এই মুহূর্তে কলকাতা

বড়দিনের আগেই সরকারি কর্মচারীদের জন্য বড় উপহার ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর।

কলকাতা, ২১ ডিসেম্বর:- বড়দিনের আগেই রাজ্যের কয়েক লক্ষ সরকারি কর্মচারিদের জন্য বড় উপহার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার অ্যালেন পার্কে ক্রিসমাস উৎসবের মঞ্চ থেকে তিনি নতুন বছরে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য আরও চার শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করেছেন। ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন থেকেই এই বাড়তি মহার্ঘ ভাতা কার্যকর হবে। আদালতের নির্দেশকে হাতিয়ার করে যখন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ নবান্নের দোরগোড়ায় নতুন করে ধর্না আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই আনন্দে মেতে উঠেছেন সরকারি কর্মচারিরা। কর্মচারি ফেডারেশনের নেতা প্রতাপ নায়েক বাড়তি মহার্ঘ ভাতা ঘোষণার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা জানিয়েছেন। বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পার্ক স্ট্রিটে এদিন ক্রিসমাস উৎসবের উদ্বোধন করতে গিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের জন্য ৪ শতাংশ ডিএ দেওয়ার ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে এটা বাধ্যতামূলক নয়, এটা অপশন। কিন্তু আমাদের কর্মীরা খুব ভালো কাজ করে। তাই ২,৪০০ কোটি টাকা লাগলেও এটা আমরা দেবো। সব মিলিয়ে ১৩৫ শতাংশ ডিএ দিচ্ছি ২০১৯ সাল থেকে।

প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। এই নিয়ে গতকালও আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। টানাটানি থাকা সত্বেও আরও ৪ শতাংশ ডিএ দিচ্ছি। আগামী পয়লা জানুয়ারি থেকে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।’ রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান জানান, সরকারের বিভিন্ন দফতরে কর্মরত কর্মচারিদের পাশাপাশি শিক্ষক- অশিক্ষক কর্মচারি ছাড়াও রাজ্য সরকারের পোষিত সব সংস্থার কর্মীরাই নয়া মহার্ঘ ভাতা পাবেন।’ উল্লেখ্য, চলতি বছরের বাজেট অধিবেশনের সময় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৩ শতাংশ ডিএ-র ঘোষণা করেছিলেন। আর এদিন আরও ৪ শতাংশ ডিএ’র ঘোষণা হলো। যার ফলে মোট ডি.এ বেড়ে হলো ১০শতাংশ। এর ফলে প্রায় ১৪.৫০ লক্ষ সরকারি ও আধাসরকারিকর্মচারী, শিক্ষক ও অশিক্ষককর্মীবৃন্দ এবং পেনশনভোগী উপকৃত হবেন। নবান্নের তরফে জানানো হয়েছে এই ৪ শতাংশ বাড়তি ডি.এ বাবদ রাজ্য সরকারের তহবিল থেকে বছরে অতিরিক্ত ২,৭৫৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

১০ শতাংশ ডি.এ বাবদ রাজ্য সরকারকে বছরে মোট ৬.৮৮৮ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। আন্দোলনকারী কর্মীদের দাবির বিপক্ষেও একাধিক তথ্য পেশ করেছে রাজ্য সরকার। সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে বর্তমান সরকার আসার আগে পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিগত সরকার ২০১১ সাল পর্যন্ত মাত্র ৩৫শতাংশ ডি.এ. দিয়েছিল যার পরিমাণ ছিল ১৩,০০৯ কোটি টাকা। এই সরকার আসার পর পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশকে মান্যতা দিয়ে ধাপে ধাপে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৯০শতাংশ ডি.এ. বরাদ্দ করেছে, যার আর্থিক পরিমাণ ১.৬৬.৮৬৫ কোটি টাকা।. ২০১৯ সালে এই সরকার ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকারী করে রাজ্য সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মচারী এবং পেনশন প্রাপকদের নতুন বেতন ক্রম [পে-স্কেল) চালু করে। এই নতুন বেতন ক্রমে মূল বেতনের [বেসিক পে] সঙ্গে ১২৫শতাংশ ডি.এ. সংযুক্ত করে বেতন ২.৫৭ গুণ বৃদ্ধি করা হয় এবং সেই অনুযায়ী নতুন মূল বেতন ক্রম ধার্য হয়। নতুন পে-কমিশনের সুপারিশ কার্যকরী করতে রাজ্য সরকার গত তিন বছরে ডি.এ. সহ বেতন ও পেনশন বাবদ ২ লক্ষ ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে। নতুন পে-কমিশনের সুপারিশ কার্যকরী হওয়ার পরে এতদিন রাজ্য সরকার ৬শতাংশ ডি.এ ঘোষণা করেছিল, যার জন্য রাজ্য সরকারের তহবিল থেকে বছরে ৪,১৩৩ কোটি টাকা খরচ হচ্ছিল।