেশন এখান থেকে জানতে পারবেন। এই পরিকল্পনা সম্ভবত হাওড়া পুরসভাই প্রথম করছে। এছাড়াও এবারের বাজেটে ড্রেনেজ খাতে গত বছরের ১২ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ কোটি টাকা বাজেটে ধরা হয়েছে। উন্মুক্ত ড্রেন ধীরে ধীরে কভার করা হবে। অনেক সময় দেখা যায় বহুতলের মাঝে ড্রেন সাফাই করতে সমস্যা হয়। তাই এবারে সেই সমস্ত ড্রেনগুলি স্ল্যাব দিয়ে কভার করা হবে। এবং সেখানে সপ্তাহে একদিন বা কয়েকদিন অন্তর সেই স্ল্যাব সরিয়ে ড্রেনগুলি পরিষ্কার করা যাবে। পার্কস এবং গার্ডেনের জন্য এবার ছয় লক্ষ টাকা বাজেটে ধরা হয়েছে। শরৎ সদনের সামনে মেট্রো রেলের যে প্রজেক্ট হচ্ছে সেই এলাকায় গ্রিন স্পেস ডেভেলপমেন্টে সেখানে পুরসভার তরফ থেকে হ্যাঙ্গিং গার্ডেন উইথ ফাউন্টেন করা হবে।

ইতিমধ্যেই সেই ডেভেলপমেন্ট এর কাজের জন্য ভিজিট করা হয়েছে। তবে এবারে বাজেটে কোনও কর বৃদ্ধির ঘোষণা করা হয়নি। এদিন সুজয়বাবু আরও জানান, এতদিন হাওড়ায় জেলা সরকারি হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্ক ছিল। এবার আমরা হাওড়া পুরসভার উদ্যোগে রোটারি ইন্টারন্যাশনালের আর্থিক সহায়তায় একটি ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরি করতে চলেছি। রোটারি ইন্টারন্যাশনাল পুরো ফান্ড দেবেন। প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা এই খাতে খরচ হবে। এছাড়াও হাওড়ার পঞ্চাননতলায় থ্যালাসেমিয়া হাসপাতালের ডেভেলপমেন্ট এর কাজ রোটারি ইন্টারন্যাশনাল করবে। পঞ্চাননতলায় পুরসভার যে বরো অফিস আছে সেই বরো অফিসের সিক্সথ ফ্লোরে এই ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরি হবে। জায়গা আমরা দিচ্ছি। তৈরি করবে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল। এটি তৈরি হলে সাধারণ মানুষকে রক্তের জন্য আর সব জায়গায় ছুটতে হবে না। এটা পুরসভা সিএসআর প্রজেক্টে করছে। প্রজেক্ট তৈরি হলে তখন কি কি ফেসিলিটি পাওয়া যাবে সেটা জানানো হবে। তবে যেহেতু এটা পুরসভার উদ্যোগে হচ্ছে তাই এটা ব্যবসার জায়গা হবেনা বলেই সুজয়বাবু দাবি করেছেন।