এই মুহূর্তে জেলা

বাঙালি মজেছে বিশ্বকাপে, অথচ “মধুসূদন” উপেক্ষিতই থেকে গেলেন!

হুগলি, ১৫ নভেম্বর:- আজ দেশের শল্যচিকিৎসার জনক পন্ডিত মধুসূদন গুপ্তের মৃত্যুদিন। ১৮৫৬ সালের ১৫ নভেম্বর হুগলির বৈদ্যবাটির এই মহামানবের মৃত্যু হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, দীপাবলি উৎসবের লক্ষ প্রদীপের ভিড়ে তাঁর জন্য একটাও প্রদীপ জ্বালানোর কেউ নেই! বাঙালিসহ ১৪০ কোটি ভারতীয় চোখ আটকে আছে টিভির পর্দায়। ভারত-নিউজিল্যান্ড সেমিফাইনাল ম্যাচে। গত তিনদিন ধরে হাজার কোটির আতসবাজিতে ভারতীয়রা উদযাপন করেছে দীপাবলি উৎসব। কোটি প্রদীপের আলোতে সেজে উঠেছিল ধনীদরিদ্র নির্বিশেষে প্রত্যেক গৃহস্থের উঠোন থেকে বারান্দা। অথচ যে মানুষটির হাত ধরে আধুনিক শল্যচিকিৎসার প্রবর্তন হল, তাঁর মৃত্যুদিনে বাঙালিসহ গোটা দেশবাসী নির্লিপ্ত থেকে গেল। মধুসূদন গুপ্ত ১৮০০ সালে (অনুমিত) জন্মগ্রহণ করেন হুগলির এক বৈদ্য পরিবারে। তাঁর পিতামহ ছিলেন হুগলির নবাব পারিবারিক চিকিৎসক এবং তাঁর প্রপিতামহ ছিলেন একজন বকশী। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাদের পারিবারিক সুখ্যাতি ছিল। বর্তমান চিকিৎসা বিদ্যার অন্যতম অঙ্গ হল শবব্যবচ্ছেদ। অষ্টাদশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে যখন হিন্দু সমাজ শবব্যাবচ্ছেদের ঘোর বিরোধী ছিল সেই সময়ে দাঁড়িয়ে মধুসূদন গুপ্ত কলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রথম শবব্যবচ্ছেদ করার কৃতিত্ব অর্জন করেন।

তাঁর এই কাজের জন্যে কোম্পানি সরকার তাঁকে তোপধ্বনি করে সম্মান জানায়। ১৮৩৬ সালের ১০ জানুয়ারি কলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রথম শবব্যাবচ্ছেদ করেন তিনি। এই ঘটনাটি ছিল প্রথম চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে সংস্কার ভাঙার ঘটনা। মধুসূদন গুপ্তের হাত ধরে শবব্যবচ্ছেদের ফলে হিন্দু সমাজের দীর্ঘদিনের কুসংস্কার ও গোঁড়া পন্ডিতদের বাধা নিষেধের বেড়া ভেঙে যায়। ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের শুভারম্ভ হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ক্ষেত্রে মধুসূদন গুপ্তের অবদান অনস্বীকার্য। কলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রথম শবব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে চিকিসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তিনি এক নবযুগের সূচনা করেছিলেন। ক্কলকাটা মেডিকেল কলেজে দীর্ঘদিন কর্মরত থাকার পর ১৮৫৬ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দেশবাসী মুখ ফিরিয়ে নিলেও হুগলির এক কিশোরের দৌলতে পন্ডিত মধুসূদন গুপ্ত সাম্প্রতিক একধিক বার সংবাদ শিরোনামে এসেছে। হুগলি-চুঁচুড়ার নারকেল বাগানের বাসিন্দা অভিজ্ঞান কিশোর দাস ২০২১ সালে একটি তথ্যচিত্র বানায়। তাঁর জীবনীর ওপর।

অভিজ্ঞানের তথ্যচিত্রটি দেশ ও বিদেশে ১৮ টিরও বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত ও পুরস্কৃত হয়েছে। তার মধ্যে ভারত সরকার আয়োজিত দুটি আন্তর্জাতিক ও একটি জাতীয় ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়। দুটিতে পুরস্কৃত হয় ও একটিতে আমন্ত্রিত বিশেষ স্ক্রিনিং হয়। এছাড়াও আরও তিনটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতে নেয় পন্ডিত গুপ্তর জীবনীর ওপর নির্মিত এই তথ্যচিত্রটি। অভিজ্ঞানের এই সাফল্যের কারণে পন্ডিত মধুসূদন গুপ্ত আবার সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত হতে শুরু করে। বর্তমানে হুগলি কলিজিয়েট স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পাঠরত অভিজ্ঞান জানায় “এটা খুবই দুঃখের বিষয় যে পন্ডিত গুপ্তের মতন বিজ্ঞানমনস্ক ও আধুনিক শল্যচিকিৎসা ব্যবস্থার জনককে আমরা কী সহজেই ভুলে গেলাম। সারা দেশবাসীর কথা না হয় ছেড়েই দিলাম, ‘বিস্মৃত’ বাঙালি আবার ভুলে গেল নিজের অস্মিতার কথা। আমি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার – উভয়কেই অনুরোধ করব যে পন্ডিত গুপ্তের স্মৃতিতে অন্তত একটা বড় হাসপাতাল নির্মাণ করতে।” সারা বিশ্বে বসবাসকারী ২৮ কোটি বাঙালি যেখানে মুখ ফিরিয়েছে সেখানে ১৬ বছরের কিশোরের এই ইচ্ছা কতটা ফলপ্রসু হবে সেটাই এখন দেখার!