হুগলি, ৮ মার্চ:- সংসারের আর্থিক অনটনের জেরে লড়াই সংগ্রাম করে টোটো চালিয়ে আয়ের পথ খুঁজে স্বনির্ভর হয়েছে শেওড়াফুলি সরকারপাড়ার সুচিত্রা দাস। আজ তার টোটো তে ‘যুদ্ধ নয় শান্তি চাই’ এর বার্তা নিয়ে রাস্তায়। ছোটবেলা থেকে সুচিত্রা ছিল পাড়ায় ডানপিটে। পাড়ার অন্য ছেলেদের সাথে গুলি খেলা, ডাঙ্গুলি খেলা, গাছে উঠে বন্ধুদের সাথে আম পেড়ে খাওয়া, সবকিছুতেই সে ছিল পারদর্শী। বহুবার মায়ের কাছে বকুনি ও মার খেয়েছে। ছোটবেলায় বাবা হারিয়ে অভাবের সংসারে কারণে স্কুলে পড়াশোনা করতে পারেনি সুচিত্রা। ছোটবেলা থেকে খেলা প্রতি আগ্রহ থাকায় ওয়েটলিফটিং-এ বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় সে পারদর্শী হয়ে ওঠে। 2000 সালে সে তৃতীয় স্হান অর্জন করে বাংলার হয়ে। মায়ের সংসারে আর্থিক অনটনের অভাবে মাঝপথেই খেলা বন্ধ করে দিতে হয় সুচিত্রাকে। বিয়ের পর কিছুদিন সুখের সংসার চলছিল। স্বামীর আর্থিক ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে কঠিন বাস্তব পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে।
স্বামীর চিকিৎসার জন্য ও আর্থিক দেনার কারণে দুবেলা সংসারে খাওয়া জোটাতে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হতে হয়েছিল। ছোট কাজের জন্য সকলের দরজায় গিয়ে বিতাড়িত হতে হয়েছিল। এরপরই সে ব্যাঙ্ক থেকে ৯০ হাজার টাকা লোন নিয়ে টোটো নিয়ে রাস্তায়। শেওড়াফুলি থেকে শ্রীরামপুর পর্যন্ত জিটিরোড বরাবর রাস্তা দিয়ে সওয়ারি তুলে গন্তব্যস্হানে নিয়ে যাওয়া। সকাল থেকে একা হাতে রান্না করে, টোটো নিয়ে রাস্তায়। সারাদিন চা, বিস্কুট খাওয়া। রাস্তায় হাঁক দিয়ে টোটোতে সওয়ারি তোলা। কঠিন লড়াই চালিয়ে সারাদিনে আয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সুচিত্রার এই কঠিন পরিশ্রম করে উপার্জনকে সকলেই কুর্নিশ জানিয়েছে। সুচিত্রার দাবি, আজকের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের কোনও অবহেলার স্হান নেই। কঠিন লড়াই পরিশ্রম করেই মেয়েদের অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে হবে। আজ সুচিত্রা স্বামী, ছেলে, বৌমা, নাতি নিয়ে সুখেই রয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে একটাই তার বার্তা ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই’। সুচিত্রাকে সাড়া শহরের মানুষজনের কাছে ‘বুড়ি দি’-র টোটো নামে পরিচিত। এক ফোনে পরিচিত সওয়ারির বাড়িতে হাজির হয়ে তাকে গন্তব্যস্হানে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে ‘বুড়ি দি’-র টোটো।