এই মুহূর্তে জেলা

দুর্গা দশভুজার পরিবর্তে , শিব ও দুর্গা পূজিত হয় হাট বসন্তপুরের নন্দী জমিদার বাড়িতে।

মহেশ্বর চক্রবর্তী, ৬ অক্টোবর:- আজও প্রতিপদে জমিদার বাড়ির রাজ শঙ্খের আওয়াজ জানান দেয় মা দুর্গার পুজোপাঠের সুচনা হয়ে গেলো। এলাকার মানুষ রীতি মেনে প্রতিবছর মহালয়ার পুর্নতিথিতে জমিদার বাড়ির নিদিষ্ট সময় অনুযায়ী রাজ শঙ্খ আওয়াজ শোনেন। আর দালান বাড়িতে শুরু হয় চন্ডীপাঠ। এখনও সেই রীতি চলে আসছে হুগলির হাট বসন্তপুরের নন্দী জমিদার বাড়ির দালানে। এই জমিদার বাড়িতে মা দুর্গার দশভুজা রুপের পরিবর্তে, হর পার্বতী রুপে শিব ও দুর্গা এবং তার সাথে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্ত্তিক, গনেশের পুজোপাঠ হয়। কিন্তু শরৎকালিন এই দুর্গা পুজোয় অসুর যে মায়ের সঙ্গে পুজিত হন তা কিন্তু নন্দী জমিদার বাড়ীতে দেখা যায় না। কেবল শিব ও দুর্গার সাথে তাদের ছেলে মেয়েরা জমিদার বাড়িতে পুজিত হন। হাটবসন্তপুরের নন্দী জমিদার বাড়ির হর পার্বতীর পুজোকে কেন্দ্র করে নানা অলৌকিক ঘটনা ও ইতিহাস লুকিয়ে আছে।

এখনও জমিদার বাড়ির বিশাল আকারের দালান বাড়ি রয়েছে। তবে সেই জৌলুশ হয়তো হারিয়েছে।রং বেরঙের ঝাড়বাতি, হ্যাচাক লাইট, হয়তো নেই। কিন্তু প্রাচীন ঐতিহ্য ময় জমিদার বাড়ির বিরাট দালান, জমিদার বাড়ির বিরাট ফটক, ঐতিহ্যময় দিঘির ঘাট, জমিদারের শয়নকক্ষ সবই বর্তমান আছে।তবে সবই ভগ্নপ্রায় অবস্থায়। তবে জমিদার বাড়ির দালানে এখনও বিরাট হর পার্বতীর মন্দির এবং বেদি প্রতিষ্ঠা করা আছে। আর বেদির ওপর বসানো আছে রাজ শঙ্খ। প্রতিপদে এই রাজ শঙ্খপর ধ্বনি আকাশে বাতাসে মুখোরিত হয়ে ওঠে। দেবীর আগমন বার্তায় গোটা জমিদার বাড়ির পবিত্র হয়ে ওঠে মায়ের পদস্পর্শে। এই জমিদার বাড়ির প্রবীন সদস্য প্রশান্ত কুমার নন্দীর জানান, এই পুজোর বয়স বলা খুব মুশকিল। পুর্বপুরুষদের কাছে শুনেছি প্রায় ৬০০ বছর আগে এই পুজো সুচনা হয়। রাজ শঙ্খ বাজানোর পাশাপাশি ঘোড়ার গাড়ি করে দুই মন খাদ্য দ্রব্য ধরে এই রখম তামার জালায় করে কলকাতা নগরী থেকে গঙ্গা জল এনে প্রতিপদে পুজোর সুচনা হত।

এখনও সেই ঐতিহ্য বজায় রেখে রাজ শঙ্খ বাজানো হলেও ঘোড়ার গাড়ির পরিবর্তে আধুনিক যান ব্যবহার করার পাশাপাশি এক টিন গঙ্গা জল এনে পুজোপাঠের সুচনা হয়। তাছাড়া এই জমিদার রাজপরিবারের নথি থেকে জানতে পারা গেছে বর্ধমানের এক প্রাচীন জনপদ থেকে উঠে এসে মুন্ডেশ্বরির নদীর তীরে জমিদারীর পত্তন করেন আশুতোষ নন্দী। কিন্তু জমিদার বাড়ির উত্তর উত্তর শ্রীবৃদ্ধি হলেও মানসিক শান্তি ছিলো না জমিদারের। তাই তিনি জমিদার বাড়িতে প্রথম নারায়নের পুজো শুরু করেন। কিন্তু তাতেও অস্থির ভাবে দিন কাটতো তার। একদিন হঠাৎ এক সিদ্ধ পুরুষ জমিদার বাড়ীতে এসে জমিদারকে নাকি জানান এই জমিদার বাড়িতে ব্রম্যদৈত্য আছে। সে প্রতি রাতে নারায়নের পুজো করে দালান বাড়ির মন্দির থেকে চলে যায়। এর কয়েক দিন পরেই জমিদার বাড়ির প্রধান ফটকের করিদড়ে গলা টেপা অবস্থা দারোয়ানে মৃতদেহ দেখা যায়। জমিদার ভীত সন্তোষ্ট হয়ে পড়ে মা দুর্গার স্মরনাপর্ন হন।

একদিন স্বপ্নাদেশে মা দুর্গা জমিদারকে বলেন, ব্রম্ভ্যদৈত্যকে শান্ত করার জন্য এবং এই জমিদারীকে রক্ষা করার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুজোপাঠের পাশাপাশি হর পার্বতীর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই থেকেই জমিদার শিব ও দুর্গার পুজো শুরু করেন।এমনটাই দাবী জমিদারবাড়ির প্রবীন সদস্যদের। অপরদিকে এই জমিদার বাড়ির কুলবধু বাসন্তী নন্দী জানান, শ্বাশুড়ি নাকি বলতেন এই প্রতিপদ থেকেই গভীর রাতে এই দুর্গা দালানের চারপাশে মা দুর্গার নপুরের ধ্বনি শোনা যেত। আর সকাল থেকেই জমিদার বাড়িতে আর কোনও ভয়ের পরিবেশ থাকতো না। অন্যদিকে আর এক কুলবধু চম্পা নন্দী বলেন প্রতিপদ থেকেই আমাদের এই পুজো শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা জমিদার বাড়ির লোকজনেরা চলে আসেন। সবমিলিয়ে হুগলির এই হাটবসন্তপুরের নন্দী জমিদারবাড়ির পুজোকে ঘিরে এখনও ব্রম্ভদৈত্যের জনশ্রুতি রয়েছে।