এই মুহূর্তে জেলা

সেবিকার পৈশাচিক আচরনে পঙ্গু বৃদ্ধা , রক্ষকই ভক্ষক চুঁচুড়ার শিবতলায় !

সুদীপ দাস , ৯ মার্চ:- ইচ্ছে ছিলো মায়ের শেষ জীবনটায় সঙ্গ দেওয়া। তাই চুঁচুড়ায় নতুন ফ্ল্যাট কিনে মাকে নিয়ে চলে আসেন পেশায় স্কুল শিক্ষিকা অনিমা কোলে ঘোষ। চুঁচুড়ার শিবতলার একটি ফ্ল্যাটে গতবছর শেষের দিক থেকে তিনি থাকতে শুরু করেন। পাশেই অনিমাদেবীর স্কুল হওয়ার যাতায়াতের সুবিধাও হয়। যদিও অনিমাদেবীর ব্যাবসায়ী স্বামী দিলীপ ঘোষ কাজের সুবিধায় মগরায় পুরনো বাড়িতেই রয়েছেন। শাশুড়ি মায়ের দেখভালের জন্য দিলীপবাবুই মগরার ত্রিবেনী এলাকার বাসিন্দা মিঠু নামক এক আয়ার সন্ধান পান। এরপর থেকে মিঠুই প্রতিদিন ত্রিবেনী থেকে এসে অনিমাদেবীর মা দিপ্তী কোলে(৮০)-এর দেখাশোনা করতেন। অনিমার স্কুল ছুটি হওয়ার পর বাড়ি ফিরে এলে মিঠু বাড়ি চলে যেতেন। অনিমার বক্তব্য মা ঘড়ের মধ্যে নিজে পায়ে হেঁটেই বাথরুমে যেতে পারতেন। কিন্তু গত ১৬ই জানুয়ারির পর হয় ছন্দপতন। সেদিন অনিমাদেবী বাড়িতে আসার পরই চলে যায় মিঠু। কিন্তু দিপ্তীদেবি কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। হাঁটা তো দূরের কথা। বিছানায় পাশ ফিরে শোয়ার ক্ষমতাও হারান। সেদিন থেকেই দিপ্তীদেবী ডান পা সোজা করতেও পারেন না। মা হঠাৎই এরকমভাবে শারিরীক ক্ষমতা হারানোয় মিঠুর উপর সন্দেহ হয় অনিমার। তারপর দিন থেকে মিঠু কাজে আসা বন্ধ করে দেয়।

সেদিন থেকে মিঠু অনিমার ফোন ধরাও বন্ধ করে দেয়। অনিমা দেখতে পায় তাঁর মায়ের পা সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষতচিহ্ন। ডান পায়ের হাঁটুতে রক্তজমাট বেঁধেছে। বর্তমানে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি করা হলেও দিপ্তীদেবী কোনদিন হাঁটতে পারবেন কি না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। একা পেয়ে মায়ের উপরে যে পৈশাচিক অত্যাচার নেমে এসেছে এবং তা যে করেছে মিঠু সেটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি অনিমাদেবীর। এরপরই অনিমা চুঁচুড়া থানায় এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানান। কিন্তু অভিযোগ তারপর থেকে পুলিশ কোন ব্যাবস্থা নেয়নি। বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার অনিমাদেবী এক আইনজীবির সাহায্য নিয়ে চুঁচুড়া থানায় অভিযুক্ত আয়া মিঠুর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন। এদিনই শিবতলার পুলিশ ফ্ল্যাটে এসে তদন্ত করা শুরু করেন। অনিমাদেবী বলেন ভেবেছিলাম বৃদ্ধা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে না পাঠিয়ে নিজের কাছেই রাখবো। আমি স্কুলে গেলে অসুস্থ মা বাড়িতে একা থাকবেন। তাই মায়ের সেবার জন্য একজন আয়া রেখেছিলাম। কিন্তু সেই সেবিকাই এত পৈশাচিকভাবে মায়ের সেবা করবে ভাবতে পারিনি। এখন ভাবছি মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখলেই হয়তো ভালো হতো। কিন্তু এখন আর অন্য আয়াদের ভরসা করতে পারবেন? এ প্রশ্নের উত্তরে অশ্রুসজল চোখে অনিমাদেবীর বক্তব্য জানি না, তবে আয়া রাখলেও ঘরে সিসিটিভি অবশ্যই লাগাতে হবে!