এই মুহূর্তে জেলা

দিল্লীতে হেরেই বোধগম্য, গলায় গামছা জড়িয়ে সিঙ্গুরের মাটিতে বিজেপি!

সুদীপ দাস, ১৪ ডিসেম্বর:- কৃষি আমাদের অন্নের উৎস্, কৃষক আমাদের অন্নদাতা। ভারতবর্ষের মত কৃষিপ্রধান দেশে এ কথা চির সত্য। সম্প্রতি সেই কৃষকরাই নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবীতে বছরভর দিল্লীর সিংঘু সীমানায় বসেছিলেন। প্রথমদিকে বর্তমান মোদী সরকারের বিরোধী দমন নীতি সেখানেও প্রয়োগ হয়েছিলো। একদিকে বুলডোজার দিয়ে বলপ্রয়োগ আর এক দিকে প্রধানমন্ত্রীর বিরোধীতায় নজর দেওয়া মনোভাব দুটোই খুব সুস্পষ্টভাবে প্রয়োগ হয়েছিলো। গোটা দেশের কৃষক আন্দোলনকে শুধুমাত্র পাঞ্জাবের ধনী কৃষক আন্দোলন বলতেও গড়িমসি করেননি বিজেপির প্রথম সারির নেতারা। কিন্তু মাটিতে অন্ন ফলানো কৃষক নামক অন্নদাতাদের পায়ের নীচের মাটি সরানো যে অত সহজ নয় গতবছর থেকে শুরু হওয়া কৃষক আন্দোলনের জেরে তা টের পেতে প্রায় বছর খানেক লেগে গেলো বিজেপির। দিন কয়েক আগেই বাতিল হলো নয়া তিন কৃষি আইন। বিজেপির বোধগম্য হলো কৃষকদের ক্ষমতা। তাই দিল্লীতে কৃষকদের কাছে নৈতিক হারের পর বাংলায় সেই কৃষকদের মন জয় করতে রাজ্য বিজেপি কৃষক আন্দোলনের ডাক দিলো। ন্যার্য্য সারের দাম, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ সহ মোট ৭দফা দাবীকে সামনে রেখে মঙ্গলবার সিঙ্গুর থেকে এই কৃষক আম্দোলন শুরু হলো। রাজ্য কিষানমোর্চার ডাকে “কৃষি বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও” আন্দোলন শুরু হলো ঐতিহাসিক সিঙ্গুরের মাটিতে দূর্গাপুর হাইওয়ের পাশে একদা টাটার জমির সামনে। আজ থেকে শুরু হওয়া এই অবস্থান চলার কথা টানা তিনদিনব্যাপী। পুলিশের অনুমতি না মেলায় দিন দু’য়েক ধরেই এই কর্মসুচি নিয়ে টানাপোড়েন চলছিলো।

মঙ্গলবার সকাল থেকেও ওই এলাকায় ছিলো চাপা উত্তেজনা। সকাল ১১টা থেকে অবস্থান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হলো দুপুর দেড়টার পর। তবে শুরুতেই উপস্থিত হন বিজেপির রাজ্য নেতা সায়ন্তন বসু। সাডে ১২টা নাগাদ উপস্থিত হন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তবে তখন তিনি নিজের গাড়ি থেকে নামেন নি। হাতেগোনা কয়েকজনকে নিয়ে মাটিতে প্লাস্টিক বিছিয়ে অবস্থান বিক্ষোভে বসে পরেন সায়ন্তনবাবু। পরে অবশ্য বিজেপি কর্মীরাই লোহার মঞ্চ বাঁধেন। দুপুর দেড়টা পর বেশকিছুটা দূর থেকে মিছিল করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে নিয়ে মঞ্চে হাজির হন জেলার নেতা কর্মীরা। এরপর মঞ্চে হাজির হন কেন্দ্রীয় নেতা দিলীপ ঘোষ, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাজ্য কিষান মোর্চার সভাপতি মহাদেব সরকার সহ বেশ কয়েকজন বিজেপি বিধায়ক ও জেলা নেতারা। তবে এদিন রাজ্য নেতারা থাকলেও ছিলেন না হুগলীর সাংসদ লকেট চ্যাটার্জী। ছিলেন না স্বপন পাল, সুবীর নাগদের মত জেলার প্রথম সারির নেতারাও। সিঙ্গুরের ইচ্ছুক কিংবা অনিচ্ছুক চাষীভাইদেরও দেখা মেলেনি। দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ মঞ্চে রাজ্যের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য শুরু হয়।

সকলের বক্তব্যেই প্রায় উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা আর গোয়া যাওয়ার প্রসঙ্গ। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল সিপিএমের ধাঁচেই সিঙ্গুর থেকে টাটা চলে যাওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন। শুভেন্দু অধিকারী বক্তব্যের শুরুতেই কৃষকদের অন্নদাতা বলে সম্ভাষণ করেন। তিনি কৃষকদের কথা তুলে ধরলেও সেই ভোট ময়দানের মত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধতে ছাড়েননি। দিলীপবাবু সহ প্রথম সারির সব নেতারাই কোলকাতা পুরনিগম ভোটে প্রচারের ব্যাস্ততা দেখিয়ে বক্তব্য দীর্ঘায়িত করেন নি। তবে সকলেই এই আন্দোলনকে রাজ্যব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন। যদি তাই হয় তাহলে তো কোলকাতা ভোটের পরেই নেতারা বেশী সময় নিয়ে সিঙ্গুরে আসতে পারতেন। তাহলে কেন এত তাড়া! তাই দিল্লীর ভূল থেকে শিক্ষা নিয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো, না কি কৃষি আইন বাতিলের পর কৃষকদের মন বুঝতে ঐতিহাসিক সিঙ্গুরের মাটিতে আসা এ ধন্দে ভরা এ প্রশ্নেই কিন্তু দিশাহারা সিঙ্গুরের চাষীভাইরা।