এই মুহূর্তে জেলা

লাইব্রেরি স্যারের অবসরের খবরে বিষাদের সুর পাঠক মহলে , জানাজানি হতেই চর্চা শুরু আরামবাগের বইপ্রেমীদের।

মহেশ্বর চক্রবর্তী, ২৮ জুন:- লাইব্রেরির স্যার অবসর নিচ্ছেন বলে বিষাদের সুর পাঠক মহলে। সকলের প্রিয় ছিলেন তিনি। ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ পাঠক মহলের প্রিয় ও ভালোবাসার পাত্র ছিলেন হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমা গ্রন্থাগারের সহকারি লাইব্রেরিয়ান উত্তম ভট্টাচার্য। পড়াশোনা আর লাইব্রেরি অন্ত প্রান ছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, ১৯৮২ সালের ৩রা জানুয়ারি সালেপুর নগেন্দ্র সাধারণ পাঠাগারে প্রথম সাইকেল পিওন হিসাবে চাকুরী জীবন শুরু করেন। তারপর সীতানগর, রামমোহন পাঠাগারের পর আরামবাগ মহকুমা গ্রন্থাগার ২০১১- ২০২১ পযন্ত প্রায় ৩৯ বছর ধরে তার কর্মজীবন চলে। লকডাউনের মধ্যেও তিনি সাইকেল চালিয়ে প্রায় সাত থেকে আট কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে লাইব্রেরি আসতেন শুধু মাত্র বইপত্র দেখা শোনা করার জন্য। বিধিনিষেধ থাকায় পাঠক আসতো না কিন্তু তিনি মাঝে মধ্যে ঠিক লাইব্রেরি দেখে যেতেন। শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতিদের সব সময় অনুপ্রেরণা দিতেন। চাকুরি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সব সময় গাইড করতেন। শুধু তাই নয়, প্রাক্তন লাইব্রেরিয়ান বিভাংশু দত্তকে সঙ্গে নিয়ে লাইব্রেরিতে ফ্রিতে চাকুরী পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষকদের দিয়ে চাকুরি পরীক্ষার কোচিংয়ের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে তিনি সক্রিয় ভুমিকা গ্রহন করেন।

জানা গিয়েছে, উত্তমবাবুর তিনটি মেয়ে। প্রিয়া ভট্টাচার্য, রিয়া ভট্টাচার্য, শ্রেয়া ভট্টাচার্য। সকলেই উচ্চশিক্ষা গ্রহন করছেন। অবসর জীবনে তিনি মেয়ে ও স্ত্রীর সঙ্গে নিয়ে পড়াশোনা করে কাটিয়ে দেবেন বলে জানায় উত্তমবাবু। এই বিষয়ে তিনি বলেন পড়াশোনা করতে ভালো লাগে। লাইব্রেরিতে পাঠকদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাঠানোই ছিলো আমার জীবনে পরম পাওয়া। বিখ্যাত লেখক নিহারঞ্জন গুপ্ত, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বই পড়তে ভালো লাগে আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা পড়তে ভালো লাগে। অপরদিকে আরামবাগ মহকুমা লাইব্রেরির সম্পাদক তথা পাঠক সেখ সাইফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর এই গ্রন্থাগারের সঙ্গে যুক্ত। তিনি একা পাঠকদের সঠিকভাবে পরিসেবা দিতেন। অন্যদিকে আরামবাগ মহকুমা লাইব্রেরির প্রাক্তন লাইব্রেরিয়ান তথা রবীন্দ্র গবেষক বিভাংশু দত্ত জানান, উত্তমবাবু লাইব্রেরি অন্ত প্রান ছিলেন। ছুটি নিতেন না। সঠিক সময়ে আসতেন এবং পাঠকদের পরিসেবা দিতেন। পাশাপাশি সাধারণ পাঠক হিসাবে রাজকুমার পন্ডিত বলেন, আমরা উত্তমবাবুকে ভুলতে পারবো না। বেকার শিক্ষিত ছেলেদের আশ্রয়স্থল ছিলো এই লাইব্রেরি। উনি চলে যাওয়ায় ফাঁকা হয়ে যাবে। সবমিলিয়ে আরামবাগ মহকুমা গ্রন্থগারের সহকারী লাইব্রেরিয়ানের অবসর নেওয়ার ঘটনা জানাজানি হতেই পাঠক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে এই ভেবে, কি হবে এই মহকুমা লাইব্রেরির।