এই মুহূর্তে কলকাতা

হাতেখড়ি নিয়ে বাংলা ভাষা শিক্ষা শুরু করলেন রাজ্যপাল।

কলকাতা, ২৬ জানুয়ারি:- বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকল গোটা বাংলা তথা দেশের মানুষ। বৃহস্পতিবার সরস্বতী পুজোর বিকেলে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলা ভাষা শিক্ষা শুরু করলেন বঙ্গ প্রেমী রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস।কলকাতার রাজভবনে সম্পন্ন করলেন তাঁর হাতেখড়ি। এমনকি দিলেন গুরুদক্ষিণাও। বৃহস্পতিবার রাজভবনে এক অনুষ্ঠানে আট বছরের শিশুর কাছ থেকে বাংলা বর্ণমালার প্রথম অক্ষর ‘অ’, ‘আ’ লেখার মাধ্যমে বাংলা শেখার সূচনা করলেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। ভাষা শিক্ষা মসৃণ করতে রাজ্যপালকে এ দিন বর্ণপরিচয়ের দু’টি খণ্ড উপহার দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।বাংলায় এর আগে বহু রাজ্যপাল এসেছেন। সংগত ভাবেই তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা নয়। কিন্তু বাংলা শেখার এহেন ঐক্যান্তিক আগ্রহ ইতিপূর্বে রাজভবনের কোনও বাসিন্দার মধ্যে দেখা গেছে বলে কেউ স্মরণ করতে পারছে না কেউই।হাতেখড়ি নিয়েই প্রথম ভাষণে তাঁর বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের প্রতি ভালোবাসার কথা জানিয়েছেন রাজ্যপাল। নিজের ভাষণে সিভি আনন্দ বোস বলেছেন, ‘আমি বাংলাকে ভালোবাসি। বাংলা সুন্দর ভাষা। আমি বাংলাকে ভালোবাসি। আমি বাংলার মানুষকে ভালোবাসি। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু মহানায়ক, অমরনায়ক। জয় বাংলা, জয় হিন্দ।’ হাতেখড়ির পর নিজের একমাসের বেতন রাজ্যের মেধাবী পড়ুয়াদের শিক্ষার অগ্রগতিতে দান করেন রাজ্যপাল। রাজ্যপালের এই বাংলা ভাষা শেখার ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তিনিও মালয়ালম ভাষায় লিখে ফেলতে পারেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “স্যর আপনি যেহেতু আজ বাংলা শুরু করলেন, আমিও কিন্তু মালয়ালম ভাষায় এক্ষুণি স্লেটে অ আ ই ঈ লিখে দিতে পারি।

আমিও তার জন্য তৈরি।” একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সরস্বতী পুজোর শুভ মুহূর্তে উনি বাংলা শিখলেন আমরা গর্বিত। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। তাঁর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।” একইসঙ্গে এই ‘হাতেখড়ি’র মঞ্চ থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালকে বর্ণপরিচয় তুলে দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের মাতৃভাষা আমরা যেখান থেকে শিখি তা মূলত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয়। তার প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় ভাগ। আমি আপনাকে এই বই দিচ্ছি। আপনারও সুবিধা হবে।” পোডিয়াম ছেড়ে কিছুটা হেঁটে এসে তিনি নিজেই রাজ্যপালের হাতে তুলে দেন তা।এরপরই আবারও পোডিয়ামে ফিরে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাসিমুখে রাজ্যপালের কাছে জানতে চান, “আমার মালয়ালমও শিখতে শিখতে হয়ে যাবে তো?” চেয়ার থেকে তখন রাজ্য়পালও হাসিমুখে সম্মতিসূচক মাথা নাড়েন। বাংলার রাজ্যপাল তামিল। বাংলা ভাষায় তিনি তাই লিখতে ও পড়তে জানেন না।

কিন্তু এক সময় কর্মসূত্রে তিনি বাংলার বাসিন্দা ছিলেন। সেই সূত্রেই বাংলা ভাষার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ। গড়ে ওঠে আত্মিক টান। রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রিয় কবি। দরাজকন্ঠে রবির কবিতা আবৃত্তি তিনি আজও করতে পারেন। সেই কবিতা তিনি মুখস্ত করেন শুনে শুনে। কিন্তু মনে তাঁর আক্ষেপ ছিল, বাংলা ভাষা না শেখা নিয়ে। জীবন সায়হ্নে যখন তিনি বাংলারই রাজ্যপাল হিসাবে এলেন তখন আর খামতি রাখলেন না তা শেখার জন্য। সেই জন্য বেছে বেছে সরস্বতী পুজোর দিনেই বাংলার রাজভবনে আয়োজিত হল রাজ্যপালের হাতেখড়ির অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি রাজ্যের সচিবেরা, মন্ত্রীরা, বিধায়কেরা, সাংসদরা। উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়ও। ঘটনাচক্রে এদিনই সাধারণতন্ত্র দিবস। প্রতিবছর এদিনের সন্ধ্যায় রাজভবনে আয়োজিত হয় চা-চক্র যা রাজ্যপালের তরফে আয়োজিত হয়। সেখানে আমন্ত্রিত থাকেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সহ গণমান্য ব্যক্তিরা। এবারে সেই অনুষ্ঠানের সঙ্গে বাড়তি পাওয়া রাজ্যপালের এই হাতে খড়ির অনুষ্ঠান।