হুগলি , ১ অক্টোবর:- শতাধিক বছরের সমস্যা হলো হুগলি জেলার বন্যা। বিশেষ করে আরামবাগ মহকুমার অন্তরগত খানাকুলের বন্যা ভয়াভয়। এবার সারা আরামবাগ মহকুমা বন্যার কবলে। ২০২১ সালের ভয়ঙ্কর বন্যায় ছয়টি ব্লকই ক্ষতিগ্রস্ত। আবারও ২০২১ সালের ভয়ঙ্কর বন্যার কবলে আরামবাগ মহকুমাবাসী। এই মহকুমার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যার জেড়ে ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার খানাকুল এক, দুই, গোঘাট এক, দুই, আরামবাগ। তুলনামুলক ভাবে পুড়শুড়ার ক্ষতির পরিমান কম।আরামবাগ, গোঘাট, খানাকুল পুড়শুড়ার বিস্তৃন এলাকার মানুষ জলবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। প্রশাসনের তরফে বন্যা বিধস্ত এলাকায় সেনা নামানো হয়। পাশাপাশি এনডিআরএফের দল ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মী ও আধিকারিকরা লাগাতার উদ্ধার কার্য চালাছেন। রাত জেগে চলছে কন্ট্রোল রুমে বসে কাজ। বন্যা দুর্গত মানুষদের উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে আনা থেকে শুরু করে ত্রান পৌঁছে দিচ্ছে প্রশাসন।
ছয়টি ব্লকের জলবন্দি মানুষদের উদ্ধারের হাত লাগান স্থানীয় যুব সমাজ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে আপামোর মানুষ। আরামবাগ সেচ দপ্তরের আধিকারিক দিনবন্ধু ঘোষ জানান,আরামবাগ সেচ দপ্তরের অধিনে মোট চার জায়গায় দ্বারকেশ্বর নদীর বাঁধ ভাঙে। দৌলতপুর, বৃন্দারামপুর, ঘাশুয়া ও তালিদ এলাকায় নতুন করে বাঁধ ভাঙ্গে। জল নামলেই দ্রুত বাঁধ মেরামত করা হবে। পাশাপাশি বলা যায়, ২০২১ সালে বর্ষায় সময় দ্বারকেশ্বর নদীর বন্দিপুর ও ঠাকুরানিচকে বাঁধ ভেঙে বিস্তৃন এলাকা প্লাবিত হয়। আবার শরৎকালে জলাধার থেকে ছাড়া জল ও অতিবৃষ্টিতে দ্বারকেশ্বর নদীর চার জায়গা বাঁধ ভেঙে জলবন্দি মানুষ। কিন্তু বার বার বাঁধ ভাঙ্গছে কি ভাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অন্যদিকে পুড়শুড়া বিধান সভার ওপর দিয়ে প্রভাবিত মুন্ডেশ্বরি নদীতে দুই জায়গায় বাঁধ ভেঙে যায়।তার জেড়ে কয়েকশো গ্রাম জলবন্দী হয়ে পড়ে।
এই বন্যার জেড়ে কয়েক হাজার মাটির বাড়ি পড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে পাকার বাড়ি ভেঙে পড়ে। কৃষিজ ফসল থেকে শুরু করে মৎস্য, গরু ছাগল ও ঘরের আসবাব পত্র বন্যার জলে ভেসে যায়। কাতাড়ে কাতাড়ে মানুষ রাস্তা থেকে নদীবাঁধ, ব্রীজ, স্কুলবাড়িতে আশ্রয় নেয়। চারিদিকে শুধু ধ্বংসলীলা আর বিভৎস্বতার দৃশ্য। গোঘাটের বালি অঞ্চলের দিঘরা এলাকায় জলের স্রোতে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয় এক নাবালকের। এমনটাই দাবী স্থানীয়দের। মৃত ওই নাবালকের নাম শিবু দাস। বাড়ি গোঘাটের লক্ষ্মীপুরে। বয়স হয়েছিলো সতেরো বয়স। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে এদিন সকাল থেকেই নিখোঁজ ছিলো শিবু। দ্বারকেশ্বর নদীর জলে গোটা গ্রাম প্লাবিত হয়। সেই জলের স্রোতে ভেসে যায় শিবু। চারিদিক খোঁজা খুঁজি করার পরেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশেষে এদিন বিকেলবেলা শেষমেষ নাবালককে পাওয়া গেল লক্ষ্মীপুর ধান ক্ষেত থেকে।
এই ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়ায়। এই উদ্ধার কার্যের তদারকি করেন গোঘাটের প্রাক্তন বিধায়ক মানস মজুমদার। এই বিষয়ে মানসবাবু বলেন,দ্বারকেশ্বর নদীর বাঁধ ভেঙে বালি অঞ্চল প্লাবিত হয়। এদিন সকালে বন্যা দেখতে এসে জলে ভেসে যায় শিবু। তাকে দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশেষে গ্রামের একজন ধান ক্ষেতের মধ্য শিবুর বডি দেখতে পান। এটা খুব দুর্ভাগ্য জনক ঘটনা। অপরদিকে গোঘাট ছাত্রনেতা সৈয়দ আশিক হোসেন জানান, আমর বন্যা দুর্গত মানুষদের উদ্ধার করে সরকারি ত্রান শিবিরে পৌঁছে দিচ্ছি। চারিদিকে জল আর জল।জীবনকে বাজিরেখে যুবকেরা কাজ করছেন। চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব শিশু ও প্রবীন মানুষদের উদ্ধার করতে।সবমিলিয়ে আরামবাগ মহকুমা জুড়ে কেবল বন্যার জেরে ভয়ংকরতার রুপ।