এই মুহূর্তে জেলা

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের পদধুলিধন্য কামারপুকুর লাহা বাড়ির দুর্গাপুজোকে ঘিরে নানা ইতিহাস আছে।

মহেশ্বর চক্রবর্তী, ১০ অক্টোবর:- করোনা আবহাওয়ায় চলছে শারদ উৎসব। আকাশে বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধ।বনেদি জমিদার বাড়ি গুলিতে রীতিমেনেই চলছে পুজোর আয়োজন। আনুমানিক ৪৫০ বছরের পুরনো হুগলি জেলার কামারপুকুর লাহা বাড়ির দুর্গাপুজো৷ কথিত আছে ১১২৭ বঙ্গাব্দে কামারপুকুরে তৎকালীন জমিদার ধর্মদাস লাহা এক মামলার জন্য চুঁচুড়া যাচ্ছিলেন, পথে এক চটিতে বিশ্রাম নেবার সময় তিনি স্বপ্নাদেশ পান তার বাড়ির দুর্গাপুজো বন্ধ রয়েছে তা যেন ফের শুরু করা হয়৷ পাশাপাশি মায়ের কাছ থেকে অভয় পান তিনি ওই মামলায় জয়ী হবেনই। মা দুর্গার স্বপ্ন বাস্তবে মিলেও যায়। ওই মামলায় জয়ী হয়েছিলেন ধর্মদাস লাহা৷ তিনি বাড়ি ফিরে দেখেন দুই কুমোর দুর্গা ঠাকুর তৈরি করতে বাড়িতে এসেছে, তখন তার মনে পড়ে যায় সেই স্বপ্নাদেশের কথা৷ সেই থেকে ফের শুরু হয় কামারপুকুর লাহাবাড়ির দুর্গাপুজো যা আজও চলে আসছে। শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের পদধূলি বিজারিত এই দুর্গাপূজো দেখতে বহু পুর্নার্থীর সমাগম হয়।

জানা গিয়েছে এক সময় শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের পিতা শ্রী ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় কামারপুকুরে এসে আশ্রয় নেন ধর্মদাস লাহার কাছে৷ তখন থেকে তিনি কামারপুকুরে লাহা বাড়ির দুর্গার পুজোর চণ্ডীপাঠ করতেন৷ সেই সময় থেকেই লাহাবাড়ির দুর্গা পুজোর প্রতিপদ থেকে নবমীর দিন পর্যন্ত চণ্ডীপাঠ করা হত লাহা বাড়িতে৷তৎকালীন সময়ে মহালয়ার দিন থেকে কামারপুকুর লাহা বাড়িতে যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হয় নয় দিনব্যাপী৷ এমনকি ছোট গদাধর ওই যাত্রাপালা অভিনয় করতেন। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এর মাতা চন্দ্রমণি দেবী কামারপুকুর লাহা বাড়ির ঠাকুরের ভোগ রান্না করতেন। মা দুর্গার চক্ষুদান নিয়ে একটি ঘটনা এখনও কামারপুকুরবাসীর মুখে মুখে বিরাজমান। ছোট্ট গদাধর নাকি ঠাকুর প্রতিমা গড়ার সময় কুমোরকে বলে, তিনি ঠাকুরের গায়ে চড়াবেন৷ কুমোর তাতে মানা করলে হবে কি। মায়ের এক অদ্ভূত লীলা হল- ঠাকুরের কাছে যে চক্ষুদান নেবেন। তাই সেই কুমোর শত চেষ্টা করেও মায়ের চোখ আঁকতে পারলেন না৷ শেষে শ্রী রামকৃষ্ণই মায়ের চোখ আঁকলেন।

কামারপুকুরের লাহা বাড়ির বংশধররা জানান নবমীর দিন কুমারীকে কাত্যায়নী রূপে পুজো করা হয়৷ এই বিষয়ে লাহাবাড়ির এক বংশধর বলেন, ঠাকুর শ্রীরাম কৃষ্ণের পদধুলিধন্য এই দুর্গাপুজোর নানা ইতিহাস আছে। এই লাহা বংশের জমিদার ধর্মদাস লাহা পুজো শুরু করেন। তারপর এই মা দুর্গা চক্ষু আঁকেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ। পুজোকে ঘিরে যাত্রা অনুষ্ঠান হতো। ঠাকুর রামকৃষ্ণ সেখানে অভিনয়ও করেছিলেন। এই বছর করোনা পরিস্থিতিতে সবই বন্ধ। অন্যদিকে ওই বংশের কুলবধু বৈশাখি লাহা, রুপালি লাহারা বলেন, আমাদের এই পুজো বহু প্রাচীন। মহালয়ার দিন থেকেই পুজো শুরু হয়। পুজোর চারটে দিন কিভাবে কেটে যায় বুঝতে পারা যায় না। এবছর পুজোর আয়োজনে কাটছাট হলেও প্রাচীন রীতি মেনে পুজো হবে।সবমিলিয়ে এবছর করোনা ভাইরাসের জেড়ে পুজোর আয়োজন অনেকটাই কাটছাট করা হলেও লাহা বাড়ির দুর্গা দালানে কচি কাঁচাদের ভির বেশ লক্ষনীয়। যেমন ছোট গদাই খেলে বেড়াতো। ঠিক এখনও ছোট ছোট শিশুরা মায়ের মন্দিরে খেলে বেড়াচ্ছে।