হাওড়া, ২৬ ফেব্রুয়ারি:- রবিবার সকাল থেকে বেলুড় মঠে শুরু হয়েছে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জন্মমহোৎসব পালন অনুষ্ঠান। বেলুড় মঠের রীতি অনুযায়ী প্রতি বছর ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের জন্মতিথির পরের রবিবার এই উৎসব পালিত হয়। এবছর গত মঙ্গলবার ঠাকুরের ১৮৮তম জন্মতিথি পালন হয়েছে। আর আজ রবিবার জন্মমহোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঠাকুর বলতেন, ভক্তের জন্যই ভগবান। শুধু সাধন ভজন নয় ভক্তের সঙ্গে ভগবানের মিলন ও আবশ্যক। এমনিতেই নানা সংসারী এবং মানসিক যন্ত্রণায় সদা ক্লিষ্ট থাকে ভক্তরা। বছরে একটা দিন মঠে যাতে সেই ভক্তদের মনোরঞ্জন এর জন্য যদি কিছু আয়োজন করা যায় এমন ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন শ্রীশ্রীমা। আর সেই ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠের সবথেকে বড় উৎসব ঠাকুরের জন্মতিথির পরের রবিবার শুরু করেন মিলন উৎসব। যা জন্মমহোৎসব নামে পরিচিত। দূরদূরান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন এই উৎসবে অংশ নিতে। ভোরে ঠাকুরের মন্দিরে মঙ্গলারতি দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সকাল ৮টা থেকে মূল মন্দিরের পাশে নির্মিত অস্থায়ী সভামণ্ডপে সকাল শুরু হয় নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ধর্মীয় মন্ত্রোচ্চারণ, ভজন, পদাবলী কীর্তন ইত্যাদি।
ভগবান শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ১৮৮তম জন্মমহোৎসব আজ পালিত হচ্ছে রামকৃষ্ণ মঠ, বেলুড় মঠে। এই উপলক্ষে ২৬ ফেব্রুয়ারী ১৩ ফাল্গুন রবিবার সকাল থেকেই বেলুড় মঠে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ভোর সাড়ে চারটেয় শ্রীশ্রীঠাকুরের মন্দিরে মঙ্গলারতি দিয়ে এদিনের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর সকাল আটটা থেকে সভামণ্ডপেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বেলুড় মঠের সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারীবৃন্দ বেদপাঠ, স্তবগান এবং ভজন পরিবেশন করেন। এরপর স্বামী স্তবপ্রিয়ানন্দ মহারাজ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পুঁথি পাঠ ও ব্যাখ্যা করবেন। এরপর রয়েছে পদাবলী কীর্তন। অংশগ্রহণ করবেন কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের দৃষ্টিহীন ছাত্রবৃন্দ কর্তৃক ভজন ও ঐকতান পরিবেশিত হবে। এরপর কবিগান পরিবেশন করবেন প্রভাত সরকার। এরপর বাউল গান গাইবেন কার্তিক দাস বাউল। লোকগীতি পরিবেশন করবেন প্রাঞ্জল বিশ্বাস। তালবাদ্যমে অংশগ্রহণ করবেন পন্ডিত গোবিন্দ বোস ও অন্যান্যরা। এরপর রয়েছে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের ছাত্রবৃন্দ কতৃক নাট্যাভিনয় ‘ভক্ত প্রহ্লাদ’। অনুষ্ঠান চলবে বিকেল অবধি। এদিন মঠ অফিস প্রাঙ্গনেও বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। সকাল ১০টা থেকে সেখানে হবে ভক্তিগীতি, শ্যামা সংগীত, গীতি আলেখ্য, রামায়ণ গান, ভজন এবং কালী কীর্তন।
ভক্তিগীতিতে অংশ নেবেন সৌভিক দত্ত। শ্যামা সংগীত পরিবেশন করবেন অমরেন্দ্র চক্রবর্তী। রূপ ও রঙের প্রযোজনায় গীতি আলেখ্য পরিবেশিত হবে ‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য’। সুবল চন্দ্র দাস রামায়ণ গান পরিবেশন করবেন। কাশীনাথ নন্দী ভজন পরিবেশন করবেন। এছাড়াও বেলুড় মঠের সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারীবৃন্দ কালীকীর্তনে অংশ নেবেন। সন্ধ্যায় শ্রীশ্রীঠাকুরের মন্দিরে সন্ধ্যারতি অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় সভামণ্ডপে হবে নৃত্যানুষ্ঠান। সুপ্রতিম তালুকদার নৃত্যানুষ্ঠান পরিবেশন করবেন। আজ বেলা ১১টা থেকে বেলুড় মঠের মা সারদা সদাবব্রত ভবন থেকে প্রসাদ বিতরণ করা হবে বলে মঠ সূত্রে জানানো হয়েছে। কিন্তু, আজকে মঠের সবথেকে বড় আকর্ষণ সার্বজনীন মেলা। মঠের ভিতরে প্রাঙ্গণে বসেছে এই মেলা। হরেক পসরা নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। মানুষ কেনাকাটা করছেন, তাঁরা অনুষ্ঠান দেখেন, মহারাজদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং পরিশেষে ভোগ খেয়ে নিবিষ্ট চিত্তে বাড়ি ফিরে যান। এই মেলা শেষে আগে অন্যতম আকর্ষণ ছিল আতশবাজি প্রদর্শন। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে তা পরিবেশ দূষণের কারণে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজ অন্তত ৫০ হাজার মানুষের জন্য ভোগের আয়োজন করেছে বেলুড় মঠ। করোনাকাল পেরিয়ে প্রায় তিন বছর পর বেলুড় মঠের সবথেকে বড় অনুষ্ঠান জন্মমহোৎসব বা মিলন উৎসবে মেতে উঠেছে বেলুড় মঠ।