কলকাতা, ১১ ডিসেম্বর:- শুধুমাত্র প্রাথমিক শিক্ষক পদে উপযুক্ত প্রার্থী খোঁজাই নয়। এবারের প্রাথমিকের টেট পরীক্ষা ছিল রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ তথা সরকারের কাছে মুখ রক্ষার লড়াই। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে একাধিক দুর্নীতির এবং অনিয়মের অভিযোগের পাশাপাশি ছিল প্রশ্ন ফাঁসের আশঙ্কা।সর্বোপরি আদালত আর রাজ্যের আপামর মানুষের নজর ছিল এই পরীক্ষার উপরে। এরই মধ্যে দাঁড়িয়ে সারা রাজ্যে দেড় হাজারের কাছাকাছি কেন্দ্রে প্রায় ৭ লক্ষ পরীক্ষার্থীকে নিয়ে টেট পরীক্ষা আয়োজনের চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল পর্ষদ। দিনের শেষে বড় কোন ঘটনা ছাড়াই প্রায় নির্ঝঞ্ঝাটে টেট পরীক্ষা সম্পন্ন করে অনেকটাই স্বস্তিতে পর্ষদ তথা রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল তাই পরীক্ষা শেষে মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রীসহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁদের সহায়তার জন্য। প্রকৃতপক্ষে পরীক্ষা নিয়ে যাতে নতুন করে কোন অভিযোগ না ওঠে সেজন্য টেট নিয়ে এবার প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে লাগাতার নজরদারি রাখা হয়েছিল। বিকাশ ভবন এর পাশাপাশি জেলায় জেলায় খোলা হয়েছিল কন্ট্রোল রুম। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু নিজে দপ্তরে থেকে আগাগোড়া পরিস্হিতির ওপরে নজরদারি রেখেছেন। পরীক্ষার নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে পরীক্ষা কেন্দ্রের পৌঁছানোর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা সার্বিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে চালাতে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর সমন্বয়ের সঙ্গে কাজ করেছে।
তবে এখানেই শেষ নয়। ত্রুটিমুক্ত মেধাতালিকা প্রকাশ, সফল প্রার্থীদের ইন্টারভিউ এবং সবশেষে সুষ্ঠু ভাবে শিক্ষক পদে যোগ প্রার্থীদের নিয়োগ শেষ করতে পারলে তবেই সর্বতো ভাবে এই চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব বলে পর্ষদ কর্তাদের অভিমত। রবিবার সন্ধেয় সাংবাদিক সম্মেলন করে পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় থেকে সুপ্রিম কোর্ট— সকলকেই ধন্যবাদ জানান।তিনি বলেন, ‘মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর উপদেশ ও সম্মতিক্রমে এই পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। তাঁর অনুমতিতে রাজ্য সরকারের প্রতিটি দফতর সাহায্য করেছে।’ পাশাপাশি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে আলাদা করে ধন্যবাদ জানান গৌতমবাবু। তিনি বলেন, ‘সবসময় মূল্যবান উপদেশ দিয়ে তিনি আমাদের সাহায্য করে গেছেন।’ সেইসঙ্গে দেশের বিচারব্যবস্থাকে কৃতজ্ঞতা জানান পর্ষদ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে আমাদের পরীক্ষা নিতে ও নিয়োগের ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট সাহায্য করেছে।’ প্রসঙ্গত, টেটে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল পর্ষদের কাছে। মমতা সরকারও এই ব্যাপারে কড়া নজর রেখেছিল। পরীক্ষাকেন্দ্রের নিরাপত্তা বাড়ানো থেকে শুরু করে প্রশ্নপত্র— সবই এমনভাবে বন্দোবস্ত করেছিল পর্ষদ, যাতে কোনওভাবে কোনও বিতর্ক তৈরি না হয়। পর্যবেক্ষকদের মতে, রবিবারের টেটে পাশ করেছে পর্ষদ ও রাজ্য সরকার। এখন দেখার আগামীতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও নিয়োগের ক্ষেত্রে কী ঘটে।