এই মুহূর্তে জেলা

জোড়া পুরস্কারে লক্ষাধিক টাকার ‘লক্ষ্মী’ লাভ চুঁচুড়ার অভিজ্ঞানের।

হুগলি, ২৯ অক্টোবর:- দেবীপক্ষের সূচনাতে মহালয়ার প্রাক্কালে কেন্দ্রীয় সরকারের “জাতীয় মেধা সম্পদ” পুরস্কার লাভ করে চুঁচুড়ার নারকেল বাগানের বাসিন্দা অভিজ্ঞান কিশোর দাস। পুরস্কার হিসেবে এই কিশোর বিজ্ঞানী পায় একটি মেডেল, শংসাপত্র এবং এক লক্ষ টাকা। এবার সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া শহর থেকে পুরস্কার উড়ে এল অভিজ্ঞানের কাছে। তার নির্দেশিত পন্ডিত মধুসূদন গুপ্তর জীবনীর ওপর নির্মিত তথ্যচিত্রের জন্য। পুরস্কার হিসেবে এবারের প্রাপ্তি ২৫০ ডলার, মেডেল, শংসাপত্র, তিনটে মার্চেনডাইস টি-শার্ট ও বিচারকের লিখিত-মূল্যায়ন। দেবীপক্ষের সূচনা থেকে লক্ষ্মী পুজোর প্রাক্কালে একজোড়া সেরার সেরা পুরস্কার। সঙ্গে লক্ষাধিক টাকার ‘লক্ষ্মী’ প্রাপ্তি। স্বাভাবিক কারণেই বেজায় খুশি বছর ষোলোর এই কিশোর। প্রসঙ্গত, এই মাসের ১৩ তারিখ নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে তার হাতে ‘জাতীয় মেধা সম্পদ পুরস্কার’ তুলে দেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী পীযুষ গোয়েল। তার যুগান্তকারী দুই উদ্ভাবন – করোনা প্রতিরোধকারী ও গাড়ির দূষণ হ্রাসকারী দুই পৃথক যন্ত্র আবিষ্কারের জন্য। এই ‘জাতীয় পুরস্কার’ বিজয়ের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞানই হল কনিষ্ঠতম।

এমনকি ‘প্রথম বাঙালি’ উদ্ভাবক বা আবিস্কারকও বটে! সে জানায় – গতবারের পুজো থেকে এবছরের শুরু পর্যন্ত একদম ভালো কাটেনি। বাছাই তালিকাভুক্ত হওয়ার পরেও খুব অল্পের জন্য একটি জাতীয় পুরস্কার পাওয়া হয়নি। অভিজ্ঞানের বাবারও গতবার পুজোর সময় স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল। মার্কিন মুলুকে যাওয়ার আমন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও সম্ভব হয়নি যাওয়া। এবার বেজায় উচ্ছসিত অভিজ্ঞান ও তার পরিবারের সদস্যরা। পুজো-উৎসবের মধ্যেই লক্ষাধিক টাকার ‘লক্ষ্মী’ লাভ। তার উপর জাতীয় মেধা পুরস্কার আনতে পাঁচ দিনের দিল্লি ভ্রমণ। সব মিলিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা থেকেই খুশির হাওয়া চুঁচুড়ার দাস পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই নাস্তিক এই কিশোর আরও জানায় লক্ষ্মী পুজোর আবহে এই অর্থ প্রাপ্তি হলেও মৌলিক বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানমনস্কতার প্রচার ও প্রসার তার একমাত্র লক্ষ্য। প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ফিলাডেলফিয়া আন্তর্জাতিক যুব ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তথ্যচিত্র বিভাগে প্রথম পুরস্কার লাভ করেছিল হুগলি কলিজিয়েট স্কুলের একাদশ শ্রেণির এই ছাত্র।

ফেস্টিভ্যাল কর্তৃপক্ষ অভিজ্ঞানকে মার্কিন মুলুকের ফিলাডেলফিয়া শহরের জার্মানটাউন স্কুলে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ফিল্মমেকার্স প্যানেলে বক্তব্য রাখার জন্য। মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য মার্কিন মুলুকে যাওয়া হয়নি তখন। তার প্রতিনিধি হয়ে উপস্থিত ছিল ফিলাডেলফিয়া শহরের বাসিন্দা সাহা দম্পতি – পৌলোমী ও অর্পণ। ফেস্টিভ্যালের মঞ্চে গিয়ে সাহা দম্পতি ও তাঁদের পুত্র ঈশান প্রতিনিধিত্বমূলক পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জানান যে তাঁরা সরাসরি অভিজ্ঞানের কাছে পার্সেলের মাধ্যমে পুরস্কার পাঠিয়ে দেবেন। সেই পুরস্কার এখন হাতে পেল অভিজ্ঞান। পুরস্কার হাতে পেতে এত দেরি হল কেন? এর উত্তরে অভিজ্ঞান জানায় – পুরস্কার আসতে এত দেরি হচ্ছে দেখে আমি ওদেরকে জুন মাসে ইমেল করি। উনারা জানায় যে পুরস্কার ওঁরা মার্চ মাসেই পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমি কোনও পুরস্কার পায়নি বলে প্রতুত্তর করি। তারপর একাধিক ইমেল চালাচালির পর জানা যায় ফেস্টিভ্যাল কর্তৃপক্ষ ভুল ঠিকানায় আমার পুরস্কারের পার্সেল পাঠিয়ে ফেলেছেন।

অত্যন্ত মন খারাপ হয়ে যায় আমার। যাইহোক, শেষ পর্যন্ত ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের পক্ষ থেকে জানানো হয় উনারা দ্বিতীয় একটি পার্সেল আবার পাঠাবেন আমার জন্য। সেই পুরস্কার এখন হাতে পেলাম। প্রসঙ্গত, “আধুনিক ভারতের সুশ্রুত – পন্ডিত মধুসূদন গুপ্ত” নামে একটি তথ্যচিত্র বানিয়েছে এই কিশোর বিজ্ঞানী তথা চিত্র-পরিচালক দেড় বছর আগে। মধুসূদন গুপ্ত ছিলেন আধুনিক ভারতের প্রথম শল্যচিকিৎসক। তিনি ছিলেন হুগলি জেলার বৈদ্যবাটির বাসিন্দা। তাঁর হাত দিয়েই সূচনা হয় আধুনিক শল্যচিকিৎসার। ১৮৩৬ সালের ১০ জানুয়ারি তৎকালীন ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজে পন্ডিত গুপ্ত প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ করেছিলেন। অভিজ্ঞানের এই তথ্যচিত্রটি ইতিমধ্যে ১৫টিরও বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং বেশ কয়েকটিতে পুরস্কৃতও হয়। এই উৎসবগুলির মধ্যে ফিলাডেলফিয়া আন্তর্জাতিক যুব চলচ্চিত্র উৎসব অন্যতম।