এই মুহূর্তে কলকাতা

পাঁচ দফার তুলনায় রাজ্যের ষষ্ঠ দফার ভোট ঘটনাবহুল, চোর স্লোগান অভিজিৎ গাঙ্গুলীকে।

কলকাতা, ২৫ মে:- রাজ্যের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির অবিরাম তাল ঠোকাঠুকি। অন্যদিকে আকাশে ক্রমশ ঘনীয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়ের ভ্রূকুটি। এরই মধ্যে মোটের উপর ভালোয় ভালোয় শেষ হল ষষ্ঠ দফার ভোট পর্ব। তবে প্রথম পাঁচ দফার তুলনায় রাজ্যের ষষ্ঠ দফার ভোট ঘটনাবহুল। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বিষ্ণুপুর বাদে বাকি সব কটি কেন্দ্রেই এদিন অশান্তির খবর সামনে এসেছে। গড়বেতায় হামলার মুখে পড়েন ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডু। এছাড়াও তমলুক, ঘাটাল, মেদিনীপুরে সকাল থেকেই বিক্ষিপ্তভাবে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সকাল থেকেই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে। কমিশন সূত্রের খবর, বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বাংলায় গড় ভোটের হার ৭৭.৯৯ শতাংশ। ফলে সর্বশেষ ভোটের হার আরও কয়েক শতাংশ বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলার যে আটটি কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হয়েছে সেগুলি হল তমলুক, কাঁথি, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর। কমিশনের প্রকাশিত ভোটের হারে শীর্ষে রয়েছে বিষ্ণুপুর। সেখানে ভোটের হার ৮১.৪৭ শতাংশ। যুগ্মভাবে ভোটের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তমলুক ও ঝাড়গ্রাম। দুটি এলাকাতেই বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত প্রদত্ত ভোটের হার যথাক্রমে ৭৯.৭৯ ও ৭৯.৬৮।

পূর্ব মেদিনীপুরের দুই লোকসভা কেন্দ্র তমলুক ও কাঁথির ভোট ছিল এদিন। কাঁথির ভোট দিনভর প্রায় ঘটনাবিহীন হলেও, তমলুক থেকে লাগাতার ছোটখাটো অশান্তির খবর মিলেছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির নিরিখে নন্দীগ্রামের ভোটের দিকে বাড়তি নজর ছিল নির্বাচন কমিশনের। তবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে সেখানে ভোট মিটেছে প্রায় নির্বিঘ্নে। যদিও নন্দীগ্রামের গড় চক্রবেড়িয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ভোটারদের মারধোর করার অভিযোগ কে ঘিরে কিছুক্ষণ প্রবল উত্তেজনা ছড়ায়। নন্দীগ্রামে ভোট শুরুর আগে পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিজেপি সমর্থকদের গ্রেফতার করছে বলে অভিযোগ তোলেন তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ময়নার বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দার আপ্ত সহায়কের বাড়িতে পুলিশি তল্লাশির প্রতিবাদে সেখানে গিয়ে ধর্নায় বসেন তমলুকের বিজেপি প্রার্থী য়। তাঁর অভিযোগ, ময়না পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা গৌতম গুরু নিখোঁজ রয়েছেন নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের ২ এজেন্টকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। এদিকে মহিষাদলে গতকাল রাতে তৃণমূল নেতা খুন হওয়ার ঘটনার পর থেকে ওই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। নতুন করে কোন অশান্তির ঘটনা না ঘটলেও পরিস্থিতি থমথমে ছিল। এলাকায় মোতায়ন রয়েছে পুলিশ ও আধা সেনার বিরাট বাহিনী। তাদের পড়া নজরদারির মধ্য দিয়ে মহিষাদলের ভোটগ্রহণ চলে। ভোটের শেষ বেলায়হলদিয়ার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের গান্ধীনগর কলোনিতে আক্রান্ত বিজেপি নেতা বাবুলাল মণ্ডল।

বিক্ষোভ-গো ব্যাক স্লোগান- হাড় ভাঙার ‘হুঁশিয়ারি’-ধরনা, শনিতে দিনভর চর্চায় রইলেন তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ভোটের সকালে উত্তপ্ত হয় কেশপুর। ঘাটাল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অভিনেতা হিরণ চ্যাটার্জির গাড়ির সামনে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। রাস্তার উপরে অগ্নিসংযোগ করে চন্দ্রকোনা মেদিনীপুর রাজ্য সড়কে হিরণকে আটকানোর চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। এই হামলার নেতৃত্ব দেন কেশপুর ব্লকের ৫ নম্বর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি শেখ হাসানুর জামান। এর আগে কেশপুরে তার গাড়ি বহরকে আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে। এরপর পুলিশের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ তোলেন হিরণ। আবার কোথাও কেশপুরেই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় হিরণকে। লাঠি, বাঁশ নিয়ে তার উপর চড়াও হওয়ার পাশাপাশি তার গাড়ি বহর আটকে বিক্ষোভ দেখানো হয় বলে অভিযোগ।তবে ওই কেন্দ্রেরই তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী (দেব) কে দেখা গেল রিফ্রেস মুডে। বাইক নিয়ে বিভিন্ন বুথে পরিদর্শন করতে দেখা যায় দেব’কে। অ্যাকশন মুডে দেখা যায় মেদিনীপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী জুন মালিয়াকে।

একটি বুথের ভিতর গিয়ে বিজেপির বুথ সভাপতির বিরুদ্ধে অভাব্য আচরণ করার অভিযোগ তুলেছেন জুন। ওই বুথের ভেতরে বিজেপির পোলিং এজেন্ট এর সাথে তুমুল বচসায় জড়িয়ে পড়েন জুন মালিয়া। তৃণমূলের লোগো বুকে লাগিয়ে বুথে বুথে ঘুরে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মন্ডলের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে প্রতিবাদ জানায় বিজেপি। যদিও সুজাতার দাবি কোন বিধিভঙ্গ হয়নি। ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডুর ওপর গড়বেতার ফুলকুশমায় হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। প্রার্থীকে মারধর করার পাশাপাশি ভাঙচুর করা হয় তার গাড়িবহর।প্রার্থীকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয় পাথর। প্রার্থীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ। প্রার্থী বলেন ‘প্রায় ১০০ থেকে ২০০ জন ঘিরে ধরে হামলা চালায়, হামলাকারীদের মধ্যে রোহিঙ্গারা রয়েছে। আজ নিরাপত্তারক্ষী না থাকলে বেঁচে ফিরতাম না।’ মেদিনীপুরের কেশিয়াড়িতে বুথের মধ্যে কলকাতা পুলিশের সদস্যকে দেখে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্র পাল। এদিন কান্দামারি আংশিক বুনিয়াদি বিদ্যালয়-এর একটি বুথে বিজেপির পোলিং এজেন্টকে ভয় দেখিয়ে উঠিয়ে দেয়ার অভিযোগের খবর পেয়ে সেখানে আসেন অগ্নিমিত্রা।