হুগলি, ১৯ নভেম্বর:- কচ্ছ উপসাগরের তীরে অবস্থিত আমেদাবাদ শহর থেকে হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে চুঁচুড়া শহরের দূরত্ব ২০০০ কিমিরও বেশি। তাতে কী! ক্রিকেট বিশ্বকাপের আঁচে আরব সাগরে ওঠা সুনামির ঢেউ আছড়ে পড়ছে হুগলি নদীর তীরে হুগলি জেলা জুড়ে! গোটা জেলার আবালবৃদ্ধবনিতা ফুটছে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের আশায়। হাতে মাত্র আর কয়েক ঘন্টা। তারপরেই শুরু হয়ে যাবে বহু প্রতিক্ষিত ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া ফাইনাল ম্যাচ। আমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে। এক লক্ষ তিরিশ হাজারেরও বেশি দর্শক চাক্ষুস দেখবে। তবে জেলার ৫৫ লক্ষ বাসিন্দাদের অধিকাংশই শান দিচ্ছে নিজেদের মতন করে। প্রশাসনিক কর্তা থেকে স্কুল পড়ুয়া, গৃহস্থ বাড়ির গিন্নি থেকে সিভিক ভলেন্টিয়ার, পুলিশকর্মী থেকে স্বাস্থ্যকর্মী — সবাই বিশ্বকাপ জ্বরে আক্রান্ত। যেন, সব্বার চোখের মণির রঙ নীল! এইতো যেমন, চুঁচুড়া নারকেল বাগানের দাস পরিবার। বিশ্বকাপ ফাইনাল বন্ধুবান্ধব, পাড়াপ্রতিবেশী সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে খেলা দেখবেন বছর আট চল্লিশের অনিন্দ্যবাবু।
তিনি ৬০ হাজার টাকা খরচ করে ১২ ফুটের স্ক্রিনসহ প্রজেক্টর কিনে নিয়ে এসেছেন। বাড়ির কনিষ্ঠ সদস্য একাদশ শ্রেণির অভিজ্ঞানের হাফইয়ার্লি পরীক্ষা চলছে। তাতে কী? বিরাটের একনিষ্ঠ ভক্ত এই কিশোর তার চার-পাঁচ জন বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে একসঙ্গে খেলা উপভোগ করবে বলে। বাড়ির গিন্নি প্রিয়ঙ্কাও পিছিয়ে নেই। দু’গালে জাতীয় পতাকার ত্রিরঙ্গা এঁকে প্রস্তুত। বেলা বারোটা বাজার আগেই রান্নাবান্না সেরে ইন্ডিয়া টিমের আকাশি-নীল জার্সি পড়ে বসে পড়বে প্রজেক্টর স্ক্রিনের সামনে। চন্দননগরের এক পুলিশ কর্তার ডিউটি পড়েছে জগদ্ধাত্রী পুজোর ভিড় নিয়ন্ত্রণে। তাঁর কথায়, “আশাকরি ফাইনালের দিন রাত দশটা পর্যন্ত রাস্তায় খুব একটা ভিড় থাকবে না। ডিউটিতে থাকলেও মোবাইলে হটস্টার অন করে রাখব। কালকে বিরাটের একটা সেঞ্চুরি চাই।” আরামবাগের স্বাস্থ্যকর্মী নিমাইবাবুর মেডিসিন স্টোরে ডিউটি। সপ্তাহের সাতদিনই কমবেশি ডিউটি করতে হয়। তিনিও আশাবাদী কালকে রুগীর চাপ কম থাকবে। হাসতে হাসতে বললেন, “দেখবেন ফাইনালের দিন কেউ অসুস্থ হবে না। সবাই খেলা দেখবে। আমরা কেন বাদ যাব? ফাইনালেও শামি পাঁচ উইকেট পাবে”।
তিনি আশাবাদী। পাণ্ডুয়ার জামগ্রাম জনার্দন ইনস্টিটিউসনের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার পড়ুয়া সৌমিক ঘোষ। ভারতীয় ক্রিকেট দলকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য লিখে ফেলেছে আস্ত একটা কবিতা। হোয়াটসঅ্যাপে সকল বন্ধুদের ফরওয়ার্ড করছে। তাঁর ভাষায়, “বিশ্বাস আছে এই বুকের মধ্যে, ভাঙবে না আর এই হৃদয়। স্টেডিয়াম ভরবে নীল জার্সিতে, ধ্বনিত হবে মাতৃভূমির বিজয়।” উত্তরপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক রমেনবাবু তিরাশির বিশ্বকাপ জয়ের সাক্ষী ছিলেন। তবে টিভিতে নয়। রেডিওতে ধারাভাষ্য শুনে। তবে এবার তিনি ফাইনাল খেলা চলাকালীন বাড়ির বিয়াল্লিশ ইঞ্চি টিভির পর্দা থেকে চোখ সরাতে নারাজ। তাঁর ইচ্ছে রোহিত আর বিরাটের জোড়া সেঞ্চুরি। এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে আমাদের দেশ সবকটা ম্যাচই জিতেছে। দশটার মধ্যে দশটা। বিশ্বকাপ ফাইনালের সুনামি আরব সাগর থেকে পাড়ার পুকুর সর্বত্র। আজকে ফাইনালের দিন সারা দেশবাসীর মতন ৫৫ লক্ষ হুগলিবাসীরও শুভেচ্ছা থাকবে আকাশি-নীল জার্সির এগার জনের উপর। শেষের মহারণটা যেন জেতা চাই। কথায় আছে না — যাঁর শেষ ভাল, তাঁর সব ভাল!