কলকাতা, ১২ জুন:- কলকাতার আকাশ তারের জঞ্জাল থেকে মুক্ত করতে এবার কঠোর মনোভাব নিল রাজ্য সরকার। এর আগেও বহুবার কেবল অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করে এব্যপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কোন ফল হয়নি।তাই এবার এই বিষয়টি নিয়ে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। অবিলম্বে কেবল ও ইন্য়ারনেটের তার না সরালে সংশ্লিষ্ট অপারেটরদেরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার কেবল সংস্থার কর্মীদের টিকাকরণ সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদি, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম নবান্ন লাগোয়া সভাঘরে কেবল টিভি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তাঁদের স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় সরকার নতুন করে মাটির উপর দিয়ে কোন কেবল নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেবে না। পাশাপাশি এখন কেবল ও ইন্টারনেটের যে সব তার মাটির ওপর দিয়ে গেছে তা অবিলম্বে মাটির নীচ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বৈঠক শেষে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘এক দিকে সরকার শহরকে সুন্দর করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে রাস্তার পাশে ঝুলে থাকা বিসদৃশ তারের জালে ছেয়ে আছএ শহর। এটা শুধু দৃশ্যদূষণ নয়, বিপজ্জনকও বটে। উনিশটি সংগঠনের সঙ্গে এদিন বৈঠক হয়েছে। সার্ভিস প্রোভাইডারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাস্তার ওপর দিয়ে কোনও তার নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। শহরবাসীর সুরক্ষার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত।’
এদিনের বৈঠকে সার্ভিস প্রোভাইডারদের স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, রাস্তার উপরে তারের কুণ্ডলী থাকবে না। কেবল থেকে শুরু করে টেলিকম সংস্থা— সবাইকেই তার মাটির নীচে দিয়ে নিয়ে যেতে হবে। পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে শুরুতে হরিশ মুখার্জি রোডকে বেছে নেওয়া হয়েছে। রাস্তার দু’ধারে ২.৬ কিলোমিটার অবধি কেবলের তার মাটির নীচে দিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের। আগামী সোমবার ও মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরু হয়ে যাবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ শুরু হবে আলিপুর ডিএল খান রোড ও জাজেস কোর্ট রোডে। কেবল অপারেটর, ব্রডব্যান্ড সংস্থাগুলোকে বলা হয় তাদের অব্যবহৃত যে সব তার রাস্তার উপরে ঝুলছে, তা সরিয়ে ফেলতে। আর যে সব তারে সংযোগ রয়েছে তা মাটির নীচে আলাদা চ্যানেল করে পাঠাতে। ফিরহাদ জানান, অব্যবহৃত তার চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে সংস্থাগুলোকে। সেই কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। কোনওরকম গাফিলতি দেখলে প্রশাসনের তরফে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর আগেও কেবল অপারেটারদের সঙ্গে ৩০টি বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফিরহাদ। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। মন্ত্রী বলেছেন, এর পরেও কেউ নির্দেশ না মানলে পুরসভার লোকজন গিয়ে কেবল কেটে দেবে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মাটির উপর দিয়ে ইন্টারনেটের সংযোগ নিয়ে যাওয়ার কারণে সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতে তার ছিড়ে পড়ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা সেই তার ছিড়ে পড়ে থাকছে। এতে একদিকে যেমন ইন্টারনেট পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রচুর ব্যবহারকারী, তেমনই পায়ে তার পেঁচিয়ে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটছে। তা বন্ধ করতেই এবার কঠোর পদক্ষেপের দিকে হাঁটা হচ্ছে। ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘লকডাউনের সময় ছাত্র ছাত্রীদের অনলাইনে পড়াশোনার ক্ষেত্রে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাটির উপর দিয়ে তার নিয়ে যাওয়ার জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। যারা নিয়ে গেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই বেআইনিভাবে মাটির উপর দিয়ে তার নিয়ে গেছেন। বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আর কোনও টিভি কিংবা ইন্টারনেটের সংযোগ লাগানো যাবে না। প্রথমে কলকাতায় এবং পরে গোটা রাজ্যে নয়া নিয়ম চালু করা হবে। কেবল টিভি কনসর্টিয়ামের পক্ষে তাপস কুমার দাস ও অল বেঙ্গল কেবিল টিভি অ্যান্ড ব্রডব্যান্ড অপারেটর ইউনাইটেড ফোরামের তরফে চন্দ্রনাথ পাইন বলেছেন, এর আগেও আলিপুর রোড, জাজেস কোর্ট রোড, এসপি মুখার্জি রোডের কিছু অংশে কাজ হয়েছে। আগামী সোমবার থেকে হরিশ মুখার্জি রোডে কাজ শুরু হবে। তাপসবাবু জানান, এর আগেও অনেকবার বৈঠক হয়েছে, তবে লকডাউন ও ভোটের কারণে কাজ কিছুটা পিছিয়ে যায়। আবার শুরু হবে সোমবার থেকেই। সরকারকে সবরকমভাবে সহযোগিতা করা হবে।