এই মুহূর্তে জেলা

মাকড়দহ শ্রীমনি বাড়িতে দেবী দশভুজা নন, আসেন স্বামী শিবের সাথে হরগৌরী রূপে।

হাওড়া, ৪ সেপ্টেম্বর:- বনেদি বাড়ির পুজো মানেই ঐতিহ্য আর সাবেকিয়ানা। সাথে ইতিহাসের পাতায় স্মৃতির ডুব। নানা গল্প, কিংবদন্তী আর ইতিহাস। মণিমুক্তোর মতো প্রতিটি বনেদি বাড়ির অলিন্দে ছড়িয়ে আছে। সেইরকমই একটি বনেদি বাড়ির পুজো হল হাওড়ার মাকড়দহ শ্রীমানি পাড়ার শ্রীমানি বাড়ির পুজো। এই পরিবারে দেবী দশভূজা হয়ে আসেন না। তিনি আসেন স্বামী শিবের সাথে হরগৌরী রূপে। শ্রীমানি বাড়িতে পুজো শুরু হয়েছিল ১৯১৮ সালে। এ বছরে পুজো ১০৪ বছরে পদার্পণ করল। পুজোর ইতিহাস সম্বন্ধে বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের থেকে জানা যায় বাড়ির পূর্বপুরুষ বিশ্বনাথ শ্রীমানি ও হরিপদ শ্রীমানি দুই ভাই তখন সবে উঠতি ব্যবসায়ী।

তাদের ছিল মুড়ির ব্যবসা। ১৯১৮ সাল নাগাদ মুড়ির ব্যবসার সাথে চিনি ও ঘি-এর ব্যবসায়ে সদ্য তাঁরা ভাগ্য পরীক্ষায় নেমেছেন। এমন সময় এক ভোরে বাড়ির বড় ছেলে বিশ্বনাথ শ্রীমানির প্রথম পক্ষের স্ত্রী বাড়ির সদর দরজা খুলে ঝাট দিতে গিয়ে দেখেন বাড়ির সদর দরজার সামনে বসানো দেবী প্রতিমার কাঠামো। হই হই পরে গেল গোটা বাড়ি জুড়ে। সাক্ষাৎ দেবী নিজেই চান তাঁর পুজো হোক বাড়িতে এইভেবে বাড়ির বড় ছেলে সেই কাঠামো নিয়ে আসেন বাড়ির ভিতরে। পরে সেই কাঠামো অনুযায়ী মৃৎশিল্পীদের দিয়ে প্রতিমা গড়ালে তা রূপ নেয় হরগৌরীর।সেই থেকেই হরগৌরী রূপেই দেবী দুর্গা পুজিত হয়ে আসছেন এখানে। নবমীর দিনে বাড়ির সদস্যদের মধ্যে কাদামাটি খেলার ও সন্ধিপুজার পর ধুনো পড়ানোর রীতি ছিল। তবে কালের নিয়মে সেই সব এখন বন্ধ হয়ে স্মৃতির পাতায় স্থান পেয়েছে। প্রতি বছর জন্মাষ্টমীতে বাঁশ পুজো করে সূচনা হয় প্রতিমা গড়া। ষষ্ঠীর দিন বেলগাছে পুজো দিয়ে শুরু হয় দেবীর বোধন। সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নান করিয়ে করা হয় দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা। ২০১৮ সালে শতাব্দী পেরোয় এই পুজো।

সেই বছর ১০৮ প্রদীপ জ্বেলে ১০৮ জন মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের পুজো করা হয়। একসময় এক মণ চালের সাথে একশো নারকেলের তৈরি খাবার ও মনোহরা দিয়ে দেবীকে নৈবেদ্য দেওয়া হত। যা এখনও প্রচলিত তবে ভাটা পড়েছে নৈবেদ্যর পরিমাণে।দশমীতে মালিক পাড়ার ছেলেদের কাঁধে চড়ে দেবী সরস্বতী নদীতে বিসর্জন যান। শ্রীমানি বাড়ির সদস্যরা ছড়িয়ে আছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। সারা বছর বিদেশে থাকলেও পুজোর সময় বাড়ির সদস্যরা ফের মিলিত হন। গত দু-বছর করোনা আবহে প্রথা ভেঙে প্রতিমা আনা হয়েছিল কুমোরটুলি থেকে। তবে চলতি বছরে করোনা কাঁটা দূরে থাকায় ফের বাড়িতেই পুরনো কাঠামোয় তৈরি হচ্ছে প্রতিমা।