কলকাতা, ২৯ এপ্রিল:- প্রশাসনিক উদ্যোগের অভাব না থাকলেও মধুরেন সমাপয়েত্ হল না। বরং আগের প্রায় প্রত্যেক দফার মতো বিক্ষিপ্ত অশান্তির আবহেই শেষ হল রাজ্যের অষ্টম তথা শেষ দফার ভোট গ্রহণ পর্ব।রাজ্যে নজীরবিহীন আট দফায় ভোট করানোর পিছনে নির্বাচন কমিশনের মূল যুক্তি ছিল ভোটপর্ব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করা। দিনের শেষে সেই পদক্ষেপের কার্যকারিতা অনেকাংশে প্রমাণিত। আট দফার ভোট পর্বে প্রাণহানি বা বড়সর হিংসা রুখতে অনেকটাই সফল কমিশন।কিন্তু বিক্ষিপ্ত হিংসা ও রক্তপাত এড়ানো যায়নি শেষ দফাতেও। লজ্জাজনক ভাবে শেষ দফায় খোদ কলকাতর বুকে সাত সকালেই ভোট ঘিরে সংঘর্ষ, বোমাবাজি, ভাঙচুরের অভিযোগ এসেছে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অন্য জেলা থেকেও নির্বাচনী হিংসার খবর আসতে শুরু করে কমিশনের কাছে। সব ক্ষেত্রেই অবশ্য অভিযোগ মেলার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে কমিশনের কর্তাদের।যে ভূুমিকার প্রশংসা করেছে সব রাজনৈতিক দল। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধানখড়।
করোনা সংকটের কর্মশ ঘনীভূত হতে থাকা কালো ছায়ার মধ্যেই বাড়তি একগুচ্ছ সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা সহ বৃহস্পতিবার শেষ দফার ভোটের আয়োজন করা হয়েছিল।কলকাতা সহ চার জেলার মোট ৩৫ টি বিধান সভা আসনে এদিন ভোট নেওয়া হয়। ভোটে হিংসা আটকানোর পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ রুখতে আঁটোসাঁটো ব্যবস্থা করা হয়েছিল নির্বাচন কমিশনের তরফে।বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চার জেলায় এদিন গড়ে ভোট পড়েছে ৭৬ শতাংশের মতো। সবথেকে বেশি ভোট পড়েছে বীরভূমে।ভোট শেষে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে অষ্টম দফায় চার জেলার ৩৫ আসনে ভোট গ্রহণ মোটের ওপর শান্তিপূর্ন। কিন্তু বিক্ষিপ্ত ভাবে হলেও অশান্তি যে হয়েছে তা অস্বীকার করা হয় হয়নি কমিশনের তরফে।
সকালে ভোটের শুরুতেই খাস কলকাতায় বোমবাজি হয়। কলাকাতার মহাজাতি সদনের কাছে বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে। তবে ঘটনায় হতাহতের কোনও খবর নেই। ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিশাল পুলিশ বাহিনী। এর কিছুক্ষণ পরেই জোড়াসাঁকোর বিজেপি প্রার্থী মীনাদেবি পুরোহিতের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়ার খবর আসে।বিজেপি প্রার্থীর অভিযোগ চলন্ত গাড়ি থেকে তাঁর বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়ে পালিয়ে যায় কয়েকজন দুষ্কৃতী।ওই দুই ঘটনারই রিপোর্ট তলব করে নির্বাচন কমিশন।এডিজি আইন শৃঙ্খলা পি জগমোহন জানান মহাজাতি সদন ও ২৩৯ রবীন্দ্র সরণিতে বোমা পড়ার ঘটনায় মোট ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের একাধিক জায়গায় এদিন বোমা উদ্ধার হয়। রাজ্যের অন্যতম স্পর্শকাতর কেন্দ্র ডোমকলে ৫ নম্বর অঞ্চলের বেনেখালির একাধিক জায়গা থেকে তাজা সকেট বোমা উদ্ধার হয়।
