কলকাতা , ১৭ মে:- রাজ্যের দুই মন্ত্রী ও দুই প্রাক্তন মন্ত্রীকে গ্রেফতারির ঘটনা বেআইনি। এই অভিযোগ তুলে সোমবার নিজাম প্যালেসে এসে ধর্নায় বসেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি ছিল, তাঁকেও গ্রেফতার করতে হবে। না হয় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদের ছেড়ে দিতে হবে। তবে এর কোনওটাই হল না। পরিবর্তে বিকাল সাড়ে ৪ টের কিছু পরে নিজাম প্যালেসের ধর্না উঠিয়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলেন তিনি। তখন অবশ্য ভার্চুয়ালি চার নেতাকে গ্রেফতার করার মামলার শুনানি শুরু হয়ে গিয়েছে যেখানে সিবিআইয়ের আধিকারিকদের চোখা চোখা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে যা বিচারপতি অনুপম মুখোপাধ্যায় করছেন। একই সঙ্গে তাঁদের সামাল দিতে হচ্ছে তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নবাণকেও। কেননা তিনিই অভিযুক্ত চার নেতাদের হয়ে সওয়াল করেছেন।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দিনভরের কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘুষ কাণ্ডে অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়াতে তার এই তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে থাকার বার্তা দিতে তার এই সক্রিয়তা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কিন্তু আদতে অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে বুমেরাং হবে কিনা সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আইনজীবী মহলের একাংশের দাবি মুখ্যমন্ত্রীর আসরে নামার ঘটনাকে তুলে ধরে আদালতে প্রভাবশালী তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালাতে পারে সিবিআই। সে ক্ষেত্রে ধৃতদের ভবিষ্যতে মামলার স্বার্থে ভিন রাজ্যে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হতে পারে তদন্তকারীদের তরফে। যেমনটা হয়েছিল সারদা মামলায়। এরকম কিছু একটা অনুমান করেই বিষয়টির নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী নিজাম প্যালেস থেকে বেরিয়ে গেছেন কিনা তা নিয়েও আলোচনা চলছে। যদিও দিনের শেষে অভিযুক্ত ৪ জনই জামিন পেয়ে যাওয়ায় আপাতত সব জল্পনার জল পড়েছে।
এদিন সকালে সিবিআইয়ের হাতে রাজ্যের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায় গ্রেফতার হন। পাশাপাশি গ্রেফতার হন রাজ্যের প্রাক্তন দুই মন্ত্রী মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। শেষেরজন অবশ্য তৃণমূলে আর নেই। তথাপি, তিনি আজও তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছে ‘কানন’ হয়েই আছেন। তাই মমতার স্নেহ থেকে এদিন বঞ্চিত হননি শোভন। ঘটনার জেরে এদিন সোজা নিজাম প্যালেসে চলে আসেন মমতা। এরপরে সিবিআইয়ের কার্যালয়ের সামনে চেয়ার নিয়ে বসে যান তিনি ধর্নায়। সাফ জানিয়ে দেন, যাদের গ্রেফতারি করা হয়েছে হয় তাঁদের ছাড়ো নাহয় আমায় গ্রেফতার করো। ঘটনার জেরে এদিন একসময় পরিস্থিতি চূড়ান্ত রকমের উত্তেজনাপ্রবণ হয়ে ওঠে। যদিও পরে তা নিয়ন্ত্রণে আসে। এই অবস্থায় এদিন ধৃত চার নেতাকে ভার্চুয়াল ভাবে আদালতে পেশ করে মামলার শুনানি শুরু হতেই নিজাম প্যালেস ছাড়েন মুখ্যমন্ত্রী।