এই মুহূর্তে জেলা

চুঁচুড়ায় পৌরপ্রধানের কুর্সিকে ঘিরে দুই প্রান্তে দুই বিধায়ক !

সুদীপ দাস, ১৫ মার্চ:- টানা দু’বার চেয়ারম্যান পদে বসা গৌরিকান্ত মুখার্জীকে সরিয়ে হুগলী-চুঁচুড়া পৌরসভায় প্রথমবারের জন্য পুরপ্রধানের পদে বসানো হলো বর্ষিয়ান তৃণমূল নেতা অমিত রায়কে। সোমবার রাতে হুগলীর কোন্নগর থেকে জেলার ১২টি পুরসভার চেয়ারম্যান ও ১০টি পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যানের নাম ঘোষনা করেন দলের অন্যতম সম্পাদক দিলীপ যাদব। সেখানে হুগলী-চুঁচুড়া পৌরসভার নতুন পৌরপ্রধান হিসাবে ২৫নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমিত রায় এবং উপ-পৌরপ্রধান হিসাবে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পার্থ সাহার নাম ঘোষনা করা হয়। অমিত রায় এই নিয়ে পরপর তিনবারের তৃণমূল কাউন্সিলর। প্রথম দু’বার তিনি উপ-পুরপ্রধানের দ্বায়িত্ব সামলেছেন। আর পার্থ সাহা বিগত বোর্ডে চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল হয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের দ্বায়িত্বে ছিলেন। তবে বিগত দু’বছর পুরপ্রধানের পদে থাকা গৌরিকান্ত মুখার্জী তুলনামূলকভাবে বিপুল ভোটে জিতলেও প্রধানের দ্বায়িত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দিলো দল।

গৌরিকান্তবাবু এবার নিয়ে মোট ৬বারের কাউন্সিলর। পরপর দু’বারের চেয়ারম্যনের পদে থাকা গৌরিকান্তবাবু বাম জমানায় বিরোধী দলনেতার দ্বায়িত্বও সামলেছেন। সেই গৌরিকান্তবাবুকেই হঠাৎ করে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে চুঁচুড়া রাজনীতিতে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। কারন গৌরিকান্তবাবু চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। আর অমিত রায় অনেকটাই সপ্তগ্রামের বিধায়ক তপন দাশগুপ্তের কাছের লোক বলে তৃণমূলের একাংশের দাবী। অসিত মজুমদারের ডাকনাম তপন। তাই তৃণমূলের এই দুই বিধায়ক তপনের দ্বন্দ্ব চুঁচুড়া শহরে নতুন নয়। সম্প্রতি সাংবাদিকদের কাছে একে অপরের বিরুদ্ধে দুই তপনের বিবৃতি প্রকাশ হতেই শহর ছাড়িয়ে দুজনের দ্বন্দ্ব জেলাব্যাপী আলোচিত বিষয় হয়ে ওঠে। তাই এবারে হুগলী-চুঁচুড়া পৌরসভার রাশ কোন বিধায়কের হাতে থাকে তা নিয়েও রাজনৈতিক সচেতন মানুষের উৎসাহ কিছু কম ছিলো না।

অমিত রায়ের নাম পুরপ্রধান হিসাবে ঘোষনা হতেই আপতত দাশগুপ্ত পন্থীদের পাল্লা অনেকটাই ভারী হলো বলে মনে করছে তৃণমূলের একাংশ। এদিন চুঁচুড়া ঘড়ির মোড়ে অমিত রায়কে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন অনেকেই। তবে দেখা যায়নি মজুমদার পন্থীদের। আসেননি চুঁচুড়ার বিধায়কও। এদিন নাম ঘোষনার পর অসিত মজুমদার বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে বাংলাকে কেউ ভালো চেনেন না। চুঁচুড়াও বাংলার বাইরে নয়। তিনি যা করেছেন ভালোর জন্যই করেছেন। তবে নবনিযুক্ত চেয়ারম্যানকে শুভেচ্ছা জানানো প্রসঙ্গে বিধায়কের বক্তব্য আমি দলের কাছ থেকে লিখিত কিছু পাইনি শপথ নেওয়ার পর অবশ্যই শুভেচ্ছা জানাবো। রাতে অমিতবাবু নিজেই চুঁচুড়ার বড়বাজারে বিধায়ক তপন দাশগুপ্তের দলীয় কার্যালয়ে যান। কার্যালয়ের সামনেই অমিত রায়কে জড়িয়ে ধরেন তপনবাবু।

অমিতবাবুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তপনবাবু বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অমিত রায়কে চেয়ারম্যান করেছেন। চুঁচুড়ায় দুর্নীতিমুক্ত পৌর-প্রশাসন হবে। চুঁচুড়ায় দুর্নীতিমুক্ত পৌর-প্রশাসন কথাটি বড়ই ইঙ্গিতপূর্ন! কারন বিগত বোর্ডে এই পুরসভায় সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা নিয়োগ-দুর্নিতী। সেই দুর্নীতির প্রতিবাদ করেই পুরসভার অস্থায়ী শ্রমিকদের আন্দোলনে অক্সিজেন জুগিয়েছিলেন তৎকালীন উপ-পুরপ্রধান অমিত রায়। কাঠঘড়ায় তোলা হয়েছিলো তৎকালীন পুর-প্রধান গৌরিকান্ত মুখার্জীকে। সেই ঘটনার পরের বোর্ডে দেখা গেলো বাদ গৌরিকান্তবাবু। আর উচ্চপদে অমিতবাবু। আর সেই অমিতবাবুকে শুভেচ্ছা জানিয়েই বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত বললেন চুঁচুড়া দুর্নীতিমুক্ত পৌর-প্রশাসন হবে…….