মহেশ্বর চক্রবর্তী, ১৬ অক্টোবর:- প্রাচীন কাল থেকে রীতি মেনে আজও রাবন কাটা রথ হয়ে আসছে হুগলির গোঘাটে। এই বছরও তার ব্যতিক্রম হলো না। তবে করোনা পরিস্থিতিতে কিছুটা কাটছাট করা হয়েছে। দশমীর দিন হুগলি জেলার গোঘাটে রাবন কাটা রথ দেখতে অসংখ্য পুর্নার্থীর ভির হয়।তাই বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গা পাশাপাশি আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে রাবন কাটা রথ৷ প্রায় ৭০২ বছর ধরে দশমীতে রথ হয়ে আসছে গোঘাটে। এলাকার মানুষের পাশাপাশি দুর দুরান্ত থেকে বহু মানুষ এই রথ উৎসবে সামিল হন। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে এ সকলেই এই উৎসবে সামিল হন। প্রাচীন কাল থেকেই দুর্গাপুজোর শেষ দিনে বাজে বিষাদের সুর৷ প্রতিমা বিসর্জনে ব্যস্ত থাকে আপামোর বাঙালী। চলে মিষ্টিমুখ, সিঁদুর খেলা। সে সময় গোঘাটে রথের রশিতে টান পড়ে৷ স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, এটি অবশ্য জগন্নাথের রথ নয়। বিজয় রথ৷ কথিত আছে, এখানকার ধর্মঠাকুরের নির্দেশে প্রায় ৭০২ বছর ধরে এই উৎসব হয়ে চলেছে৷ হুগলির গোঘাট, আরামবাগ, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, বর্ধমান থেকে বহু মানুষ রথের রশিতে টান দিতে আসেন।
মনস্কামনা পূরণের জন্য পুর্নার্থীরা এই রশিতে টান দিতে আসেন। হিন্দুদের পাশাপাশি বিজয় দশমীর রথের রশিতে টান দেন মুসলমান যুবকরাও৷রথ উপলক্ষে যে মেলা বসে এই বছর করোনা পরিস্থিতিতে তা বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। দশমীর ঠিক এক সপ্তাহ পর ফের ওই রথকে টেনে আনা হয়। যা উল্টোরথ বলেই পরিচিত৷ গোঘাটের জে এল আরও অফিস থেকে রেজিস্ট্রার অফিস পযন্ত এই রথ টানা হয়। নামে মিল থাকলেও আষাঢে়র রথের সঙ্গে এই উৎসবের কোনও মিল নেই৷ আঞ্চলিক ইতিহাস থেকে জানা গেছে, গোঘাটের রায় পরিবারের হাত ধরেই এই রথের সূচনা হয়। কবে ও কী ভাবে শুরু বিজয়া দশমীর রথযাত্রা? সেই কাহিনি শোনালেন রায় বংশের এক প্রবীণ সদস। তিনি এই বিষয়ে জানান, আমাদের পূর্বপুরুষের বেশির ভাগই কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ছিলেন৷ একদিন হঠাৎ করে এক সাধু আমাদের পুর্বপুরুষের সঙ্গে দেখা করেন।ওই সাধু জানান, কচ্ছপের তেল মাখলে কুষ্ঠ রোগ সেরে যাবে৷
রায়বাড়ির সদস্যরা স্থানীয় একটি পুকুর থেকে কচ্ছপ তুলে নিয়ে আসেন৷ সেই রাতেই স্বরূপনারায়ণ জিউ না কি স্বপ্ন দিয়ে বলেন, এই পুকুরে তিনিই কচ্ছপরূপে অধিষ্ঠিত ছিলেন৷ তাঁকে পুজো করতে হবে৷ তা হলে রায় বংশে আর কেউই কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হবে না৷। এই রায় পরিবারের আরও দাবী, স্বরূপনারায়ণ জিউ স্বয়ং রাম ছিলেন৷ আর বিজয়া দশমীর দিন রাম রাবণকে বধ করে ছিলেন৷ রাবণকে বধ করে রথে করেই তিনি এসেছিলেন৷ স্বরূপনারায়ণ দশমীর দিন এই স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন বলেই সেই দিন থেকে রথ টানা হয়৷ এর নাম হয় বিজয় রথ। এলাকায় জনশ্রুতি আছে বিজয় রথ আদতে রাবণ কাটা রথ৷ সবমিলিয়ে বিজয়া দশমীর দিনে গোঘাটের এই বিজয় রথ ঘিরে এলাকার মানুষের উৎসাহ বেশ চোখে পড়ার মতোন।