হুগলি, ১৫ ফেব্রুয়ারি:- সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ও হোয়াটস অ্যাপে নদীয়ার রানাঘাটের দাস পাড়ার বাসিন্দা একরত্তি অস্মিকা দাসের জটিল অসুখের জন্য প্রায় ১৭ কোটি খরচের খবর ভাইরাল হয়েছে। রাজনীতি ও দলমতের উর্দ্ধে উঠে খুদে অস্মিকার পাশে দাঁড়াল বৈদ্যবাটি পুরসভার ২৩ জন কাউন্সিলর। পুরপ্রধান, উপপুরপ্রধান ছাড়াও ১৯ জন তৃণমূল কাউন্সিলর এবং বিরোধী ফরয়ার্ড ব্লক ও কংগ্রেস সিপিএমের কাউন্সিলরেরা শিশুর চিকিৎসার জন্য জোটবদ্ধ হয়ে নজির গড়েছেন। শুক্রবার বৈদ্যবাটি পুরসভার পুরপ্রধান পিন্টু মাহাতো ও উপপুরপ্রধান শান্তনু কুমার দত্তের নেতৃত্বে ফরয়ার্ড ব্লকের রত্না দত্ত, কংগ্রেসের কবিতা ঘোষ, বিশ্বজিৎ সিংহ, তৃণমূলের মহুয়া ভট্টাচার্য, সমর বাগচীরা নদীয়ার রানাঘাটের দাস পাড়ায় অস্মিকার বাড়িতে যান। সেখানে অস্মিকার বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলার সময় চিকিৎসার নথিপত্র ও প্রয়োজনীয় খরচের কথা বিবেচনা করে ৬ লক্ষ টাকা অনুদান হিসেবে তুলে দেন। মেয়ের চিকিৎসার খরচ যোগাতে বৈদ্যবাটি পুরসভার এই উদ্যোগ কে কুর্নিশ জানিয়েছে দিন আনা দিন খাওয়া শিশুর পরিবার। বৈদ্যবাটি পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে শিশু কন্যা অস্মিকা বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।
বাবা শুভঙ্কর দাস একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। কিন্তু মেয়ের চিকিৎসা ও চিকিৎসার খরচ যোগাতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। তাতেই কোপ পরে চাকরিতে। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও সংবাদমাধ্যমে সেই খবর জানতে পারেন বৈদ্যবাটির পুরপ্রশাসকেরা। প্রাথমিক আলোচনার পর জানুয়ারি মাসে বোর্ড অফ কাউন্সিলর দের বৈঠকে ২৩ জন কাউন্সিলর সিদ্ধান্ত নেন তাদের এক মাসের ভাতা অস্মিকা দাসের চিকিৎসার জন্য দেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর পুরপ্রধানের ২০ হাজার, উপপুরপ্রধানের ১৫ হাজার, পুরপারিষদ সদস্যের ১২ হাজার ও কাউন্সিলরদের মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাতা মিলিয়ে মোট ২ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়।তারপর জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে সামিল হন কিছু ব্যববসায়ী ও চাকরিজীবী হিতাকাঙ্ক্ষীরা। সকলের মিলিত অনুদান একত্রিত করে মোট ৬ লক্ষ টাকা এ দিন পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।ফরয়ার্ড ব্লকের কাউন্সিলর রত্না দাস বলেন, পুরপ্রতিনিধিদের ভোটে লড়াই করে নির্বাচিত হতে হয়।
তাই রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত ফারাক থাকে। কিন্তু পুরপ্রধান যখন অস্মিকার পরিবার কে সহযোগিতা প্রস্তাব দিতেই আমরা স্বাগত জানিয়েছি। দলমতের বাইরে বেরিয়ে সবাই মিলে শিশুর পাশে দাঁড়াতে পেরে খুব ভালো লাগছে। কংগ্রসের কাউন্সিলর কবিতা ঘোষ বলেন, রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়। মানবিকতা এক জায়গায়। তাই মানবিক আবেদনেই সাড়া দিয়ে হুগলির বৈদ্যবাটি থেকে নদীয়ার রানাঘাট এসেছি।পুরপ্রধান পিন্টু মাহাতো যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাকে সাধুবাদ জানাই। এ বিষয়ে পুরপ্রধান পিন্টু মাহাতো বলেন, আমরা শুধু বলতে চাই আমাদের রাজ্যে ১২৮ টি পুরসভা ও যে কয়টি পুরনিগম আছে। সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা যদি আমাদের মতো এগিয়ে আসেন তাহলে অস্মিকার চিকিৎসার খরচের পথ কিন্তু অনেকটাই সহজ হবে। শিশু দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠবে। বৈদ্যবাটি পুরসভার উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন স্থানীয় চাঁপদানীর বিধায়ক অরিন্দম গুঁই। তিনি বলেন, আমার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দলীয় কর্মসূচির কারণে যেতে পারিনি। তবে সমস্ত কাউন্সিলরেরা একজোট হয়ে যেভাবে অস্মিকা ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সেটা তারিফ যোগ্য।