কলকাতা, ৫ জুলাই:- রাজ্যপালের ঠিক করে দেওয়া প্রতিনিধি নয়, অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে শপথ বাক্য পাঠ করেই রাজ্য বিধানসভার সদস্য হলেন সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে জয়ী দুই তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রেয়াত হোসেন সরকার। বৃহস্পতিবারই বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন বসে। সেখানেই অধ্যক্ষ তাঁদের শপথ বাক্য পাঠ করান। তাঁর আগে শপথ নিয়ে রাজভবনের সঙ্গে তাঁর ও ওই নতুন বিধায়কদের চিঠি চালাচালির দীর্ঘ পর্ব বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করেন। অধ্যক্ষ জানান, বিধানসভার রুলস অফ বিজনেসের ২ নম্বর অধ্যায়ের ৫ নম্বর ধারা মেনে তাঁদের শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়েছে। তিনি বলেন নবনির্বাচিত দুই বিধায়ক শপথ না নিতে পারায় নিজেদের এলাকায় কাজ করতে পারছেন না। সাধারণ মানুষ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সেকারণেই শপথ নিয়ে এই তৎপরতা।
শুক্রবার সেই অধিবেশনের আগে কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে দুই বিধায়কের শপথ গ্রহণ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তাতেই প্রথমে ঠিক হয়েছিল ডেপুটি স্পিকার ওই দুজনকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে সেই পরিকল্পনা বদলে যায়। আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে স্পিকারের উপস্থিতিতে এই দায়িত্ব তিনি পালন করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, ‘অধ্যক্ষ থাকতে আমি শপথ বাক্য পাঠ করাতে পারি না। আমি এই অসৌজন্যতা দেখাতে পারবো না। আমার অনুরোধ অধ্যক্ষ আপনি এই দায়িত্ব পালন করুন।’ এরপরে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় শপথ পাঠ করান। এদিন দুপুর ২ টো ২৪ মিনিটে বিধানসভার দুই সদস্যকে শপথ বাক্য পাঠ করানো শুরু হয়। প্রথমে শপথ গ্রহণ করেন ভগবানগোলা বিধানসভা উপনির্বাচনে জয়ী হওয়া প্রার্থী রেয়াত হোসেন। তারপরে বরাহনগরের উপ নির্বাচনে জয়ী হওয়া সায়ন্তিকা শপথ গ্রহণ করেন। শপথ বাক্য পাঠ করানোর পরে জয় বাংলা ধ্বনিতে স্বাগত জানানো হয় দুই বিধায়ককে। তবে এদিন শপথ বাক্য পাঠ করানো নিয়েও আবার নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রাজ্যপাল যেহেতু ডেপুটি স্পিকারকে এরজন্য নিয়োগ করেছেন সেখানে স্পিকার কি দায়িত্ব পালন করতে পারেন? তাই নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। যদিও তার উত্তর নিজেই দিয়েছেন বিমান। তিনি জানিয়েছেন, যেহেতু বিধানসভা অধিবেশন চালু আছে তাই রাজ্যপালের চিঠির মান্যতা পাবে না।
এদিকে, শুক্রবারের বিশেষ অধিবেশনে বিজেপির কোনও বিধায়ক যে উপস্থিত থাকবেন না তা আগেই আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। সেই মতোই এদিন কোনও বিজেপি বিধায়ককে দেখা যায়নি। তবে তৃণমূলের অধিকাংশ বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন। এর আগে জুন মালিয়া ছিলেন বিধায়ক এখন তিনি সাংসদ হয়েছেন। এদিকে শপথ গ্রহণের পর সায়ন্তিকাকে জুনের জায়গায় বসতে দেওয়া হয়।এদিকে আজ বিধানসভায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অসাংবিধানিক বলে দাবি করে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ দুই তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ককে যে পদ্ধতিতে শপথ পাঠ করানো হয়েছে তাতে সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন৷ যদিও অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্যপালের তরফ থেকে জানানোর আগে তার তরফ থেকে বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে জানানো হয়েছে। কাজেই তিনি রাজ্যপালের চিঠিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ।