হুগলি, ৬ অক্টোবর:- ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল কলেজ।স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র বিপ্লবের সাক্ষি এমন কলেজের মিউজিয়াম তৈরী করে উৎসর্গ করা হল সেই সব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। চন্দননগর কলেজে ক্যাম্পাসে প্রায় দুশো বছরের প্রাচীন একটি ভবন ছিল।সেই ভবনকে মিউিয়ামে রূপান্তরিত করা হয়। পাঁচটি ঘর রয়েছে এই মিউজিয়ামে। রয়েছে একাধিক বিপ্লবীদের হাতের লেখা চিঠি থেকে শুরু করে পুলিশ রিপোর্ট,চরকা, ডিঙি নৌকা, প্রাচীন তাঁত, টাইপ মেশিন সহ সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের নানান স্মৃতি। রয়েছে বিপ্লবীদের একাধিক দুষ্প্রাপ্য ছবি, মূর্তি, প্রাচীন খবরের কাগজ এবং নানান ইতিহাস। শুক্রবার বিকেলে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মিউজিয়ামটি চন্দননগরের বিপ্লবীদের গৌরবময় স্মৃতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়।সেই মুহূর্তের সাক্ষী রইলেন কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশীষ সরকার, চন্দননগর পুরনিগমের মহানাগরিক রাম চক্রবর্তী, ডেপুটি মেয়র মুন্না আগরওয়াল, কমিশনার স্বপন কুমার কুণ্ডু, রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সদস্য পার্থ রঞ্জন দাস, ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সায়েন্স মিউজিয়ামের পরিচালক ড. নটরাজ দাশগুপ্ত, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ সহ আরও অনেকেই।
গঙ্গাতীরবর্তী সাবেক ফরাস ডাঙা চন্দননগর শহরের একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চন্দননগর কলেজ। ১৮৬২ সালে স্থাপিত কলেজের পূর্বতন নাম ছিল একোল দে সাঁৎ মেরি। ১৯০১ সাল থেকে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ডুপ্লে কলেজ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ১৯৪৮ সালে নাম পরিবর্তন করে চন্দননগর কলেজ রাখা হয়। চন্দননগর কলেজ শুরু থেকেই একটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান, কারণ একদা কলেজের সহ-অধ্যক্ষ চারুচন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে কলেজ সহ চন্দননগর শহর বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। সরাসরি স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত থাকার ফলে ১৯০৮ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত টানা ২৩ বছর কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। চারুচন্দ্র রায়ের বিখ্যাত শিষ্যদের মধ্যে ছিলেন ১৯০৮ সালে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত তরুণ বিপ্লবী কানাইলাল দত্ত, শ্রীশচন্দ্র ঘোষ, রাসবিহারী বসুর মত বিপ্লবীরা। বলা যায় একপ্রকার চন্দননগরের বিপ্লবীদের উত্তরাধিকার এবং এই কলেজ ও শহরের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে মিজিয়াম স্থাপন করা হলো। চন্দননগর কলেজের সেন্টার ফর হেরিটেজ স্টাডিজ-এর তত্ত্বাবধানে কলেজের ১৬১ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ভবনে স্থাপন করা হয় চন্দননগর কলেজ মিউজিয়াম। কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশীষ সরকার জানিয়েছেন, এটা সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত বিপ্লবীদের স্মরণ করার একটি উদ্যোগ। এই মিউজিয়ামটি রূপায়ণের পেছনে রয়েছে বহু গবেষণা এবং জ্ঞানীগুণী একাধিক মানুষের উল্লেখযোগ্য অবদান। এই অনুষ্ঠানে তাঁদের সকলকে সংবর্ধিত করা হয়েছে। যে সব তথ্য ছবি মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে তা অনেক গবেষনার ফসল, দুস্পাপ্য সব। বিপ্লবীদের কর্মকার্ড লন্ডনের পুলিশ রিপোর্ট থেকে সংগ্রহ করা।