কলকাতা, ২১ জুন:- করোনা পরিস্থিতেতে শাকসবজি থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্র্যের দাম ক্রমশ ঊর্ধ্বগতি। শাকসবজির দাম ক্রমশ আকাশ ছোঁয়া হওয়ায় মধ্যবিত্ত্ব মানুষের মাথায় হাত পড়েছে। বাজার আগুন হওয়ায় প্রভাব পড়েছে গৃহস্থের রান্না ঘরে। মাছ মাংস ডিম থেকে সমস্থ কিছু কেনা দায় হয়ে পড়েছে আম জনতার। খোলা বাজারে কাঁচা লংকা ১০০ টাকা দরে বিকোচ্ছে। আগামী কয়েক দিনে কাঁচা লংকা আরোও মহার্ঘ হবে বলে আশঙ্কা বিক্রেতাদের। উচ্ছে, পটল, কুমড়ো তো কথাই নেই। সর্ষের তেল, রিফাইন তেলের দাম এখন আকাশ ছোয়া। সর্ষের তেল আর রিফাইন তেল লিটার প্রতি দাম উঠেছে ১৮০ এবং ১৬০ টাকা উঠেছে। সরকারি হিসেবে গত দু মাসে রান্নার তেলের দাম কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর মটোন, চিকেনের তো এখন ক্রেতাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অন্যদিকে ডিমের দামও পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে।
শহর এবং শহরতলীর খোলা বাজারে মটোন ৮০০ টাকা আর চিকেন ২২০ টাকা ছাড়িয়ে ডাবল সেঞ্চুরি অতিক্রম করেছে। করোনা প্রতিরোধের জন্য প্রোটিন যুক্ত খাবার হিসেবে মানুষ ডিমের উপর ভরসা করে ছিলো। কিন্তু সেই ডিম বাজারেও আগুন লেগেছে। এখন একটা ৭ টাকা দরে বিকোচ্ছে। এক ট্রে ডিমের দাম ১৮০ টাকা থেকে ২১০ টাকায় ঘোরাফেরা করছে। ডিম বিক্রেতাদের বক্তব্য, করোনার জেরে ডিমের চাহিদা গত কয়েক মাসে দ্বিগুন হয়েছে। রাজ্যে যে পরিমান ডিম উৎপাদন হয়, তা দিয়ে ছাড়া পূরণ করা যাচ্ছেনা। পণ্যবাহী ট্রাক অন্দ্রপ্রদেশ থেকে আসছে না। আর তার জেরে ডিমের মূল্য বৃদ্ধি বলে ডিম ব্যাবসায়ীরা মনে করছেন। আর মুগ,মুসুর ডালেরতো কোনো কথাই নেই। এসবের মূল্যবৃদ্ধির একই যুক্তি দিয়েছেন ব্যাবসায়ীরা। লকডাউনের জেরে বহু মানুষের কাজ হারিয়েছেন। আর তার মধ্যে বাজারদর আগুন। এই পরিস্থিতে কি করে দিন চলবে, তা নিয়ে চিন্তিত সকলের।
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মধ্যবিত্য মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরানুর মতো অবস্থা। আর যে কারণে মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ বাজার হাটের দৈনন্দিন বাজেট কাটছাট করে পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করতে বাধ্য হয়েছেন। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কোলে মার্কেটের পাইকারি ব্যাবসায়ীদের বক্তব্য, লকডাউনের জেরে ভিন রাজ্য থেকে ট্রাকে কোনোও পণ্য সামগ্রী আসছেনা। ট্রেন চলাচলও পুরোপুরি বন্ধ। প্রবল বর্ষণের জেরে লংকার মতো অন্য সমস্ত শাকসবজি নষ্ট হয়ে গেছে। আর যার ফলে চাষিরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত। লেক মার্কেটের পাইকারি বিক্রেতাদের কথায়, ডিজেলের ক্রমশ মহাঘ্য হওয়ায় প্রভাব পড়েছে শাক সবজি থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীতে। পাইকারি বিক্রেতাদের বক্তব্য ,এক লরি শাকসবজি নদিয়া থেকে কোলে মার্কেট আনতে চার হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতে শাকসবজি থেকে অনন্য সমস্ত পণ্য সামগ্রীর দাম কি করে কম হওয়ায় সম্ভব বলে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে সরকার টাস্ক ফোর্স আছে। কিন্তু টাস্কফোর্স কি করছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এদের ভুমিকাই বা কি। ওয়েস্ট বেঙ্গল ভেন্ডার্স আসোসিয়েসনের সভাপতি এবং রাজ্য সরকারের মার্কেট টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে অবশ্য এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির দায় ফোরেদের উপর চাপিয়েছেন। তার কথায়, শাক সব্জি থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী খোলাবাজারে আসামাত্র ফোরেদের দাপাদাপি বাড়ছে। এক শ্রেণীর ফোরে সস্তায় চাষিদের কাছ থেকে সমস্ত শাকসবজি কিনছে। আর তারা খুচরো বিক্রেতাদের কাছে মোটা টাকায় বিক্রি করছে। আর যার ফলে চাষীরা দাম পাচ্ছেননা। রাজ্য কৃষি দপ্তরের অবশ বক্তব্য পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করছেন। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন। আর এই মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে সরকার কি পদক্ষেপ নেয়, সেটাই এখন দেখার।