সকাল থেকেই বীরভূমের একাধিক জায়গা থেকে মুড়ি মুড়কির মতো বোমা উদ্ধার হয়। ভোট শুরু হওয়ার সময় লাভপুরে বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়াও নানুর বিধানসভা কেন্দ্রের বেলুটি গ্রামে দফায় দফায় বোমাবাজি হয়। বিজেপির অভিযোগ, নানুরে বোমাবাজি করেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। তারা এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খয়রাশোলেও বস্তা ভর্তি বোমা উদ্ধার হয়।ভোটের সকালে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে কলকাতার মানিকতলা বিধানসভা এলাকা। বিক্ষোভের মধ্যে পড়তে হয় বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবেকে। শুধু তাই নয় তাকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় বিজেপি এবং দলীয় প্রার্থী কল্যাণ চৌবে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের দিকে। মানিকতলার রামকৃষ্ণ সমাধি এলাকায় নিউ ন্যাশনাল হাইস্কুলের বুথে এদিন অশান্তি শুরু হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে। তিনি ওই এলাকায় যেতেই শুরু হয় উত্তেজনা। কল্যাণ চৌবেকে ঘিরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা।
দুই পক্ষের মধ্যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হলে পুলিশি ও কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। সেখানে কল্যাণ চৌবে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় পুলিশও আক্রান্ত হয়েছে বলে অভিযোগ।এই ঘটনায় রিপোর্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশন। অষ্টম দফায় সব থেকে বেশি নির্বাচনী হিংসার খবর এসেছে বীরভূমের ইলামবাজার থেকে।এদিন দিনভর দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় বোলপুর বিধানসভার ইলামবাজারে। দেলোড়া গ্রামে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে ঝামেলা ও বোমাবাজি হয়। বুথের কাছেই তাজা বোমা পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ গ্রামে ঢুকে লাঠিচার্জ করে জমায়েত সরায়।এর কিছুক্ষণ পর ফের নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ইলামবাজার। ইলামবাজার থানার জয়দেব গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোটচক গ্রামে শুরু হয় তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ। এলাকায় চলে ব্যাপক বোমাবাজি। বিজেপি কর্মীদের বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগের তির অবশ্যই তৃণমূলের দিকে। যদিও তা অস্বীকার করেছে তৃণমূল। ঘটনাস্থলে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ।
এদিন নির্বাচনে হিংসা ছড়ানোর জন্য আগে থেকেই ৮৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৪৪ ভাঙার জন্য ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। নির্দিষ্ট কারণের ভিত্তিতে মোট ২০ জন গ্রেফতার হয়েছে। এদিন এর নির্বাচনে পাঁচটি বেআইনি অস্ত্র ও ৭৮ টি বোমা উদ্ধার করা হয়।বেশ কয়েক যায়গায় তাদের প্রার্থী ও নেতা- কর্মীরা আক্রান্ত হলেও দু’একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া আজ অষ্টম দফার ভোট গ্রহণ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে বিজেপি। সন্ধ্যায় এক সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, রাজ্যের শাসক দল গণতান্ত্রিকভাবে বিফল হয়ে বিভিন্ন জায়গায় হিংসা ও ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। প্রথমে বোমা ও বন্দুক এবং পরে করোনা নিয়ে মানুষকে ভয় দেখিয়েছে। দু’এক জায়গায় বিজেপির প্রার্থী এবং তাদের এজেন্টদের উপর আক্রমণ হয়েছে। তবে এত ভয় হিংসা ও হত্যার রাজনীতি সত্বেও মানুষের ভোট দেওয়ার উৎসাহকে দমাতে পারেনি। তিনি বলেন, রাজ্যে বিজেপি নতুন সরকার গঠন করবে এবং রাজনৈতিক তিক্ততা ও লড়াইয়ের পরিবর্তে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই প্রধান লক্ষ্য হবে।