এই মুহূর্তে জেলা

৬ বছরের সন্তানকে সামলে মাধ্যমিকের অমৃতলাভ পাণ্ডুয়ার অমৃতার।


সুদীপ দাস , ২২ জুলাই:- ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো , আর ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় , এই কথাগুলি যে বাস্তব সত্য তা প্রমাণ করেছে ভিটাসিন গ্রামের অমৃতা । মাধ্যমিক পরীক্ষার পরীক্ষার্থী হয়তো সকলের অগোচরে রয়ে গেছে সে , কিন্তু আমাদের কাছে অমৃতাই এবার প্রথম হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে । শুধু স্বপ্ন দেখা নয় ,স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করে দেখিয়েছে অমৃতা । তাই সফল পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এবছর অমৃতাই শ্রেষ্ঠ নারী। গতকালই মাধ্যমিকের রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে, প্রকাশিত হয়েছে মেধা তালিকা।সেখানে হয়তো অমৃতা সানার নাম নেই , কিন্তু হুগলী জেলার পাণ্ডুয়া ব্লকের ভিটাসিন বালিকা বিদ্যালয় থেকে , ভিটাসিন তালবোনা কলোনির এক হতদরিদ্র পরিবারের গৃহবধূ ৩৪ বছরের অমৃতা সানা ,৩৭৬ পেয়ে অবাক করে দিয়েছে এলাকার সমস্ত মানুষজনকে। সাধারণত দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের জীবন বড় করুন। পরিবার তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে কোনো সময়ই গুরুত্ব দেয়না। তাই অমৃতা যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে , তখন তারা পড়ার ইচ্ছাকে কোনো রকম গুরুত্ব না দিয়ে তার বাবা মা বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল অল্প বয়সেই ।

এরপর সাধারণ সমাজে যা হয়ে থাকে , হারিয়ে যায় সমস্ত স্বপ্ন , সংসারের দাসত্ব করতে করতেই কেটে যায় জীবন। আর এখান থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিল অমৃতা। সে জানিয়েছিল তার স্বামীকে তার পড়ার ইচ্ছার কথা , স্বামীও তার সেই ইচ্ছাকে পূরণ করার জন্য এক কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু প্রতিবন্দকতা এসে দাঁড়ায় অমৃতার মাতৃত্ব। ইচ্ছা থাকলেও পিছিয়ে পড়তে হয় ছোট্ট সন্তানকে বড় করার লড়াইয়ে । আজ সন্তানের বয়স ৮ বছর সে দেখল তার মা,একই সঙ্গে তার সঙ্গে স্কুলে গেছে,তার সঙ্গেই করেছে পড়াশোনা।আর সাফল্য এলো মাধ্যমিকের রেজাল্ট বের হওয়ার পর।ভাঙা ঘরে সেও স্বপ্ন দেখে মায়ের মতোই,ইচ্ছা একদিন বিজ্ঞানী হওয়ার।আর তার মা ও হবে উচ্চ শিক্ষিত । স্ত্রীর এই সাফল্যে যেমন খুশি তার স্বামী , সেও যেমন চায় অমৃতা যেন নারী জগতের প্রতীক হয়ে উঠুক। দলছুটরা, সে যে বয়সেরই হোক না কেন,আবার ফিরে যাক স্কুলে।

ইচ্ছা থাকলেই যে উপায় হয় , সেটা প্রমান করুক পিছিয়ে পড়া সব অমৃতারাই।বৌমার সাফল্যে যিনি দজ্জাল শাশুড়ি হয়ে নয় , স্নেহময়ী মাতা হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন , তিনিও চান এগিয়ে চলুক তার বৌমা । আর অমৃতা , প্রাইভেট টিউশন না নিয়েই,স্কুলের সমস্ত শিক্ষিকারা যারা তাকে অকুন্ঠ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল,তাদের সেই চেষ্টার সফল প্রয়াস দেখিয়ে খুশি অমৃতাও।সেও চায় এরপরের ধাপগুলিও এগিয়ে যেতে , কারণ ৩৭৬ টাই তার আগামী পথ চলাতে যোগাবে মনোবল । তবে অমৃতার এই অদম্য ইচ্ছার , রেজিস্ট্রেশনে বাধ সেধেছিলো শিক্ষা দফতর ,সেই বিষয়টিও যাতে আগামীদিনে উন্মুক্ত থাকে , বয়স যেন মাপকাঠি না হয় শিক্ষার দুয়ারে , এটাই অমৃতার আর্জি । কারণ , এই রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার জন্য স্কুলের সমস্ত শিক্ষিকা থেকে অমৃতা পর্যন্ত, সকলেই শিক্ষা দফতরে গিয়ে অনুনয় বিনয় করেই সেই অধিকার পেয়েছিল । এটা বড় লজ্জার।