এই মুহূর্তে জেলা

শাসকদলের প্রতিশ্রুতিই সার , দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে স্কুল ঘরে বসবাস পরিবারগুলির।

গোঘাট, ২৯ ডিসেম্বর:- শাসক দলের নেতাদের থেকে শুরু করে প্রশাসনের আধিকারিকদের নাকি প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস ছিলো, স্কুল ঘরে আপনাদের আর বেশিদিন থাকতে হবে না। খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরানো হবে। কোনও কিছুই করা হয়নি বলে অভিযোগ। সম্পুর্ন উদাসীন প্রশাসন। প্রায় চার মাস কেটে গেলেও চরম দারিদ্র্যতাকে সঙ্গী করে স্কুল ঘরেই বাস করতে হচ্ছে বর্তমানে তিনটি পরিবারকে। কান্না ভেজা চোখ নিয়ে অবাক ও শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন অসহায় এই পরিবারগুলি। বিবাহিত ছেলে, বৌমা, স্ত্রী ও মেয়েদের নিয়ে স্কুল বাড়িতেই বর্তমান ঠিকানা তিনটি পরিবারের। এই করুন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে হুগলি জেলার গোঘাটের বায়ুগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

কিন্তু কেন স্কুল ঘরে বাস করতে হচ্ছে এই পরিবারগুলিকে। তাদের করুন ঘটনা শুনলে রীতিমতো চোখ দিয়ে জল আসে। কয়েক মাস আগে আরামবাগ মহকুমায় ভয়াবহ সর্বগ্রাসী বন্যা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ছয়টি ব্লকই। একটি গ্রামে কয়েকশো বাড়ি পড়ে যায়। কৃষিজ ফসল সব নষ্ট হয়ে যায়। একমুটো অন্নের জন্য হাহাকার চলে। গোঘাটের বায়ুগ্রামে একসাথে প্রায় ৫৫টি মাটির বাড়ি পড়ে যায়। দ্বারকেশ্বর নদীর বন্যার জলে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সব। প্রান বাঁচাতে বায়ুগ্রাম স্কুল বাড়িতে আশ্রয় নেয় পনেরোটি পরিবার। গ্রামে মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের তান্ডবলীলা চলে। প্রশাসনের তরফ থেকে দুর্গত মানুষদের সেই সময় খাদ্য সামগ্রী ও ত্রির্পল নাকি দেওয়া হয়। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেটে গেলে ধীরে ধীরে বারোটি পরিবার কেউ ভাঙ্গা বাড়িতে, কেউবা চায়ের দোকানে, কেউবা গোয়াল ঘরে বসবাস করতে শুরু করে।

গোঘাটের বায়ুগ্রামে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে বন্যার ধ্বংসলীলার জেরে চরম দারিদ্র্যতা নিয়ে কিভাবে করুন অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু গোপাল বাগ, নবকুমার বাগ ও সুকুমারী বাগের পরিবারের আরও দুর্বিষহ অবস্থা। তাদের বাড়ি সম্পুর্ন ধুলিসাৎ হয়ে যায় বন্যায়। তারা কোথায় যাবে ছেলে মেয়েদের নিয়ে। তাই নিরুপায় হয়ে স্কুল ঘরেই থেকে গেছেন তারা। ভাঙা বাড়ির মাটি সরিয়ে নতুন করে বাড়ি তৈরির সামর্থ্য নেই তাদের। সামান্য অন্নের জন্য সকাল থেকেই শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে হয়। এই বিষয়ে স্কুল বাড়িতে থাকা গোপাল বাগ জানান, আষাঢ় মাসের বন্যায় আমার বাড়ি পড়ে যায়। তারপর থেকেই স্কুল ঘরে বাস করছি। থাকার জায়গা নেই। স্কুল খুলবে বলছে। এবার মাটি সরিয়ে ত্রির্পল খাটিয়ে থাকার যদি ব্যবস্থা করা যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

সরকারি ভাবে যদি একটু সাহায্য করে তাহলে ভালো হয়। করুন দৃষ্টিতে প্রার্থনা গোপালবাবুর। অন্যদিকে স্কুল বাড়িতে থাকা এক গৃহবধু ভারতী বাগ জানান, চারমাস ধরে স্কুল বাড়িতে আছি। বন্যায় বাড়ি সব পড়ে গেছে। স্বামী লোকের বাড়িতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। স্কুল খুললে কোথায় যাবো। ভেবে পাচ্ছি না। এই বিষয়ে আরামবাগ মহকুমা শাসকের সাথে যোগাযোগ করে হলে তিনি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে আশ্বাস দেন। অপরদিকে একই ভাবে গোঘাট এক নম্বর ব্লকের বিডিও সুরশ্রী পাল জানান, বিডিও অফিসের সাথে যোগাযোগ করলে নিশ্চয়ই বিষয়টি দেখা হবে। বন্যায় যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা তো পুরন হওয়ার নয়। এখন দেখার তাদের স্কুল থেকে ফেরানোর বিষয়ে প্রশাসন কি পদক্ষেপ নেয়।