এই মুহূর্তে জেলা

দলিলে থাকা আঙুলের ছাপ চুরি করে ব্যাঙ্ক প্রতারনা, উত্তরপ্রদেশের হ্যাকার গ্যাং পুলিশের জালে চুঁচুড়ায়!

সুদীপ দাস, ১৩ ফেব্রুয়ারি:- কেঁচো খুঁড়তে কেউটে! অস্বাভাবিক আচরনে সন্দেহ হয়েছিল এলাকাবাসীর। সেইমত স্থানীয়রাই খবর দিয়েছিলো থানায়। পুলিশ গিয়ে হানা দিতেই বেড়িয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। ধরা পরলো সাইবার ক্রাইমে জড়িত থাকা উত্তরপ্রদেশের চার ব্যাক্তি। ঘটনাটি চুঁচুড়া থানার ব্যান্ডেলের সাইনবোর্ড এলাকার। ধৃত চারজনকে রবিবার চুঁচুড়ার বিশেষ আদালতে তোলা হলে মহামান্য আদালত সকলকেই ১২দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। ধৃত চারজনের নাম প্রদীপ সাহানী, সদানন্দ শ্রীবাস্তব ওরফে মনু, মনোজ কুমার এবং শীবম গুপ্ত। ধৃতদের বয়স ২৮ থেকে ৪২এর মধ্যে। এদের মধ্যে দুজন অনলাইনে আধার কার্ড তৈরীর কাজ করতেন। পুলিশের অনুমান সেখান থেকেই সাইবার ক্রাইমের দিকে ঝোঁকা শুরু করে তারা। যদিও ঘটনায় হতবাক সাইনবোর্ড এলাকার মানুষ। তাঁদের বক্তব্য ওই এলাকায় এভাবে এসে কেউ আস্তানা গাড়বে তা তাঁরা বুঝতেই পারেনি।

এবিষয়ে চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অর্নব ঘোষ সাংবাদিক বৈঠক করে জানান ধৃতরা দিনকয়েক আগে সাইনবোর্ড এলাকার একটি একতলা বাড়ি মাসিক ৬হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়া নিয়েছিলো। ধৃতরা বাড়ি থেকে শুধু কোন না কোন এটিএম ছাড়া যাতায়াত করতো না। হিন্দিভাষী ওই চারজনের আচরনে সন্দেহ হওয়ায় খবর দেওয়া হয় পুলিশে। চুঁচুড়া থানার পুলিশ ওই বাড়িতে হানা দিয়ে ধৃতদের পাকড়াও করে। তাদের কাছ থেকে বহু সিমকার্ড, ফিঙ্গার প্রিন্ট নকল করার যন্ত্র, নগদ ৪লক্ষ টাকা বেশী উদ্ধার হয়। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারে তারা সকলেই উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর ও কৃষিনগর জেলার বাসিন্দা। উত্তরপ্রদেশের বহু মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে বহু টাকা উঠিয়ে নিয়েছে তারা।

পুলিশ কমিশনার বলেন ধৃতরা উত্তরপ্রদেশের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের পাবলিক ডোমেন ওয়েবসাইট থেকে সাধারনের দলিলে থাকা আঙুলের ছাপ চুরি করতো। দীর্ঘদিন লেনদেন বন্ধ থাকা বিভিন্ন ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থাকা গ্রহীতাদের তালিকা তাঁদের কাছে আগে থেকেই ছিলো। সেটা কিভাবে ছিলো তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। এরপর নিজেদের কাছে থাকা ফিঙ্গার প্রিন্ট নকল করার যন্ত্রে দলিলের ফিঙ্গার প্রিন্ট ফেলে হুবহু অ্যাকাউন্ট গ্রহীতার ফিঙ্গার প্রিন্ট তৈরী করতো। এরপরই কেল্লাফতে। অ্যাকাউন্ট গ্রহীতার ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যাবহার করে অনলাইন ব্যাঙ্কিয়ের ওয়েবসাইটে ঢুকে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করে নিজেদের কাছে থাকা নামেবেনামের সিম নাম্বার বসিয়ে দিতো। সেখান থেকেই অতি সহজে অ্যাকাউন্ট গ্রহীতার টাকা নিজেদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে রাতারাতি এটিএম থেকে তুলে নিতো। ধৃতদের জেরা করে চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের। কারন ফিঙ্গার প্রিন্টের উপর নকল ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যাবহার করা গেলে বহুক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরী হবে। পুলিশের অনুমান ধৃতরা একটি জায়গায় বেশীদিন না থাকায় উত্তরপ্রদেশ পুলিশের জালে তাঁরা ধরা পরছিলো না। বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ সমগ্র বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।